ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

সাংবাদিকদের ফরিদা আখতার

ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতের বিশেষ অনুরোধে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতের বিশেষ অনুরোধে

আসন্ন দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ দেশটিতে ইলিশ মাছ যাচ্ছে

আসন্ন দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ দেশটিতে ইলিশ মাছ যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বাধীনভাবে এটা (রপ্তানির অনুমোদন) দিয়েছেন। তারা একটা অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দিয়েছেন। ভারতের দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুরোধ ছিল, সে অনুযায়ী তারা রপ্তানির অনুমতি দিচ্ছেন। সেটা তাদের তো আমি জোর করতে পারি না। রবিবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে, ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ে দেশব্যাপী ইলিশ পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, ২০২৪ নিয়ে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাক্সফোর্স কমিটির সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। এ দিকে, দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি করতে চেয়ে গত ১১  সেপ্টেম্বর চিঠি দেয় ভারত।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ওই চিঠিতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার টন ইলিশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হচ্ছিল। তবে ২০১২ সালের পর থেকে রপ্তানি অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার গত পাঁচ বছর ধরে কেবল দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ যাচ্ছিল। 
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির সুযোগ চেয়েছিলেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। এর আগে দায়িত্ব নিয়ে গত ১১ আগস্ট সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদা আখতার বলেছিলেন, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে ওই সময় তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ যাতে ইলিশ মাছ পায় এবং দাম কমে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ ছাড়া দেশে ইলিশ মাছের দাম বাড়ানো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না। স্বল্প আয়ের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া ইলিশ মাছের দাম নাগালের মধ্যে নিয়ে আসারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উপদেষ্টা। তবে ভারতের অনুরোধে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে।

রপ্তানির সে বিষয়ে আপনার মতামত কী- এমন প্রশ্নের জবাবে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, যেটা শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সেটা ভারতের মৎস্য ব্যবসায়ী বাংলাদেশের মৎস্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ অনুমোদন দিয়েছে। এর সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

আমরা এখনো আগের অবস্থানেই আছি। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের কাছে যেন ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারি। তিনি আরও বলেন, আপনারা বলছেন, ইলিশের দাম ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে, সেখানে আপনারা একটা ভূমিকা রাখতে পারেন। মাছটি এখন যায়নি কাগজে আছে। এর প্রভাবে যদি বাড়ে, সেটা উচিত হবে না। আমাদের এ বছর ইলিশের উৎপাদন পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টন। এর মধ্য থেকে মাত্র তিন হাজার টন অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু গত বছর তিন হাজার টনের বেশি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে সে অনুযায়ী রপ্তানি হয়নি। মাত্র এক হাজার টন দেওয়া হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কী রপ্তানি বন্ধ রাখার বিষয়ে বলবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমি প্রথমেই বলেছি, আগে দেশের মানুষ খাবে পরে রপ্তানি হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বাধীনভাবে অনুমোদন দিয়েছে এবং একটা বিশেষ অনুরোধে দিয়েছে। ভারতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুরোধ ছিল।

দাম বাড়লে রপ্তানি নিরুৎসাহিত করবেন কিনা- এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, যদি দাম বাড়ে সেই দাম বাড়ার বিষয়ে অবশ্যই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। দামের বিষয়টি আমরা প্রতিনিয়তই মনিটরিং করছি, মজুত হয় কিনা  দেখা হচ্ছে। সরকার যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। বাংলাদেশের ইলিশ রপ্তানি করবেন কিনা বা বন্ধের কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রপ্তানি বন্ধের দায়িত্ব তো আমার না। আমি আহ্বান জানাতে পারি কিন্তু বন্ধ করতে পারি না।

আমি তো আহ্বান আগেই জানিয়েছি। এখন তারা বলছে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুরোধে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে ইলিশ রপ্তানির খবরে খুশি পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা। শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসবে মেতে উঠতে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা এখন প্রহর গুনছেন।

গত পাঁচ বছর ধরে পূজার উৎসব আরও জমকালো করে তুলেছে বাংলাদেশের ইলিশ। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া শুরু করবে বাংলাদেশের রুপালি ইলিশ। এতে খুশি ভারতের মাছ ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রপ্তানিনীতিতে ইলিশ শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে। তাই সরকারের অনুমোদন নিয়েই এটি রপ্তানি করতে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শনিবার ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়। এখন আগ্রহী রপ্তানিকারকদের ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। যারা আগেই আবেদন করেছেন, তাদের অবশ্য নতুন আবেদনের প্রয়োজন নেই।

এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে মাছ আমদানি-রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ রপ্তানি করে ৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলার আয় করেছে। অন্য মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে পাবদা, ভেটকি ও পুঁটি। এর বিপরীতে একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ৬৩ হাজার টন তাজা ও শুঁটকি মাছ।

সে দেশ থেকে লইট্টা, কাচকি ও পোয়া শুঁটকির পাশাপাশি রুই, কাতলা, পোয়া ও ম্যাকারেল মাছ আমদানি হয়। ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশের যে আয় হয়, তা দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা শুঁটকি মাছের দাম মেটানো সম্ভব।
১৩ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা নিষেধ ॥ আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ এই নিষেধাজ্ঞার সময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, ২০২৪ নিয়ে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাক্সফোর্স কমিটির সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ আহরণ, মজুত, বিক্রিতে কঠোর নজরদারি চালাতে আইশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে ইলিশ বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত। পদ্মার ইলিশ বিশ্বের অন্যতম সুস্বাদু মাছ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

আমদের ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করতে হবে কারণ দেশের মানুষের খাবারের মেনুতে ইলিশ মাছ নিশ্চিত করতে চাই। ইলিশ যেন অন্যকোন দেশে অবৈধভাবে যেতে না পারে বা প্রতিবেশী কোনো জাহাজ বা ট্রলার দেশের সীমানায় প্রবেশ করে ইলিশ ধরতে না পারে সেজন্য নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারির নির্দেশনাও দেন তিনি।

×