ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

ল্যাব না থাকায় গবেষণা কার্যক্রম নেই কোথাও

৭ বছরে ১৩ মেডিক্যাল কলেজ শেখ হাসিনার নামেই ৩টি

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২২:৫৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৭ বছরে ১৩ মেডিক্যাল কলেজ শেখ হাসিনার নামেই ৩টি

.

কেনাকাটা থেকে শুরু করে ক্লাসরুম ঢেলে সাজানোর নামে দুই অর্থবছরে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের নামে। শুধু এই মেডিক্যালটিই নয়, গত সাত বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ গড়ার নামে অনুমোদন পেয়েছে ১৩টি হাসপাতাল। এর মধ্যে তিনইি শেখ হাসিনার নামে। অপর একটি তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এসব হাসপাতালের কোনোটিরই নেই নিজস্ব ক্যাম্পাস, নেই গবেষণাগারও। এমনকি একটি মেডিক্যাল কলেজেও নেই শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন করার সুযোগ। ফলে নামমাত্র চিকিৎসাশিক্ষা গ্রহণ করেই রোগীদের সেবায় যোগ দিচ্ছেন তারা। এতে অদক্ষ ডাক্তারদের দ্বারা রোগীদের প্রাণহানি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জানা যায়, টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০টি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২০১০ সালে যশোর মেডিক্যাল কলেজ, ২০১৫ সালে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ এবং ২০১১ সালে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ছাড়াও ২০১৩ সালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ, ২০১৪ সালে টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ এবং জামালপুরেও শেখ হাসিনার নামে আরেকটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়। ২০১৪ সালে দুটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে একটি সিরাজগঞ্জে শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ এবং অন্যটি মানিকগঞ্জে কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ। ২০১৪ সালে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই বছর পাবর্ত্য অঞ্চল রাঙ্গামাটিতেও প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মেডিক্যাল কলেজ। পরে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজ, নীলফামারি মেডিক্যাল কলেজ, নওগাঁ মেডিক্যাল কলেজ, মাগুরা মেডিক্যাল কলেজ, চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজসহ সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
যে কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র মানুষের জন্য কল্যাণকর হলেও ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব মেডিক্যাল কলেজের বেশিরভাগেই নেই সুশিক্ষা এবং সুচিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ফলে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির উদ্দেশ্য কার্যত অকার্যকরই রয়ে গেছে। 
সম্প্রতি হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বিগত দুই অর্থবছরে এই কলেজের প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা গরমিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ কলেজের শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ করেন। এ সময় দাবি করা হয়, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাসন খাতে ৯০ লাখ, নিরাপত্তা খাতে ৮০ লাখ, বিদ্যুৎ খাতে ২৬ লাখ, বইপত্র কেনায় পাঁচ লাখ, জ্বালানি খাতে ৯ লাখ, ক্রীড়া খাতে ৯ লাখ ৮৮ হাজার, ল্যাবের জন্য রাসায়নিক সামগ্রী কেনায় পাঁচ লাখ, যানবাহন মেরামতে তিন লাখ, কম্পিউটার মেরামতে ছয় লাখ, আসবাবপত্র মেরামতে পাঁচ লাখ, নতুন আসবাবপত্র কেনা ১০ লাখ, নতুন কম্পিউটার কেনা ১০ লাখ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কার চার লাখ টাকার গরমিল রয়েছে।
শুধু তাই নয়, এখানকার কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পরীক্ষায় তাদের নিকট থেকে অধিক পরিমাণ ফি আদায় করে থাকে। কলেজের অধ্যক্ষ সুনির্মল রায় কলেজের আরটিপিসিআর ল্যাব নষ্ট করে সেটিকে বাসা হিসেবে ব্যবহার করছেন। এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষকই নিয়মিত ক্লাস নেন না। কর্মক্ষেত্রে না এসে হাজিরা খাতায় অফিস সহায়কের সহযোগিতা নেওয়া হয়।
নেই কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসও। তাই গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন করছেন মেডিক্যাল কলেজটির শিক্ষার্থীরা। আবাসন, শিক্ষক নিয়োগসহ আটটি দাবি নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন তারা। 
২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি এই কলেজটির ক্লাস শুরু হয়  হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালের দুটি ফ্লোরে। বর্তমানে এ কলেজে ছয়টি ব্যাচে ৩৫০ শিক্ষার্থী থাকলেও নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। গবেষণার জন্য নেই কোনো ল্যাব। ইন্টার্নি করতে হয় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে। নামকাওয়াস্তে এই মেডিক্যাল কলেজের কোনো প্রয়োজনই ছিল না বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
