ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ৭১ দেশে চিঠি

সাবেক মন্ত্রীসহ ১২০ জনের অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদক

নিয়াজ আহমেদ লাবু

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ৫ অক্টোবর ২০২৪

সাবেক মন্ত্রীসহ ১২০ জনের অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদক

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ পর্যন্ত আলোচিত ১২০ জন সাবেক শীর্ষ আমলা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ব্যবসায়ী, পুলিশের অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে সংস্থাটি। তাদের সম্পত্তি, নামে-বেনামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে  টাকার পরিমাণ খোঁজ নিচ্ছে তারা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) তাদের সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনেকের বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এমনকি বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে ৭১টি দেশে চিঠি দিয়েছে দুদক। আবার অনেকে দুর্নীতির  জালে ধরা পড়ার আশঙ্কায় গা ঢাকা দিয়েছেন। বিদেশে পালিয়েছেন অনেকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে অনেকে ধরা পড়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের তিন শতাধিক ব্যক্তির তালিকা ধরে এগোচ্ছে দুদক। 
ইতোমধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাভেদ), সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, ফেনী-২ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদসহ তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের একাধিক ল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া অর্থপাচারসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। 
দুদকের সর্বশেষ অনুসন্ধানের আওতায় আসা এই ১২০ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ ব্যাংক ঋণ ও  শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, নিয়োগ বাণিজ্য,  টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, সরকারি ও  বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত  সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমলের ২০ মন্ত্রী, ৮ প্রতিমন্ত্রী, ৫২ এমপি, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের ৪ উপাচার্য, ২ মেয়র ও সচিব, উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাবেক-বর্তমান অনেকে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৮ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা  দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুদকের মহাপরিচালক  মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত ১২ দেশে ৭১টি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক থেকে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে ঘুষ, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দিয়ে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

গত বুধবার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরীসহ সাবেক ১০ জন এমপিসহ ২০ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান  শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আপাতত তাদের মামলা দায়েরের দিকে না গিয়ে অনুসন্ধানের তালিকা বড় করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। তাদের অনেককেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রেপ্তার করেছে।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদকের এখন কৌশল হচ্ছে, সংবাদপত্র কিংবা ব্যক্তি মাধ্যমে বিগত সরকারের দায়িত্বশীল কারও বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এলে এই গোয়েন্দা ইউনিট থেকে সেসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু করবে। সম্প্রতি দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন একই সুরে বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্যে প্রাথমিক সত্যতা থাকায় কমিশন তাদের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের তিন শতাধিক ব্যক্তির তালিকা ধরে এগোচ্ছে কমিশন।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধান টিমে আরও রয়েছেন, দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন, সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম ও মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন। 

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একান্ত সচিব (পিএস) হারুন-অর রশিদ বিশ্বাস। নিয়োগ-বাণিজ্য, জমি দখল, লুটপাট ও প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ। অবৈধ সেই সম্পদের পাহাড়ের সন্ধানে তাকে ও তার স্ত্রী ওয়াহিবা আক্তার এবং মেয়ে দোয়া বিনতে রশীদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়ে সরকারি-বেসরকারি অন্তত ৯৯টি প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান কর্মকর্তা। চলতি সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সই করা তলবি চিঠিতে তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র, জমি, ফ্ল্যাট ও শেয়ারসহ বিভিন্ন নথিপত্র তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুদক  সূত্র জানায়,  রাজধানীর কল্যাণপুরে হারুন বিশ্বাসের নিজের নামে চারটি ফ্ল্যাট ও ঢাকার সাগুফতায় রয়েছে ২০ কাঠা জমি। হারুন বিশ্বাস ও মন্টু বিশ্বাস প্যাদারহাট ওয়াহেদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমি এবং নিয়োগ-বাণিজ্য করে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মণ্টু বিশ্বাস দক্ষিণ কাজীরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ-বাণিজ্য করে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে মুলাদী থানার ৭ নম্বর কাজীরচর ইউনিয়নে প্রায় ২০০ বিঘা জমি ক্রয় করেন।

মণ্টু বিশ্বাসের মাছের ঘের ও গরুর খামার আছে। এমনকি সরকারি খাল দখল করে ১৫ একর জমির ওপর গড়েছেন মাছের ঘের। এ ব্যাপারে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামান খান ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ দিতেন। তৎকালীন মন্ত্রীর সাবেক পিএস অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে হারুন অর রশীদ অবসরে গেলেও এই মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা ছিলেন যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। ঘুষের বিশাল অংকের টাকা বিদেশে পাচার করে দিতেন। যাতে কেউ ঝুঁকিতে থাকতে না হয়। 
এ ছাড়া অনুসন্ধান শুরু হয়েছে আলোচিত সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল, সাবেক ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপসহ চার সাবেক এমপি, সমালোচিত ব্যবসায়ী এস আলম, ব্যবসায়ী সাইফুল আলম (এস আলম) ও পদ্মা ব্যাংকের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীসহ অনেকের বিরুদ্ধে। 
ব্যবসায়ী সাইফুল আলম (এস আলম) ও পদ্মা ব্যাংকের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এস আলমের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক ইয়াসিন আরাফাতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আর চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেনকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক বাড়ি রয়েছে এমন অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। সোবহানের সম্পদ অনুসন্ধানে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট’ (এমএলএআর) করেছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) একাধিক প্রভাবশালীর সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব তথ্য পাওয়া গেলে আরও প্রভাবশালীর দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে পারে দুদক। সূত্রগুলো জানায়, দুদকের তদন্ত দলকে সার্বক্ষণিক একটি গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে অভিযুক্তদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো চালায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ফি বাবদ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেট। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ফি বাবদ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিশাল এই সিন্ডিকেটটি।

