ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১

আইনজীবী সমাবেশে জামায়াত আমির

গণহত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গণহত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে

ডা. শফিকুর রহমান

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘গণহত্যাকারী যারা, মাস্টারমাইন্ড যারা, যারা গণহত্যা করেছেন তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা আইনের শাসন চাই।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে আইডিইবি ভবনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত আইনজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একজনকে বলতে শোনতাম, আমি নারী, নারী হিসেবে অন্য নারীদের অসহায়ত্ব বুঝি। আমার বাবা-মাকে মেরে ফেলা হয়েছে, আমি বুঝি বাবা-মা হারানোর কষ্ট। কিন্তু তার কোনো প্রমাণ তো পেলাম না। তিনি শেষ পর্যন্তও খুনের নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা বলছি একটা রোডম্যাপে হবে না, দুইটা রোডম্যাপ দিতে হবে। প্রথম রোডম্যাপ হবে সংস্কারের। কি কি সংস্কার উনারা করবেন এবং তার টাইমলাইনটা কি হবে তার রোডম্যাপ দিতে হবে। এটা যদি সঠিক হয় দ্বিতীয় রোডম্যাপটাও সফল হবে। না হলে কিছুই হবে না।

তিনি বলেন, প্রথমটা ঠিক করার জন্য রাজনৈতিক স্টেক হোল্ডার, সিভিল সোসাইটিসহ অংশীদার যারা আছে তাদের সঙ্গে বসতে হবে। বসে সেটেল করতে হবে। ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে এবং এই টাইমলাইনের মধ্যে সংস্কার হতে হবে। এই কাজগুলো যদি তারা করেন তাহলে তাদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সব প্রত্যাশা যদি একটা অনির্বাচিত সরকারই করে দেন তাহলে নির্বাচিত সরকারের দরকারটা কি- এমন প্রশ্ন রেখে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সব প্রত্যাশা যদি একটা অনির্বাচিত সরকারই করে দেন তাহলে নির্বাচিত সরকারের দরকারটা কি? তারা কি পারবে? এটা তাদের জবও নয়, তারা পারবেনও না।
এখান থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুতি যদি তাদের ঘটে তাহলে জাতির সর্বনাশ হবে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা আশঙ্কা থেকে বাঁচতে চাই এবং আশাবাদী হয়ে বাঁচতে চাই। তাই আমরা দাবি জানাব অনতিবিলম্বে তারা ডায়ালগ ওপেন করে এর একটা উপসংহারে উপনীত হবেন এবং সেভাবেই আগাবেন। যদি এইভাবে আগান তাহলে আমরা বিশ্বাস করি খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। এটা যখনই একটা পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, যারা স্বৈরাচারের সাহায্যকারী ছিল, সহযোগিতা করেছে তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থেকে জাতিকে সেবা করার। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে তাহলে সামনে কেউ স্বৈরাচার হবে না, সে সাহসও পাবে না। 
জামায়াতের রাজনীতির মূলমন্ত্র গণমানুষের কল্যাণ : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘জামায়াতের মেইন সাবজেক্ট হচ্ছে মানবতা, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। তাই মানবতাকে টুকরো টুকরো না করে যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ করতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানাই। 
তিনি বলেন, ‘গণমানুষের কল্যাণই জামায়াতের রাজনীতির আদর্শ ও মূলমন্ত্র। তাই জামায়াতের নেতাকর্মীরা সব সময় মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে আমরা সব সময়ই অ পোসহীন রয়েছি। 
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাফরুলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর।
তিনি বলেন, ‘আর মানুষের কর্তব্য হচ্ছে কর্মের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের চেষ্টা করা।’ আমির ৫ আগস্টের  বিজয়কে অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মানুষকে আমরা মানুষের মর্যাদা দিতে চাই। দল-ধর্মের ব্যবধান না করে মানুষকে দেশের স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে দলমত নির্বিশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য দরকার। বিভক্ত জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘মূলত, বিভক্ত জাতির জন্য অপমান ও লাঞ্ছনা অনিবার্য। সে ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের অপমান ও লাঞ্ছনা চলেছে. যা আর চলতে দেওয়া যায় না, বরং তা পাল্টানোর সময় এসে গেছে। এজন্য আমাদের অতীত বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। মূলত যে জড়সড় হয়ে চলে সে নিজের জন্য যেমন বোঝা, ঠিক তেমনিভাবে পরিবার ও সমাজের জন্যও বোঝা। আর যে ব্যক্তি নিজেকে মেলে ধরতে পারে সে নিজের জন্য যেমন সম্পদ, ঠিক তেমনিভাবে পরিবার, সমাজ ও জাতির জন্যও সম্পদ। তাই আমাদের প্রত্যেককেই সম্পদ হওয়ার শপথ নিতে হবে।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে চলি। মানুষের মধ্যে কুরআন-হাদিসের দাওয়াত দেই আমলি ভাষায়। আমরা কাউকে বোকা মনে করি না, বরং তারা দাওয়াত গ্রহণের মাধ্যমে নিজের গন্তব্য ঠিক করে নিতে পারবে ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ মানুষের কর্মের প্রকৃত মালিক। আর মানুষের কর্তব্য হচ্ছে কর্মের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের চেষ্টা করা।  আমির বলেন, ‘গণমানুষের কল্যাণই জামায়াতের রাজনীতির আদর্শ ও মূলমন্ত্র। তাই জামায়াতের নেতাকর্মীরা সব সময় মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য লস্কর মুহাম্মদ তাসলিম ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক।

×