ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

আজ ঢাকা আসছেন লু, আলোচনায় যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে 

প্রকাশিত: ১০:০৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আজ ঢাকা আসছেন লু, আলোচনায় যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে 

আজ ঢাকা আসছেন লু, আলোচনায় যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত হয়  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই অবস্থায় প্রথম বারের মত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে আজ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটি তিন দিনের সফরে আসছে। এ সফরে থাকছেন বাংলাদেশে খুব পরিচিত ও বহুল আলোচিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।

সংস্কারের পথে হাঁটা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদারের পথ ও কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাবে মার্কিন এই প্রতিনিধিদলের সফরে। ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের আগে দিল্লি হয়ে আসায় এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন মহলের আলোচনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লুর ভারত সফরে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনায় থাকছে। কারণ ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বলেছেন।

এর আগে টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গত মে মাসে ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসেছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরও লু ঢাকা সফর করেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের প্রথম সফর। অবশ্য ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারকে সহযোগিতার বার্তা পাঠিয়েছে। এই সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহও প্রকাশ করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলের এই সফরটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুদিক থেকেই এই সরকারে জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর মধ্যে বিগত হাসিনা সরকারের সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও শেখ হাসিনার পতনের পর দুই দেশের সম্পর্ক বলা যায় নিম্নপর্যায়ে রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত ইস্যুতেও আলোচনা গুরুত্ব পাবে। এ ক্ষেত্রে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তিন দিনের (১০-১৩ সেপ্টেম্বর) দিল্লি সফর করে আজ শনিবার ঢাকায় লুর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। ডোনাল্ড লু ভারতে ওয়াশিংটন-দিল্লি প্রতিরক্ষাবিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে যোগ দেন।

প্রতিনিধিদলে ব্রেন্ট নেইম্যান ও লু ছাড়াও থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কাউর, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়াও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। পৃথকভাবে দলের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেকনিক্যাল মিটিং করবেন।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কী আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা শুরুর করার আগে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, তাতে আলোচনার স্বাভাবিকতা ক্ষুণ্ণ করে। আমি শুধু এটা বলতে পারি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রতিনিধিদল আসছে। তারা যে দুই দেশের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, সেটির বড় প্রতিফলন ঘটছে এর মাধ্যমে।

সচিব বলেন, ‘দলের সদস্যদের পরিচয় দেখলে বোঝা যায় এই আলোচনা বহুমাত্রিক হবে। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমিত থাকবে না। আমরাও এর সঙ্গে সংগতি রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তবে গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের এক বিবৃতিতে লুর সফরের বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ১০ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ভারত ও বাংলাদেশ সফর করবেন। দ্ইু দেশ সফরের সময় তিনি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার বিকাশে সহায়তা করার জন্য দেশটির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন।

বলা হয়, ভারত সফরের সময় লু দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ব্যবসা পরিষদ আয়োজিত ইন্ডিয়া আইডিয়াস সামিটে উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও নারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিকাশে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতার কথা তুলে ধরবেন। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখ্য উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেডিদিয় রয়েল এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠেয় অষ্টম যুক্তরাষ্ট্র-ভারত টু প্লাস টু আন্তঃঅধিবেশন সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন লু। সংলাপটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব বাড়ানোর সুযোগ চিহ্নিত করবে এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও তার বাইরেও দুই দেশের সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে।

ওই বিবৃতিতেই বলা হয়, ঢাকা সফরে প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, তা নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হবে।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, সফরে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহায়তার বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিশেষ করে শ্রম আইন সংশোধনের আগের সরকারের কাছে দেওয়া সুপারিশের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কারণ আগামী দিনে ডিএফসি ফান্ডপ্রাপ্তিসহ বাংলাদেশকে যেকোনো অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা প্রদানে যুক্তরাষ্ট্র শ্রমমানকে অগ্রাধিকারে রাখবে। কারণ আর্থিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে শ্রমমানের উন্নতি। আবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ফোকাস হচ্ছে বিশ্বময় গণতন্ত্রের চর্চা। কয়েক বছর ধরেই তারা এ নিয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে তারা কথা বলেছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এ নিয়েও তারা কথা বলে আসছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে গুমবিরোধী সনদে সই করেছে। গুমের ঘটনাগুলোর বিচারে তদন্ত কমিশনও গঠন করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে। মোট কথা, ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবে মার্কিন প্রতিনিধিদল।

তাসমিম

×