ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

হদিস নেই ১৮৩২ অস্ত্র ও ৩ লাখ গোলাবারুদের

যৌথ অভিযানে ৪ দিনে ৫৩ অস্ত্র উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যৌথ অভিযানে ৪ দিনে ৫৩ অস্ত্র উদ্ধার

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নেমে চারদিনে ৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নেমে চারদিনে ৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। এ নিয়ে শনিবার পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৯৮৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ১ হাজার ৮৩২টি অস্ত্র ও ৩ লাখ গোলাবারুদ। এই তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরের। 
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ সারাদেশে লুট হওয়া বিভিন্ন অস্ত্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৮১৮টি। এর মধ্যে শনিবার পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৬টি অস্ত্র। তবে রাইফেল, এসএমজি, এলএমজি ও পিস্তলসহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি ১ হাজার ৮৩২টি অস্ত্র। এ ছাড়া লুট হওয়া প্রায় ৩ লাখ গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এবং এর ফলে সরকার পতনের পরে থানায় ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ করে এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ঢাকাসহ সারাদেশে ৫ হাজার ৮১৮টি অস্ত্র লুট হয়। এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ জমা দেওয়ার আহ্বান জানায় পুলিশ সদর দপ্তর। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৭৭৯টি অস্ত্র জমা পড়ে। পরের দিন ৪ তারিখ থেকে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান শুরু হয়। যৌথ অভিযানে চার দিনে অর্থাৎ ৪ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। 
শনিবার পুলিশ সদর দপ্তর ক্ষুদে বার্তায় জানায়, চারদিনে যৌথ অভিযানে ৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- রিভলবার ২টি, পিস্তল ১৮টি, রাইফেল ২টি, শটগান ১১টি, পাইপগান ১টি, শূটারগান ৬টি, এলজি ৩টি, বন্দুক ৩টি, একে ৪৭ একটি, গ্যাসগান ১টি, চাইনিজ রাইফেল ১টি, এয়ারগান ১ টি এবং এসবিবিএল ৩টি। 
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনো উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৮৩২ অস্ত্র ও ৩ লাখ গোলাবারুদ। 
বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌথ অভিযানে অস্ত্রসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদিরকে (৫৫) আটক করেছে যৌথবাহিনী।
শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। উপজেলার তালিমপুর গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। কাদির উপজেলার তালিমপুর গ্রামের মৃত আসাব উদ্দিনের ছেলে।
বড়লেখা থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘যুবলীগ নেতা আব্দুল কাদিরকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। তার কাছে অস্ত্র ছিল বলে তিনি যৌথবাহিনীর কাছে স্বীকার করেছেন। তবে অস্ত্রটি উদ্ধার করা যায়নি। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া দুটি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে পুলিশ গোহালাকান্দা ইউনিয়নের সোয়াই নদী থেকে একটি এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী জালশুকা-কুমুদগঞ্জ জামে মসজিদ থেকে অপর একটি পিস্তল উদ্ধার করে। এ ছাড়া সেনাসদস্যরা অস্ত্র লুটে জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ পাঁচ ব্যক্তিকেও আটক করে। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর মেজর জিসানুল হায়দার জানান, অস্ত্র লুটে জড়িত সন্দেহে শ্যামগঞ্জ এলাকা থেকে যৌবাহিনীর অভিযানে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হচ্ছে, পূর্বধলার জামাইকোনা গ্রামের আতাউর রহমান (৩৯), জালশুকার শফিকুল ইসলাম (২৩), আমিনুল ইসলাম (২৫), গোহালাকান্দার সাব্বির হোসেন খান (১৮) ও গৌরীপুর উপজেলার মইলকান্দার জান্নাতুল ফেরদৌস (২৬)। 
শনিবার দুপুরে রাজশাহীর বাগমারায় পরিত্যক্ত একটি বস্তা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব। প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের সামনে থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাব রাজশাহীর মিডিয়া সেল সূত্র জানায়, অভিযানের সময় একটি বস্তায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ২৪টি দেশীয় অস্ত্র পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে রামদা, ছোরাসহ বিভিন্ন ধরনের ২৪টি অস্ত্র ছিল। 
নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে লুট হওয়া ১টি শটগান, চায়নিজ রাইফেলের ২টি ম্যাগাজিন ও ১টি চায়নিজ রাইফেলের ট্রিগার ম্যাকানিজম উদ্ধার করেছে নরসিংদী সেনা ক্যাম্পের দুটি আভিযানিক দল। শুক্রবার ও শনিবার নরসিংদী সেনা ক্যাম্পের (২৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) ক্যাপ্টেন রকিব ও লেফটেন্যান্ট সাদমানের নেতৃত্বে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল টেঙ্গরপাড়া এবং নরসিংদী শহরতলীর ঘোড়াদিয়া এলাকায় অভিযানে এসব অস্ত্র-শস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। 
শনিবার দুপুরে নরসিংদী স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নরসিংদী সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফাহিম মাহবুব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এর উপস্থিতে নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর আহমেদের কাছে এসব অস্ত্রশস্ত্র হস্তান্তর করেন।  
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই দুর্বৃত্তরা নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে লুুট করে ৮৫টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও ৮হাজার ১৫ রাউন্ড গুলি নিয়ে যায়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। 
এ ব্যাপারে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান জানান, জেলা কারাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৩টি অস্ত্র ও ১ হাজার ১৫৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে চায়না রাইফেল ৪২টি, শর্টগান-১১টি এবং চায়না রাইফেলের গুলি ১ হাজার ১১০ রাউন্ড এবং শটগানের গুলি ৪৩ রাউন্ড। 
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলমান এ যৌথ অভিযানে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্টগার্ড এবং র‌্যাব।

×