ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

ডিসি নিয়োগে ঘুষ

তদন্তের দায়িত্বে ৩ উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৩ অক্টোবর ২০২৪

তদন্তের দায়িত্বে ৩ উপদেষ্টা

ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনা পিছু ছাড়ছেই না

ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনা পিছু ছাড়ছেই না। একের পর এক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এবার খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধে ডিসি নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মা. মোখলেস উর রহমান এ অভিযোগকে ভুয়া ও ভিত্তিহীন বলেছেন। এর পরও সরকার জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে ৩ উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে নেওয়া কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ডিসি নিয়োগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তদন্তের জন্য তিনজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে জনপ্রশাসন সচিব তদন্ত করেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা ডিসি নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সরকার তদন্ত করবে কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই আমরা এটার তদন্ত করব’ সরকার (তদন্ত) করবে। কিন্তু এখানে দুটি জিনিস মিডিয়াকে মাথায় নিতে হবে।
এটাও কিন্তু আমরা তলিয়ে দেখছি যে ক্লিপটা সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত হয়ে গেল, সেটা কতখানি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রডিউসড। সেটা কতখানি সঠিক, কতখানি ফেক আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বলতে পারে না। সম্প্রতি যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে এটার টেকনিক্যাল ইন্টিগ্রিটিটা কী সেটা জানার জন্য কেবিনেটে (উপদেষ্টা পরিষদে) কথা হয়েছে।’ 
তিনি বলেন, দ্রুত এটি তদন্ত করা হবে। আমরা অবশ্যই তদন্ত করব। 
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, অত্যন্ত দায়িত্বশীল জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যাবে না। এটাও আমাদের অনুশাসনের অধীনে আনতে হবে।
এ বিষয়ে উপদেষ্টাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা কমিটি করে তারা এটা দেখবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তিনজনের কথা বলা হয়েছে, এর মানে এই নয় যে অন্যরা এতে যুক্ত হতে পারবেন না। একটি কমিটি করে এটা তদন্ত করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে এ রকম কথা। এটি নিয়ে অবশ্যই আমরা উদ্বিগ্ন। এ কথাটা (ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ) কেন উঠল, এটার সূত্র কী, এটার কারণ কী- সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা তো এখন এনালগ যুগে নেই, এজন্য আমাদের বাড়তি কষ্টটা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেটাই আসছে, আমরা লাফ দিয়ে ধরে নিতে পারছি না- এটাই সত্য। আমাদের এটাকে যাচাই করতে হয়।
একটি জাতীয়  দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে সিনিয়র সচিবের হোয়াটস অ্যাপে কথোপকথনের স্ক্রিন শটও প্রকাশ করা হয়।
তবে ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে খবরটি ‘ভুয়া’ বলেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। একইসঙ্গে যে অভিযোগ উঠেছে তা মূল্যহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব এ মন্তব্য করেন। প্রতিবেদনে যে স্ক্রিন শট প্রকাশ করা হয়েছে, তা আইফোনের কিন্তু তিনি স্যামসাং ফোন ব্যবহার করেন বলেও দাবি করেন সিনিয়র সচিব।
একটি  দৈনিকে ডিসি নিয়োগে ঘুস লেনদেনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তারা আপনার কথোপকথনের স্ক্রিন শটও দিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমার মোবাইলটা হলো স্যামসাং, তারা যেটা শো করেছেন, সেটা আইফোন। আইফোন কি আমি ব্যবহার করি? আমি ব্যবহার করি স্যামসাং। কে কী দেখালো ওনাদের জিজ্ঞাসা করবেন। হোয়াট ওয়াজ দ্য ডায়ালগ, আমি এটার কিছুই জানি না। আমি এটার সম্পর্কে বলি ইফ আই সে লেস, ইট ইস বেটার।’
যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সেটা নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ, সরকার যে টেলিফোন (মোবাইল ফোন) দিয়েছে সেটাও আমি ব্যবহার করি না। যারা জানেন, আমার আগের যে নম্বর সেটাই আমি ব্যবহার করতেছি সরকারিভাবে।’
এই খবরের সত্যতা আছে কি না, আপনি পদত্যাগ করবেন কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি নিউজ করতে চান, স্টানবাজি নিউজ করতে চান, তা হলে এ প্রশ্ন করতে পারেন। এতদিন আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, বিন্দু-বিসর্গ যেখানে সত্যতা নেই। এই প্রশ্ন করার আগে আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, কতটুকু যৌক্তিক হচ্ছে আমাকে এই প্রশ্ন করা।
ওই  দৈনিকে এর আগে প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া তিনটি পদক্ষেপ তুলে ধরে মোখলেস উর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে তিনটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনটি চিঠি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে নামিয়ে নেবেন। তথ্য সচিবকে চিঠি লিখেছি সেখানে এই পত্রিকাটির নাম আছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরাসরি সরকারি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য যা নিয়ম-কানুন আছে, আপনারা আমার থেকে ভালো জানেন। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
যাকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ ওই ভুয়া লোকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবকে লেখা হয়েছে। এক-দুইদিনের মধ্যে তিনি গ্রেপ্তার হবেন। যে ব্যাংকারের অনভিজ্ঞতা বা ভুলের কারণে ব্যাংক অ্যাকাউন্টটা খোলা হয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে। শুধু তার ব্যবস্থাই হবে না অন্যান্য ব্যাংকেও যাতে এ রকম সমস্যা না হয় সেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আপনি মানহানির মামলা করবেন কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি প্রথমত বলব, যারা এটা করেছে তাদের আমরা কতটুকু গুরুত্ব দেই। একটা রাস্তার লোক আমাকে অনেক কথা বলতে পারে, আমি কি রাস্তার লোকের পেছনে দৌড়াব? নেভার।

আমরা সরকারের পজিশনে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করি। যেভাবে আছি সেভাবেই কাজ করব যতদিন আল্লাহ হায়াতে রেখেছেন নিয়ম-কানুন মোতাবেক।
আপনার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সরকারের কাছে আপনি আহ্বান জানাবেন কি না- জানতে চাইলে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘অভিযোগটা যিনি করেছেন এই অভিযোগকারী আমার কাছে কোনো বিবেচনায় নেই। এই অভিযোগটি আমি মূল্যহীন মনে করি। এটা ভুয়া নিউজ।’

×