ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

আজও থাকবে বৃষ্টি কাল থেকে কমতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আজও থাকবে বৃষ্টি কাল থেকে কমতে পারে

নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার সারাদেশে ভারি বর্ষণ হয়

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সারাদেশে ঝরছে বৃষ্টি। কোথাও কোথাও বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো বাতাস। উপকূলীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নাজেহাল জনজীবন। বর্ষার শেষ পর্যায়ের এ বৃষ্টি আজ রবিবারও ঝরবে। বিশেষত ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টি বাড়বে। তবে আগামীকাল সোমবার থেকে সারাদেশে কমে আসবে এর ব্যপ্তি। আজও দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর সংকেত বলবৎ থাকবে। শনিবার আবহাওয়া অফিস জনকণ্ঠকে এমন তথ্যই জানিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে প্রথমে নি¤œচাপ ও পরবর্তীতে গভীর স্থল নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে। এটি শনিবার সকাল ৯টায় যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জনকণ্ঠকে জানান, সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার প্রথম পর্যায়ে আবহাওয়া অফিস থেকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড় ধসের সতর্কবার্তা দিয়েছে, যা এখনো বলবৎ আছে। আশা করছি রবিবার রাত ১০টা থেকে এই সতর্কবার্তা উঠে যাবে। তিনি বলেন, রবিবার সারাদিনই রাজধানীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে।

শনিবারও ঢাকায় প্রায় সারাদিনই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ও বাতাস বয়ে গেছে।
শনিবার সরেজমিনে রাজধানীতে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক মিনিটের জন্যও বৃষ্টি থামেনি। কিন্তু কোথাও ভারি বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এবং আষাঢ়ে বৃষ্টির আবহে নগরবাসী যেন ছুটির আমোদ উদ্যাপন করেছে। সড়কে ছিল না যানজট, সেভাবে পানিও কোথাও জমতে দেখা যায়নি। তবে বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবী মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে দেখা গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দেশজুড়ে চলমান বৃষ্টিপাত আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। তবে বর্ধিত পাঁচদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, গভীর স্থল নি¤œচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সেই সঙ্গে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

এই অবস্থায় রবিবার সকাল নয়টা পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে এই সময়ে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

তবে এই সময়ে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে এই সময়ে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি হ্রাস পেতে পারে।
সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে এই সময়েও দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। তবে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী মঙ্গলবার সকাল নয়টা পর্যন্ত দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। তবে এই সময়ে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া বর্ধিত পাঁচদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে বন্যা র্প্বূাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের সকল প্রধান নদ-নদীর পানি সমতলে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মুহরী, ফেনী ও মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, গোমতী নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে অপরদিকে হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশে এবং উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতার প্রেক্ষিতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের সব নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কতিপয় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি গভীর স্থল নি¤œচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী দুদিন উপকূলীয় ও দেশের মধ্যাঞ্চলে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময় ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে যমুনা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী পাঁচদিন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল ধীরগতিতে হ্রাস পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী তিনদিন পর্যন্ত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুদিন পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আগামী তিনদিন পর্যন্ত এসকল নদীর পানি সমতল ধীরগতিতে হ্রাস পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং অন্যান্য প্রধান নদী-মনু, সারিগোয়াইন, ধলাই ইত্যাদির পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং খোয়াই নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আগামী তিনদিন এসব নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
মাগুরা : মাগুরায় শুক্রবার রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সবজির দাম বেড়েছে।  শহরের পৌর বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকায়  জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টির ফলে কৃষকের উপকার হয়েছে। আমন ধানের জমিতে পানি সেচ দিতে হচ্ছে না। শ্রমজীবী মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় তাদের আয় কমেছে।

×