ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:৫১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি

বক্তব্য রাখেন সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী ও ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট- বাংলাদেশ’ এর সমন্বয়কারী মো. শামছুদ্দোহা

দলীয় রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তৈরি অগণতান্ত্রিক ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি জানিয়েছে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট- বাংলাদেশ’। এ ছাড়া জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার স্থানীয়করণ এবং স্থানভিত্তিক জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্ততা নিরূপণের মাধ্যমে স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এনডিসি-৩ তৈরি করা, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাতে ‘নিট-জিরো অর্থনীতি’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রোডম্যাপ প্রণয়নসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় জলবায়ু নীতি-পরিকল্পনায় যৌক্তিক সংস্কারের দাবি তুলেছে জোটের নেতৃবৃন্দ।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর)  ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার নীতি-পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা এবং এদের বাস্তবায়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তোলা হয়।

সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর নেতৃত্বাধীন ৩৯টি নাগরিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের জোট ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট- বাংলাদেশ’ ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনের প্রধান বক্তা সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী ও ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট- বাংলাদেশ’ এর সমন্বয়কারী মো. শামছুদ্দোহা তাদের দাবিগুলোর পক্ষে যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করনে। তিনি বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের জাতীয় তহবিল ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড- বিসিসিটিএফ’ ও এর আইনি কাঠামো ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট অ্যাক্ট’- এ দলীয় সরকার, আমলাতন্ত্র ও পেশাজীবীদের আধিপত্যের কারণে অবাধ দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করেছে।

শামছুদ্দোহা বলেন, বিসিসিটিএফ পরিচালনায় ১৭ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ডের ১৪ জনই মন্ত্রী, ১ জন সচিব এবং ২ জন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। দুইজন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সরকার দলীয় মন্ত্রীর আমন্ত্রণে বোর্ডের সাথে সম্পৃক্ত হন, যারা প্রকারান্তরে দলীয় সরকারেরই অংশ। ফান্ডের অর্থ বরাদ্দে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে বিসিসিটিএফ ও এর আইনি কাঠামোর আমূল সংস্কারের দাবি করেন তিনি।

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি জানিয়ে শামছুদ্দোহা বলেন, বিগত সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে এবং তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছিল। সাবেক সরকারের এস ডি জি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারীর একক তত্ত্বাবধানে বিদেশি পরামর্শকদের দ্বারা এবং কোনো ধরনের অংশীজন আলোচনা ছাড়াই এ পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়। এটি দেশের অন্যান্য পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এবং সর্বতোভাবেই বিদেশি ঋণনির্ভর হয়ে উঠেছে। ফলে এটি দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক না হয়ে দেশকে আরো দেনাগ্রস্ত করবে।

‘পরিকল্পনাটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যেগুলোর কোনোটিরই সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ফলে অগণতান্ত্রিক উপায়ে তৈরি ও বিদেশি ঋণনির্ভর এ পরিকল্পনাটি বাতিল ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই, যোগ করেন তিনি।

জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি দেশের ভৌগোলিক ভিন্নতাজনিত ঝুঁকিগ্রস্ততা, বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিগ্রস্ততার ভিন্নতা পর্যালোচনা করে তৈরি করা হয়নি। ফলে প্রান্তিক এসব জনগোষ্ঠীর বিশেষ অভিযোজন চাহিদা নিরূপিত ও অর্ন্তভুক্ত হয়নি।

জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার স্থানীয়করণের এবং অঞ্চলভিত্তিক জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্ততা নিরূপণের মাধ্যমে স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানান শামছুদ্দোহা।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া সত্বেও এর জাতীয় নীতি-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এখনো গণতন্ত্র এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জনবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রণীত নীতি-পরিকল্পনা ও দুর্নীতির সুযোগ চলমান রেখে এবং গতানুগতিক ধারার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কোনোভাবেই সমতা ও ন্যায্যতা-ভিত্তিক জলবায়ু সহনীয়তা অর্জন করা যাবে না।

সুশীলনের উপনির্বাহী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন ফারুক বলেন, গণতন্ত্রায়ণের অগ্রযাত্রায় সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে, ইতোমধ্যে প্রণীত জলবায়ু নীতি-পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কার প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক উদ্যোগের গবেষক ফারহান হোসেন জয়, প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের ক্লাইমেট অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স বিষয়ক থিমেটিক লিড তামান্না রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উপ-ব্যবস্থাপক আহসানুল ওয়াহেদ প্রমুখ।
 

আরএস

×