চক্রটি চাকরির ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর দুদকের উপপরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্ব তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু ॥ আওয়ামী লীগ আমলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাভেদ), নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান, রেলমন্ত্রী মো. জিলুল হাকিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ আমলের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী  মন্নুজান সুফিয়ান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

আর গত বুধবার নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, নেত্রকোনা-৪ আসনের সাবেক এমপি ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার, কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক এমপি এম এ জাহের, ময়মনসিংহ-১০ আসনে সাবেক এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, নীলফামারী-১ আসনের সাবেক এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার, চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং রাজশাহী-১ আসনের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি হোসনে আরা, রাঙ্গামাটি আসনের সাবেক এমপি দীপংকর তালুকদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

এর আগে সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু, নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বেনজীর আহমেদ, ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল, শাহে আলম তালুকদার, ডা. মনসুর আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ, সোলায়মান হক জোয়াদ্দার (ছেলুন), ইকবালুর রহিম, মো. সাইফুজ্জামান শেখর, তানভীর ইমাম, এনামুল হক, মো. আখতারুজ্জামান বাবু, শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মোহাম্মদ হাবিব হাসান, মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, আব্দুল ওদুদ, আয়েশা ফেরদৌস, রনজিত কুমার রায়, সাদেক খান, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, নাছিমুল আলম চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান মিতা, মো. আবু জাহির, এইচবিএম ইকবাল, সোলায়মান জোয়ার্দার, শাহীন চাকলাদার, এইচএম ইব্রাহিম ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মুনসুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহুরুল ইসলাম চাকলাদারে বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেছে। 
অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) টি এম জোবায়ের, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু, বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ^াস, বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান হাইয়ুল কাইয়ুম ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুন। 

এদিকে গত বুধবার নোয়াখালীর কবিরহাট পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল হক রায়হান, কবিরহাটের সাবেক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলি, ৩ নং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল কন্ডাক্টর, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিন বিএসসি, নোয়াখালী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও ২নং সুন্দলগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন রুমি,  রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর, সহ-সভাপতি বৃষকেততু চাকমা, অংসিপ্রু চৌধুরী ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক রেমলিয়ানা পাংখোয়ার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। 
অন্যদিকে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। 
দুদকের আমূল সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। 
৪৮ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ॥ ২ অক্টোবর মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি আব্দুস সোবাহান গোলাপসহ ৫জনের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। অন্যরা হচ্ছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর সীতাংশু কুমার সুর (এস কে সুর) চৌধুরী, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চোধুরী, মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরী ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার  ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন সার্বিক) আমিনুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা গত ১ নভেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার ও স্ত্রী তৌফিকা আহমেদের বিদেশযাত্রায়ও আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত। গত ২ সেপ্টেম্বর সাবেক ১৭ মন্ত্রী ও ৯ সংসদ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত। এছাড়া গত ২৯ আগস্ট সাবেক ৯ মন্ত্রী ও ৫ সংসদ সদস্যের বিদেশযাত্রায় আদালত নিষেধাজ্ঞা দেন।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যাগ ॥ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত ১২ দেশে ৭১টি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ২৭টি এমএলএআরের জবাব পেয়েছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
দুদক মহাপরিচালক জানান, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়ায়, সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং বেশি হয়। পাচার হওয়া অর্থের তথ্য চেয়ে দুদক ৭১ টি চিঠি পাঠিয়ে জবাব পেয়েছে মাত্র ২৭টির। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে দুদক কীভাবে সহযোগিতা পেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে  বৈঠকে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ধারাবাহিকভাবে দুদকের সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ ফেরতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সভা করেছেন।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচিত কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। যার মধ্যে রয়েছে ‘ছাগল কাণ্ডে’ নাম আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়া করোনা রিপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল কালাম আজাদ, সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের নামে মামলা করেছে দুদক। মধ্য জুলাই থেকে দুদকের কার্যক্রমে কিছুটা ধীর গতি দেখা যায়। এ সময় কমিশনের মামলা, অভিযোগপত্র কিংবা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত ছিল কম।

×