ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে

সংবিধানের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন : ড. ইউনূস

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সংবিধানের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন : ড. ইউনূস

ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংবিধান নতুন করে লেখা বা সংশোধনের বিষয়ে আগে একমত হতে হবে। কারণ এর ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখা ঠিক করা যাচ্ছে না। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। বুধবার ডয়েচে ভেলে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে।
ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়-রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান পুনর্লিখনের দাবিও উঠেছে। বলা হচ্ছে সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন ?
জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা মস্ত বড় সুযোগ। এই সুযোগ জাতির জীবনে আর আসবে কিনা জানি না। না আসাটাই স্বাভাবিক হোক। গোড়াতে হাত দিতে হবে, সংবিধানে হাত দিতে হবে। তো সেখানে প্রশ্ন হচ্ছে- সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে, নাকি এই সংবিধানই কিছু সংশোধন করা হবে?

এ বিষয়ে মতভেদ আছে। এজন্য কমিশন হবে, বিচার বিবেচনা করবে, একমত হবে। এর ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা নির্বাচনের রূপরেখা ঠিক করতে পারছি না। কী ধরনের নির্বাচন হবে, কী কী নির্বাচন হবে- সবকিছুই সংবিধানের ভেতরে থাকবে। পুরো আন্দোলনের ব্র্যান্ড নেইম হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার হচ্ছে আকাক্সক্ষা। আমরা সেই আকাক্সক্ষার অংশীদার। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি যেন আমরা সেই আকাক্সক্ষা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পূরণ করতে পারি।’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যেসব অভিযোগ উঠছে সেসব বিষয়ে স্থায়ী সমাধান কী হতে পারে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্র্রধান বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের একক সমস্যা না। সব দেশেই সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা হয়। আমেরিকাতেও সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা আছে। সরকারের দায়িত্ব এটা না হওয়া। সংবিধানের অধিকার সবার প্রাপ্য। আমরা তো হিন্দুর প্রাপ্য, মুসলমানের প্রাপ্য কি বৌদ্ধর প্রাপ্য এ রকম করে ভাগ করে দেই নাই।

সরকারের দায়িত্ব হলো এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা। এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা হলেই আর ধর্মীয় বিভাজনের প্র্রশ্ন উঠবে না। যতদিন প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততদিন আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তবে আমি বলব যে, যেই পরিমাণ প্রচার হচ্ছে সেই পরিমাণ আমাদের দৃষ্টিতে আসছে না। আমরা বারে বারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

কিন্তু মনে হচ্ছে না যে অত বড় কিছু আসলে হচ্ছে। অনেকে এটা রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করছে। যেটুকু হচ্ছে সেটা যেন না হয়, শূন্যের কোঠায় পৌঁছায় সেদিকে আমরা যাব।’ এদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্র্রশ্নে তিনি বলেছেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া ঢাকার কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের প্রয়োজনেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বোত্তম সম্পর্ক থাকতে হবে। 
ডিডব্লিউর সঙ্গে আলাপকালে পানি বণ্টন এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচলের মতো অন্যান্য দ্বি-পক্ষীয় সমস্যার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন ড. ইউনূস। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তার প্রশাসন নয়াদিল্লির সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
 তিনি বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের আন্তর্জাতিক উপায় রয়েছে। আমরা সেই পথ অনুসরণ করব এবং শান্তিপূর্ণভাবে এর সমাধান করব।’
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। প্রতিবেদন মতে, নয়াদিল্লি এখনো হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেয়নি। যদিও তিনি একটি ‘নিরাপদ জায়গায়’ রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেছে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জোরালো হচ্ছে। তবে সাবেক কূটনীতিক এবং শিক্ষাবিদরা ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন, ঢাকা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করলেও তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে নয়াদিল্লি।

×