প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার তাঁর কার্যালয়ে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২৪ হাজার ৪১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১৬ হাজার ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বিকেলে শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দীন মাহমুদ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা- হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (আরইউটিডিপি)’ প্রকল্প; রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প। এর বাইরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ৭টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
জাপানের অর্থায়নে হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ॥ একনেক বৈঠকের পর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ পাচ্ছে জাপান। যৌথ অংশীদার হতে না পারলেও মাতারবাড়ি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত ও চীন। এ দুই দেশের প্রতিযোগিতার কারণে দীর্ঘদিন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ আটকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জাপানের অর্থায়নই হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকার এ বন্দর। আর প্রতিযোগী দুই দেশকে হাতে রেখে তৃতীয় একটি দেশকে দিয়ে বন্দর নির্মাণের কৌশলকে কূটনৈতিক বিজয় হিসেবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
গভীর সমুদ্রবন্দর প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর চীন না ভারত করবে এটা নিয়ে টানাপোড়েন ছিল। তবে জাপান সহজ শর্তে ঋণ দেয় তাই জাপানই গভীর সমুদ্রবন্দরে অর্থায়ন করবে। আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছি। জাপান ফান্ড করব। জাপান আমাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়। জাপানের অর্থায়নের প্রকল্প সময় মতো শেষ হয়। প্রকল্পের অর্থ বেঁচে গেলে সেই অর্থ অন্য প্রকল্পে দিয়ে দেয়।’
প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীনে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, একটি ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কনটেনার জাহাজ বার্থিং জেটি, ৩৫০ মিটার চওড়া এবং ১৬ মিটার গভীরতার ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণ, উত্তর দিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার এবং দক্ষিণ দিকে ৬৭০ মিটার লম্বা ঢেউ নিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া তিনটি টাগবোট, একটি পাইলট বোট, একটি সার্ভে বোটসহ কার্গো হ্যান্ডেলিং ইক্যুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম ক্রয় করা হবে। এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
৫০০ শিক্ষক ভিসি হতে চান ॥ পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ৫০০ শিক্ষক ভিসি হতে চান। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান না। তিনি আরও বলেন, সবাই ভিসি হওয়ার জন্য তদবির করেন। শত শত শিক্ষক ভিসি হতে চান, কেউ প্রো-ভিসি হতে চান।
উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, চলতি প্রকল্পগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। তাই সময় লাগছে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম হওয়ায় প্রকল্প ধীরগতিতে এগুলোর অর্থপ্রবাহ বাড়বে না। অর্থপ্রবাহ বাড়াতে আগের প্রকল্পের কাজ এগোতে হবে। নতুন কিছু প্রকল্প হাতে নিতে হবে। তবে, চলমান প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির আগে এর ব্যয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ কিংবা গাড়ি কেনার চেয়ে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, পার্ক ও লাইব্রেরি নির্মাণ, জলাধার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতদিন সরকারি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে কতগুলো গাড়ি কেনা হয়েছে, সেগুলো কোথায় আছে, কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সব খতিয়ে দেখবে সরকার। প্রকল্প শেষ হলে গাড়িগুলো কেন আর খুঁজে পাওয়া যায় না, সবকিছু যাচাই করা হবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কাজ টাঙ্গাইল পর্যন্ত হয়ে স্থবির হয়ে আছে। সেখানে যথেষ্ট বিদেশী অর্থায়ন আছে। সুদের হারও কম। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমান সরকার বিদেশী অর্থায়নের প্রকল্পগুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ ছাড়া, ঢাকার বাইরে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা দেখেছি এক কর্মকর্তা তিনটি গাড়ি ব্যবহার করেন। নিজের গাড়ি টেকে বেশি দিন, কিন্তু সরকারি গাড়ি দ্রুত নষ্ট ও অপচয় হয়। সারাদেশে কতগুলো গাড়ি আছে তার একটা হিসাব করব। খুব শীঘ্রই আমরা তথ্য জোগাড় করব। কত গাড়ি কীভাবে ব্যবহার হয়, কারা ব্যবহার করে সব হিসাব হবে। কোনো সরকারি গাড়ি নষ্ট হলে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।