ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

গাজীপুরে মির্জা ফখরুল

দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে  ক্ষমতা হস্তান্তর করুন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ও সংবাদদাতা, কাপাসিয়া

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে  ক্ষমতা হস্তান্তর করুন

কাপাসিয়ায় শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য আ.স.ম হান্নান শাহর স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর    

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনো সংকট কাটেনি। দ্রুত প্রশাসনের সব ইউনিটকে সংস্কার করে দেশকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপযোগী করতে হবে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্থায়ীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। আরও যেসব বিষয় সংস্কার করা প্রয়োজন এসব সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এ জন্য একটা যৌক্তিক সময় বর্তমান সরকার নিতে পারে। তিনি বলেন, যৌক্তিক সময় মানে এই না যে, তারা অনেক বেশি সময় নিয়ে নেবে। যত দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা যাবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল হবে। সুতরাং দ্রুত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচিত সংসদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা শান্তিময় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই।
তিনি শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট স্কুল মাঠে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আসম হান্নান শাহর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হ্ন্নাান শাহ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকার তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। নির্বাচন বলতে কিছুই ছিল না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বলুন, উপজেলা নির্বাচন বলুন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বলেন, কোনোটাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় নাই। তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য প্রশাসনযন্ত্রকে, পুলিশকে ব্যবহার করেছে। তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। এই ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য তারা প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। 
মির্জা ফখরুল শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলেন, তিনি বলেছিলেন (শেখ হাসিনা) আমি অমুকের মেয়ে- আমি পালাতে জানি না। কিন্ত এই শেখ হাসিনাই ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। এ সময় তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনো সংকট কাটেনি। এখন যে সরকার এ সরকারকে বলা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের প্রধানকে দেশের মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তার সঙ্গে যারা আছেন তারাও অত্যন্ত যোগ্য মানুষ। 
এ সময় তিনি বলেন, একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সংসদ গঠন করতে হবে। সেই সংসদের অধীনে দেশ পরিচালিত হবে। তারাও কমিটেড, তারাও বলেছেন নির্বাচন দিবেন। আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদের কথায় আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই। যত দ্রুত সম্ভব দেশকে, প্রশাসনকে নির্বাচন উপযোগী করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। 
তিনি তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক সকল মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসনে রাখা হয়েছে। তাকে এখনো আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাকে স্বসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশের জেলা উপজেলাসহ সব স্থানে আমাদের নেতা কর্মীদের নামে যত মিথ্যা হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এটা আমাদের দাবি এটা এ দেশের জনগণের দাবি। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কষ্ট হয়, দুঃখ হয় গত ১৫/১৬ বছরে আমাদের এক হাজার নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে মিথ্যা হয়রানি মূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারেনি। 
তিনি বলেন, হান্নান শাহ একজন সৈনিক ছিলেন, কিন্তু মনে প্রাণে ছিলেন গণতন্ত্রী। তিনি অত্যন্ত সৎ ও দেশ প্রেমিক রাজনীতিবিদ ছিলেন। এ পর্যায়ে মির্জা ফখরুল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহের সঙ্গে তার কারাগার জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, কারাগারে হান্নান শাহের সঙ্গে আমার অনেক দিন থাকতে হয়েছিল। আমাদের প্রথমে রাখা হয়েছিল কেরানীগঞ্জের কারাগারে। সেখানকার পরিবেশ বর্ণনা করার মতো নয়। একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হতো। রাতে ঘুমাতে পারতাম না ইঁদুর-চিকা আমাদের ঘরের মেঝেতে দৌড়াদৌড়ি করত। পরে হান্নান শাহ বললেন চলেন আমরা এখান থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তরের জন্য বলি। পরে জেলারকে বলার পর তারা আমাদের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করে দিয়েছিল। 
এ সময় তিনি সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, সংস্কারের কথা উঠেছে সংস্কার দরকার। আমরা দুই বছর আগে ৩১ দফার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এই প্রস্তাব দিতে গিয়ে আমরা মামলা হামলার শিকার হয়েছি, জেল খেটেছি। এই দেশে গণতন্ত্রের জন্য আমরা সবসময় লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। এই লড়াই করার কারণে আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তাকে জেলে ভরে রাখা হয়েছে । সেখানে থাকতে থাকতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তার চিকিৎসা করা হয়নি। এখন তিনি মুক্তি পেলেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারছেন না। 
কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান পেরার সঞ্চালনায় ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক সাফিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, হান্নান শাহর ছেলে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, গাজীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা শেফাউল হক প্রমুখ। 
এর আগে বিএনপির মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া এলাকায় হান্নান শাহর গ্রামের বাড়িতে তার কবর জিয়ারত করেন।
উল্লেখ্য, সাবেক সেনাকর্মকর্তা আসম হান্নান শাহ ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের শুরুতে সেনাসমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই বছরের জরুরি অবস্থার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকাবস্থায় বিএনপিকে সংগঠিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন হান্নান শাহ্।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বেশ কয়েকটি মামলায় একাধিকবার কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একটি মামলায় হাজিরা দিতে ঢাকার ডিওএইচএস’র বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখান অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়  সেখান থেকে তাকে ১১ সেপ্টেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানকার (সিঙ্গাপুরের) র‌্যাফেলস হার্ট সেন্টারে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ সেপ্টেম্বর ৭৪ বছর বয়সে মারা যান তিনি। 


 

×