ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

বাতিল হচ্ছে বই ছাপার দরপত্র

​​​​​​​আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাতিল হচ্ছে বই  ছাপার দরপত্র

.

বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে ওঠে নতুন বই। এর জন্য অন্তত মাস আগেই কাজ শুরু করে জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন, ক্রয় কমিটির অনুমোদনে প্রায় দুই মাস প্রয়োজন হয় সংস্থাটির। এরপর শুরু হয় বই ছাপার কাজ। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি পা-ুলিপি। শিক্ষাক্রমেও আসছে পরিবর্তন। এনসিটিবি ইতোমধ্যে প্রাথমিক মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপানোর অর্ধেক দরপত্র সম্পন্ন করেছে। যা বাতিল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যের বই শিক্ষার্থীদের হাতে উঠবে কী-না তাতে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান . একেএম রিয়াজুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, বই ছাপানোর বাধ্যবাধকতা সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আমি শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়কে অবহিত করেছি। তিনিও বিষয়গুলো দেখবেন বলে জানিয়েছেন। সপ্তাহে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এনসিটিবির নিয়ম অনুযায়ী কোনো দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বানের জন্য অন্তত ২১ দিন সময় লাগে। এরপর দরপত্র মূল্যায়নে ব্যয় হয় আরও ২০ দিন। ক্রয় কমিটির যাচাই-বাছাই ছাড় করতে লাগে অন্তত ১৫-২০ দিন। কাজের অনুমোদন মেলার পর আরও ২৮ দিন সময় ব্যয় হয়।

একাধিক পুস্তক ব্যবসায়ী জনকণ্ঠকে জানান, বইয়ের দরপত্র মূল্যায়ন কাগজের ফর্মা অনুযায়ী হয়। কাজ শেষে টাকাও নির্ধারণ হয় ফর্মা আকারে। সেক্ষেত্রে কারিকুলামে পরিবর্তন বা নতুন কিছু সংযোজন বিয়োজন হলেও কাজের অসুবিধা নেই। কিন্তু দরপত্র বাতিল করা মানে বইয়ের কাজ শুরু করতে অন্তত মাস পিছিয়ে যাওয়া। সে কারণে বইয়ের দরপত্র বাতিল না করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এনসিটিবি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা পরিকল্পনা উপদেষ্টা . ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এনসিটিবি ভবন পরিদর্শন করেন। সে সময় এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে সম্প্রতি কারিকুলাম সংশোধন সংক্রান্ত যে পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করেছে সেটি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, শিক্ষাক্রম সংশোধনসহ দরপত্র বাতিলের বিষয়ে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্রে জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের অনেককিছু বাদ দিয়ে আবারও মাধ্যমিকে বিভাগ (বিজ্ঞান, বাণিজ্য মানবিক) চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থী আগামী বছর নবম শ্রেণিতে উঠবে, তারা পুরনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শাখা গুচ্ছভিত্তিক পরিমার্জিত পাঠ্যবই (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) পাবে। তারা আগের মতো নবম দশম মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যসূচি শেষ করে ২০২৭ সালে এসএসসি সমমানের পরীক্ষা দেবে।

বিষয়ে বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২-এর বিষয়ে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা তথা অংশীজনদের অভিমত, গবেষণা জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা, নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব নানাবিধ বাস্তব সমস্যা বিদ্যমান থাকায় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে ধারণা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর সাইদুর রহমান জানান, সরকার পতনের আগে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য মূল কাজের অর্ধেক টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও অর্ধেক। এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে প্রাক-প্রাথমিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বইসহ চতুর্থ পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের কাজ। মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ, সপ্তম অষ্টম শ্রেণির বইয়ের দরপত্র শেষ হলেও বাকি আছে নবম দশম শ্রেণির দরপত্র। নতুন করে বিভাগ বিভাজন হওয়ায় আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাহিদাপত্র দিয়েছি। বইয়ের কাজ যে চলমান সেটি তিনি দাবি করেন।

বই ছাপানোর সঙ্গে জড়িতরা জানান, নতুন নিয়মে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম চালু হলে প্রতি ক্লাসে বইয়ের সংখ্যা বাড়বে। কোনো ক্ষেত্রে ক্লাসপ্রতি ১৮-২০টি বই ছাপাতে লাগবে। এরফলে বইয়ের ফর্মার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে এবং ছাপাতেও সময় বেশি লাগবে।

জানা যায়, প্রতি বছরের মতো ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৩৫ কোটি বিনামূল্যের বই ছাপাবে সরকার। দরপত্র ছাড়াও এখনো চূড়ান্ত হয়নি পা-ুলিপি। গত আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিপাকে পড়ে যায় সরকারি সংস্থাগুলো। ওইদিনের পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এনসিটিবির চেয়ারম্যানকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, আমার অভিজ্ঞতা, দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন মেশিন ক্যাপাসিটির আলোকে বলছি নবম-দশম শ্রেণির যে বই তা কোনোক্রমেই মার্চের আগে দেওয়া সম্ভব হবে না। ছাড়া কারিকুলামে যে সংশোধন আছে, তা যত দ্রুত করতে পারবে তা আমাদের জন্য কল্যাণকর, এনসিটিবির জন্যও কল্যাণকর। ছাড়াও বইয়ের পাল্প থেকে কাগজের সমস্যা না থাকলেও সব কাজ একসঙ্গে শুরু হলে কাজে ধীরগতি জটিলতা বাড়বে।

এদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের পর জানিয়েছিলেন, আগামী বছরের বই দৃষ্টিনন্দন হবে। জানুয়ারি মাসে সব পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। এবারের বইগুলো দেখতে দৃষ্টিনন্দন হবে, কাগজ ভালো হবে। এক্ষেত্রে কোনো আর্থিক অনিয়ম হবে না। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। এবার আমাদের হাতে সময় খুব কম। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।

×