ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারেও পলিব্যাগ নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারেও পলিব্যাগ নিষিদ্ধ

১ নভেম্বর থেকে সব কাঁচাবাজারে এ পদক্ষেপ কার্যকর হবে

সুপারশপের পর এবার কাঁচাবাজারেও পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে রাজধানীর সব সুপারশপে এবং ১ নভেম্বর থেকে সব কাঁচাবাজারে এ পদক্ষেপ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানোর হুঁশিয়ারি দেন এ পরিবেশবিদ।
মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার বণিক সমিতির অফিসে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এর আগে পলিথিন শপিং ব্যাগ, পলিইথিলিন বা পলিপ্রপাইলিন তৈরির সামগ্রীর ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে টাউন হল কাঁচাবাজারে ক্লিন-আপ কার্যক্রম উদ্বোধন ও বাজারে পলিথিনের বিকল্প সামগ্রী বিতরণ, বাজারে বিদ্যমান পলিথিন ব্যাগসহ অন্যান্য পলিথিনজাত প্যাকেজিং সংগ্রহের জন্য বিন ও স্থায়ী নোটিস বোর্ড স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
মতবিনিময় সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কাঁচাবাজারগুলো যাতে আর পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার না করে, সেজন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এটা নতুন করে নিষেধ করার কিছু নেই। এটা ২০০২ সাল থেকে আইন করে নিষিদ্ধ করা আছে। ২০০৪-২০০৬ সাল পর্যন্ত সফলভাবেই প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। পলিথিন উৎপাদনকারী বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু মার্কেটে কখনো অভিযান চালানো হয়নি। ফলে মার্কেটগুলো দেদারসে পলিথিন এনেছে এবং পলিথিনে পণ্য দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পলিথিন ব্যাগগুলো রিসাইকেল করা যায়, কিন্তু সেটা সন্তোষজনক নয়। কারণ পলিথিন ব্যাগ বা অন্যান্য সামগ্রী থেকে মানুষের রক্তে মস্তিষ্কে, লিভারে পলিথিনের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে পলিথিন দিয়ে মোড়ক করার কারণে লবণের মধ্যে পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের অনেক নদীর মাছেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই প্লাস্টিক ব্যবহার করাই একটা ক্ষতিকারক বিষয়। সুতরাং এটাকে কালেক্ট করে রিসাইকেল করা হচ্ছে সর্বশেষ সমাধান, যেখানে আর কোনো বিকল্প থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে ঢাকার সুপারশপগুলোতে প্লাস্টিক ও পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ আর ব্যবহার করা যাবে না। এটা সরকারের একক কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এটি সুপারশপগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।

এজন্য বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনসহ ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ তাদের সরবরাহ করবে। এরইমধ্যে সুপারশপগুলো তাদের চাহিদা দিয়েছে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাগের যোগানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, সুপারশপের পাশাপাশি আমরা আগামী ১ নভেম্বর কাঁচাবাজারগুলোতে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে কার্যক্রম শুরু করব। সেটি আজকের মতো আলাপ-আলোচনা নয়, আইন প্রয়োগ করা হবে। দোকান-মালিক সমিতির নেতারাও আমাদের কথা দিয়েছেন, এক মাাসের মধ্যে তারা পলিথিনের পরিবর্তে পাট, কাপড় বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার শুরু করবেন। 

তিনি আরও বলেন, পলিথিন বা পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহারে যে নিষেধাজ্ঞা আছে, সেটি কার্যকর করতে আগামী ১ অক্টোবর সুপারশপে এবং ১ নভেম্বর কাঁচাবাজারগুলোতে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। একইসঙ্গে পলিথিন যেখানে উৎপাদন করা হয়, ১ নভেম্বর থেকে সেখানে আমরা আমাদের অভিযান চালাব। সবাই পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন। আমরাও বিকল্প সরবরাহের জন্য কাজ করছি।

আমরা অভিযান দিয়ে একটি তিক্ত পরিস্থিতি নিয়ে কাজ শুরু করতে চাই না। সবাইকে বুঝতে হবে, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার ক্ষতিকর। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এ নিয়ে আমাদের সতর্ক, সচেতন ও উদ্যোগী হওয়ার সময় পার হয়ে গেছে। আমরা বরং দেরিতে শুরু করলাম। আমরা আইন করে আইনটা প্রয়োগ করলাম না, যোগ করেন উপদেষ্টা।

এ সময় মোহাম্মদপুর টাউন হল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লুৎফুর রহমান (বাবুল), পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

×