ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১

মতবিনিময়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

সাইবার নিরাপত্তা আইন অচিরেই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাইবার নিরাপত্তা আইন অচিরেই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রবিবার এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন অচিরেই সংশোধন বা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর কার্যালয়ে তথ্য অধিকার ফোরাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার: এনজিওদের সহায়ক ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, তথ্য অধিকার নিয়ে আমাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ অধিকারটা কিন্তু অন্যান্য অধিকারের মতো নয়। তথ্য অধিকার ছাড়া সব অধিকার মূল্যহীন। প্রত্যেকটা অধিকারের সঙ্গেই এই অধিকারটা সংযুক্ত। তাই তথ্য অধিকার নিয়ে একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের  আইন, বিচার ও শাসন বিভাগ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে তথ্য কমিশন বা মানবাধিকার কমিশনের কিন্তু কোনো কার্যক্ষমতা থাকবে না। যারা তথ্য অধিকারের কথা বলেন, তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলতে হবে, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলতে হবে। জনগণ জানেন, বিগত সরকার বিচার বিভাগকে কীভাবে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে  তৈরি করে ফেলেছিল, সংসদকে লুটপাটের, অন্যায়-অবিচারের ফোরাম হিসেবে তৈরি করেছিল। আমাদের উচিত এসব বিষয়ে সোচ্চার হওয়া।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা একটা সময় প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করতে পারতাম না। আমাদের বলা হতো যে, সব বলা যাবে প্রধানমন্ত্রীর নামটি উল্লেখ করা যাবে না...  এভাবে উল্লেখ করতে হতো। উনি (শেখ হাসিনা) একটা অত্যাচারী দানবে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা কি তার প্রতিবাদ করেছিলাম? করিনি। আমরা যখন প্রতিবাদ করেছিলাম, তখন ১০-১২ জনের বেশি লোক পেতাম না। সুতরাং এ বিষয়গুলো ভুলে গেলে চলবে না। দুঃশাসনের সময়ে প্রতিবাদ করাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। প্রতিবাদটা সবসময়ই বজায় রাখতে হবে। এমনকি আমাদেরও যদি কোনো ভুল হয় তারও প্রতিবাদ জানাতে হবে।
বিগত সরকারের আমলে তথ্য অধিকার আইন হয়েছে, আবার তথ্য অধিকার বিনাশ করারও আইন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন পুরোপুরি বাতিল করা উচিত হবে না। কারণ এটি মূলত দুই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কম্পিউটার ওফেন্স (কম্পিউটার ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটন)  এবং অন্যটি স্পিচ ওফেন্স। স্পিচ ওফেন্স বাতিল করা সম্ভব হলেও কম্পিউটার ওফেন্স বাতিল করা যাবে না। অনুষ্ঠানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, তবে তাদের প্রেতাত্মারা এখনো বিরাজমান। এখনো নানাভাবে হয়রানি অব্যাহত আছে, এটা দ্রুত  বন্ধ হতে হবে।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমিও এক সময় তথ্য চেয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। অর্থ পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য চেয়েছিলাম, তথ্য কমিশন আমাদের তথ্য দেয়নি। পরে আদালতে গিয়েছি। গত নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন কীভাবে নিয়োগ হয়েছিল, কোনো দল কোনো কমিশনারের নাম প্রস্তাব করেছিল সে তথ্য পাইনি। তথ্য কমিশন বলেছিল এটা সেনসিটিভ তথ্য, তাই দেওয়া যাবে না।’
তথ্য অধিকার অবাধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের মূল মালিক নাগরিক। সেনসিটিভ তথ্যও নাগরিকদের দিতে হবে। নাগরিকদের সক্রিয় হয়ে সেনসিটিভ তথ্য চাইতে হবে। রাজনৈতিক দলেরও তথ্য চাইলে আমরা যেন পেতে পারি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক না হলে অবাধ তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না।’
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন, এমআরডিআই- এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, তথ্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক শাহীন আনাম এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ড. অনন্য রায়হান।

×