মুসলিম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ফজলুল হক হলে ঘটে।
তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায়।
চোর সন্দেহে তাকে হলের প্রধান ভবনের অতিথিকক্ষে ও বর্ধিত ভবনের অতিথিকক্ষে কয়েক দফা পেটানো হয়। পরে থানায় নেওয়ার পর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখা দেয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরজমিনে ফজলুল হক মুসলিম হলে গিয়ে হলের আবাসিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে, সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়।
জানা যায়, বুধবার হলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা চলছিল। দুপুরের দিকে হলের ছয়জন শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন চুরি হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তোফাজ্জল নামের ওই ব্যক্তি হলে এলে তাকে ফোন চুরি করার সন্দেহে আটক করে শিক্ষার্থীরা। এরপর রাত ৭টা ৪৭ থেকে ৪৮ মিনিটের সময় তাকে হলের প্রধান ভবনের অতিথিকক্ষে নেওয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রধান ভবনের অতিথিকক্ষে নেওয়ার সময়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এরপর সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ফোন চুরির বিষয় অস্বীকার করেন। তখন তাকে এক দফা পেটানো হয়।
তবে সেগুলো চড়-থাপ্পড়ের মধ্যেই ছিল। এরপর তাকে হলের ক্যান্টিনে খাবার খেতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ডাল ও মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। এরপর তাকে হলের বর্ধিত ভবনের অতিথিকক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে কয়েক দফা পেটানো হয়। তখন স্টাম্প ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে তাকে আবারও হলের প্রধান ভবনের অতিথিকক্ষে নিয়ে আসা হয়। সেখানেও তাকে পেটানো হয়। রাত ১০টা ৫২ মিনিটে তাকে সেখান থেকে বের করে প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়িতে তোলা হয়।
ফুটেজে দেখা যায়, এ সময় তিনি দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে গাড়িতে উঠছেন। তার শরীরে ছোট হাফ প্যান্ট ছাড়া অন্য কোনো কাপড় ছিল না। সেখান থেকে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট অবস্থানের পর তার অবস্থা শঙ্কাজনক হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।
হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাতে চোর সন্দেহে আটকের খবর পাওয়ার পরই তারা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। শিক্ষকরা ওই ব্যক্তিকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে থানায় সোপর্দ করার কথা বললেও উপস্থিত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বাধা দেয়। এমনকি তাকে থানায় তুলে দিলেও শিক্ষকদের তরফ থেকে ওই ছয়টি ফোনের টাকা দিতে হবে বলে এমন দাবিও তারা করেন।
এদিকে ঘটনা ঘটার পর আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ, সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় ফজলুল হক মুসলিম হলে যান তারা। এ সময় তারা প্রধান ভবন ও বর্ধিত ভবনের অতিথিকক্ষগুলো ঘুরে দেখেন এবং রুমগুলো সিলগালা করে দেন। এরপর হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। এ সময় প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুমকে আজকে সন্ধ্যার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং হলের নিরাপত্তার দায়িত্বশীল ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে দায়ী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন এবং একটি রিপোর্ট প্রক্টর বরাবর দিতে বলেন।
এ সময় প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই হল থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা যারা জড়িত ছিল, তাদের তালিকাসহ একটি রিপোর্ট সন্ধ্যার মধ্যেই হল থেকে প্রক্টর বরাবর দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটি দায়ীদের শাস্তি দেবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটেও সেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা করা হবে। মামলাটি আজকের মধ্যেই করা হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে, এর জন্য তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
তাসমিম