কলেজটির শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার তামান্না বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষার সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণ জড়িত। এখান থেকে যেসব শিক্ষার্থী পড়ালেখা শেষ করে বের হচ্ছেন তারা ঠিক কতটুকু অভিজ্ঞ হচ্ছে তা না নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
ছয় বছরেও অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজের : নিজস্ব সংবাদদাতা নেত্রকোনা থেকে জানান, প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজের। জেলা সদর হাসপাতালের কয়েকটি ভবনে অস্থায়ীভাবে চলছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। এর ফলে প্রতিনিয়ত শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এদিকে কলেজটিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-কর্মচারীও অপ্রতুল। নেই ব্যবহারিক এবং ক্লিনিক্যাল ক্লাসের সুযোগ-সুবিধাও। এসব সংকটের মধ্যেই চলতি বছর এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসক হয়ে বের হবেন কলেজটির প্রথম ব্যাচের ৫০ শিক্ষার্থী। 
জানা গেছে, ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন করেন। কলেজটির সঙ্গে পাঁচশ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজও যুক্ত থাকার কথা। কিন্তু স্থান নির্বাচন সংক্রান্ত নানান জটিলতার মধ্যেই কেটে গেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। ফলে নির্মাণ হয়নি কোনো অবকাঠামো। উদ্বোধনের পর থেকে জেলা সদর হাসপাতালের কয়েকটি ভবনে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। আর শিক্ষার্থীরা থাকছেন কয়েকটি ভাড়া নেওয়া বাড়িতে।
নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমান জানান, মেডিক্যাল কলেজটির অবকাঠামো নির্মাণের জন্য চলতি বছর জেলা সদরের রাজুরবাজার এলাকায় অবস্থিত শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয়ের ৫০ একর জমি নির্বাচন করা হয়েছে। পরবর্তীতে তা অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেটির অনুমোদন পাওয়া যায়নি। অনুমোদন পেলে অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে প্রথমে প্রি-একনেকে পাঠানো হবে। প্রি-একনেকে অনুমোদনের পর তা উঠানো হবে একনেকের সভায়। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর অর্থ বরাদ্দ পেলে ঠিকাদারি সংস্থা নিয়োগ করা যাবে। এই কাজগুলো করতে আরও বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
স্থান সংকটের পাশাপাশি কলেজটির অভ্যন্তরীণ সংকটও প্রকট। বেশ কিছুদিন ধরে অধ্যক্ষের পদ শূন্য। সার্জারি, গাইনি, ইএনটি, মেডিসিনসহ কোনো বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। গাইনি বিভাগ ছাড়া আর কোনো বিভাগেই নেই কোনো অধ্যাপক। সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকরা পাঠদান করছেন। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকের সান্নিধ্য ছাড়াই শিক্ষাজীবন পার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ হচ্ছে রেজিস্ট্রার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার। কিন্তু এ কলেজের কোনো বিভাগেই রেজিস্ট্রার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার নেই। এ কারণে ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠাতে হচ্ছে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর ইন্টার্নশিপ করানো হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আব্দুল গণি জানান, ‘কলেজটিতে শিক্ষকের মোট বরাদ্দকৃত পদের সংখ্যা প্রায় একশ’। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ৫৯ জন। শিক্ষকের পাশাপাশি কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। অস্থায়ীভিত্তিতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া ৪১ জন কর্মচারী দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে, কিন্তু তারাও নিয়মিত বেতন পাচ্ছে না। তাদের পাঁচমাসের বেতন বকেয়া পড়েছে।’ এসব সংকট মোকাবিলা করে নিয়মিত পাঠদান করতে গিয়ে কর্মরত শিক্ষকদের রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।
কলেজের প্রথম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বলেন, করোনার কারণে আমাদের শিক্ষাবর্ষ বেশ পিছিয়ে গেছে। তা না হলে এতদিনে আমরা এমবিবিএস পাস করে বেরিয়ে যেতাম। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমরা অনেক বিভাগেই কোনো অধ্যাপকের সান্নিধ্য পাইনি। ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য ছুটে যেতে হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর ইন্টার্নশিপ করতে হয়েছে নেত্রকোনা জেলা সদর হাসপাতালে। সেখানেও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে এই হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ এমনকি একটি মানসম্মত অপারেশন থিয়েটারও নেই। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট তো আছেই। 
তৃতীয় ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজের জন্য যে ধরনের পরিবেশ ও আবাসন ব্যবস্থা থাকার কথা, তার কোনোটাই আমরা পাইনি। অনেক ঘাটতি নিয়ে কোনো রকমে দিনগুলো পার করতে হচ্ছে। এর কারণ দীর্ঘ ছয় বছরেও কলেজটির স্থায়ী ক্যাম্পাস এবং অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। আমাদের অনেকে চিকিৎসক হয়ে বের হবে। কিন্তু তারা স্থায়ী ক্যাম্পাস দেখে যেতে পারবে না।’
নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আব্দুল গণি বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই, এটি আমাদের একটি বড় সমস্যা। এরপরও আমরা গুণগতমান বজায় রেখে পাঠদান পরিচালনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। রেজিস্ট্রার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রারের পোস্টিং দেওয়া হলে ক্লিনিক্যাল সাইডটা আরেকটু ভালোভাবে মেনটেইন করা যেত।’
তিনি আরও বলেন, ‘কলেজের নানান সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। আমরাও তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি।
শিক্ষক, ল্যাব-অবকাঠামো সংকটে নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ : ২০১৯ সালে ক্লাস শুরু হলেও নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজে কোনো স্থায়ী ক্যা¤পাস নেই। নেই মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালও। মেডিক্যাল কলেজটিতে ফরেনসিক মেডিক্যাল এবং ফার্মাকোলজির বিষয়ের জন্য মাত্র একজন করে প্রভাষক আছেন।
স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, ওই বিষয়ে কোনো সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপক নেই। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে চুক্তিভিত্তিক তিনজন  টেকনিশিয়ান সপ্তাহে ২/৩ দিন নীলফামারী এসে মেডিক্যাল কলেজের ল্যাব পরিচালনা করেন।
নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজে মঞ্জুরিকৃত ৭৮ শিক্ষকের বিপরীতে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ২৪ জন। খালি পড়ে রয়েছে ৫৪ শিক্ষকের পদ। মেডিক্যাল কলেজটির নিজস্ব কাম্পাস ও হাসপাতালের মেডিক্যাল কলেজ না থাকায় তাদের ২৫০ শয্যার নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল থেকেই ইন্টার্ন করতে হবে। সদর হাসপাতালে তো সব ধরনের চিকিৎসা হয় না, তাই তাদের শেখার ঘাটতি থেকেই যাবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা অধ্যক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন। যেখানে শিক্ষক সংকট অতিদ্রুত নিরসন, সিএ/রেজিস্ট্রার অতি দ্রুত নিয়োগ, এবং সন্ধ্যাকালীন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি ফেজের সবগুলো বিভাগ পূর্ণাঙ্গরূপে চালু ও বিষয়ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ল্যাব সুবিধাসহ ল্যাব টেকনিশিয়ানের ব্যবস্থা করা, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্লাসের ব্যবস্থা ও সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা কর, ছাত্র হোস্টেল অতিসত্তর শহরে স্থানান্তকরণ, হোস্টেলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা (ডাইনিং, নিরাপত্তা, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস) নিশ্চিতসহ, লাইব্রেরি সম্প্রসারণ (বই আসন) এবং পর্যাপ্ত সময় অধ্যয়নের সুযোগ-সুবিধা ও কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী-ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া স্থাপন, সকল অনলাইন ক্লাস বন্ধ রাখতে হবে, ক্রীড়া কমিটি গঠন ও খেলাধুলার সামগ্রী কমিটির কাছে হস্তান্তর, স্থায়ী ক্যাম্পসের কাজ অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্র জানায়, যে ২৪ জন শিক্ষক রয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে একজন অ্যানাটমির অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক; ফিজিওলজির একজন সহযোগী অধ্যাপক, তিনজন সহকারী অধ্যাপক, একজন লেকচারার; বায়োকেমিস্ট্রির একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিনের দুজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন প্রভাষক; একজন প্যাথলজি অধ্যাপক, একজন লেকচারার; নাক, কান, গলার (ইএনটি) একজন সহকারী অধ্যাপক, একজন পেডিয়াট্রিক্স সহকারী অধ্যাপক; সহকারী অধ্যাপক শিশু সার্জারি একজন; সহকারী অধ্যাপক সার্জারি একজন; সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন একজন; সহকারী অধ্যাপক গাইনি একজন; সহকারী অধ্যাপক ডেনটিস্ট্রি একজন; সহকারী অধ্যাপক ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিটিক্স একজন, প্রভাষক ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক্স একজন রয়েছেন।
শুধুই হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, নীলফামারী নয়, গত সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা সরকারি সব হাসপাতাল ব্যক্তিস্বার্থেই করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, মানুষের সেবার জন্য যদি হাসপাতাল করা হতো, তাহলে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েই তৈরি হতো। তা না করে নামকাওয়াস্তে একেকটি হাসপাতালের কাঠামো তৈরি করা হলো। নিজেদের পকেট ভারি করার লক্ষ্যে হাজার কোটি আত্মসাৎ করা হলো। যদি এসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগ না থাকে তাহলে সেগুলো অন্যান্য বড় হাসপাতালের সঙ্গে একত্রিত করে দক্ষ চিকিৎসক তৈরি করা হোক। চিকিৎসকের অদক্ষতায় একটি রোগীরও যাতে মৃত্যু না হয়, আমরা সেটিই চাই সব সময়।

×