ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

আজ প্রত্যেকের পরিবার পাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১০৫ শিশু নিহত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ৬ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১০৫ শিশু নিহত

উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মোট ১০৫ শিশু মারা গেছে জানিয়ে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, সোমবার নিহত শিশুদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। রবিবার সচিবালয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ কথা জানান।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে ১০৫ জন শিশু মারা গেছে। এটি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ চূড়ান্ত করেছে, আমরা সেখান থেকে তথ্য নিয়ে এসেছি। বিশ্ব শিশু দিবসে সোমবার আমরা নিহত প্রত্যেক শিশুর পরিবারের হাতে ৫০ হাজার টাকা করে এবং মানপত্র দেব। শিশু হিসেবে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়স ধরে এ তালিকা করা হয়েছে।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুদান হস্তান্তরের এ অনুষ্ঠানটি হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি আরও জানান, সমাজসেবা কার্যালয় ও উপজেলা রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের মোট ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৮ টাকার সেবা দেওয়া হয়েছে। 
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্রÑশ্রমিকÑজনতা পুনর্বাসন ও চিকিৎসার জন্য বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের সহায়তা পাচ্ছি। এটির ফরমালিটি শেষপর্যায়ে আমরা আছি, শীঘ্রই এ অর্থ ছাড় হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১২টি ডে কেয়ার রয়েছে জানিয়ে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একটি ছোট্ট কর্নার আমরা দাবি করছি এই ডে কেয়ারের জন্য। এজন্য আমরা সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে একটা চিঠি দেব। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডে কেয়ার খোলার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রে ডে কেয়ারটা আনতে যাচ্ছি, যেন রোজগার এবং সেবা দুটোই আমরা দিতে পারি। লক্ষ্য মাথায় রেখে ধীরে ধীরে সেদিকেই এগোচ্ছি।
ভাতার ৪১ শতাংশ সঠিক ব্যক্তি পাচ্ছেন না ॥ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে দেওয়া ভাতার ৪১ শতাংশ সঠিক ব্যক্তি পাচ্ছেন না বলে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের গবেষণায় উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
এক কোটি ২০ লাখ মানুষ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা পেয়ে থাকেন। গত কয়েক মাস ধরে ভাতা বন্ধ আছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি কিস্তি টাকা দেওয়া হয়েছে। নগদের বিষয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে, এটা আমরা পরিবীক্ষণের মধ্যে রাখছি।’
ভাতাভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে ত্রুটি আছে, সেই ত্রুটিগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। জলদি করে শুধু দিয়ে দিলে হবে না। আমি কেমন করে দিচ্ছি, কী সিস্টেমে দিচ্ছি, যাকে দেওয়া হচ্ছে, সে পাচ্ছে কি না? এ তিনটি প্রশ্নের জবাব আমার কাছে একেবারে পরিষ্কার হতে হবে। নতুন এমআইএস সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা এ ভাতাগুলো দেব।’
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘ইউনিসেফ আমাদের কাছে স্টাডি পাঠিয়েছে ৪১ শতাংশ ভাতা সঠিক ব্যক্তির কাছে যাচ্ছে না। এটা তো বিশাল সংখ্যা, এটা তো ফেলে রাখতে পারি না। একটা হচ্ছে যারা পাওয়ার কথা পাচ্ছে না, আর একটা হচ্ছে ভুল জায়গায় যাচ্ছ- এ দুটোরই পরিসংখ্যান আমরা পেয়েছি। এগুলো আমরা যাচাই করছি। রিভিউতে থাকা এমআইএস অ্যাপ্লিকেশনটি যখন হয়ে যাবে তখন এ জায়গাটা থেকে অনেক উন্নতি হবে।’

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কীভাবে ॥ সংস্কার ছাড়া মানুষ নির্বাচন নিতে পারবে কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। নির্বাচনের রোডম্যাপ কবে হবে? নির্বাচন নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী? এ বিষয়ে তিনি বলেন, এই আলোচনা এখনো আমাদের ক্যাবিনেটে হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা নিয়ে চেইন অব মিটিং চলছে। এই ভাবনা এখনো আলোচনার মধ্যে আছে।
আপনাদের লক্ষ্য কি এখন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, কিন্তু নির্বাচন কমিশন তো এখনো পুনর্গঠনই হয়নি- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখনো অনেক কিছুই গঠন হয়নি। কারণ মাত্র দুই মাস সময় গেল, একটু সময় দিন। এসব প্রশ্নের জবাব পাবেন। নির্বাচন তো আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। সেটার জন্য একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করতে হবে।
আপনাদের এখন অগ্রাধিকার কী সংস্কার, নাকি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া- এ বিষয়ে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের দিকে যাব কীভাবে! সংস্কার হবে না, নির্বাচন হবে? সেই নির্বাচন নিতে পারবেন তো, সংস্কার ছাড়া?’ সেটা কতদিনে হবে- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, জানি না, কতদিন।

×