ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

দ্রুত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ 

তপন বিশ্বাস

প্রকাশিত: ২৩:১১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দ্রুত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার তাঁর কার্যালয়ে সচিব সভায় সভাপতিত্ব করেন

দুর্নীতিমুক্ত, জনবান্ধব এবং গতিশীল প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সকল ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে মানুষের সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও গতিশীল করাসহ ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় বেলা ৩টায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে ৬৮ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব অংশ নেন। সচিব সভায় মন্ত্রিপলিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ মোট ৮ জন সচিব বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা সরকারকে সর্বিক সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে কাজের কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভাগ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। দ্রুত পুলিশকে সক্রিয় করে মাঠে নামানো হবে। পুলিশকে জনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা কাজ করছি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন দেশের সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি জানান, প্রায় ২০ লাখ টান খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। সরকারের মজু স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। বিগত মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া সভায় কথা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শিক্ষা, জ্বালানি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রমুখ।

সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা সচিবদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সরকারের চালিকাশক্তি। দেশের উন্নয়নে আপনারাই বেশি ভূমিকা রাখবেন। দুর্নীতিকে কোনো অবস্থায় প্রশ্রয় দেবেন না। কেউ দুর্নীতি করলে ছাড়বেন না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবেন। কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। আমরা একটি টিম হয়ে দেশ পরিচালনা করব। যার যার মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব তার। 
তিনি বলেন, আগের দিনের ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কাজ করতে হবে। গোটা বিশ্ব আধুনিক হয়েছে। আমাদেরও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। গঠনমূলক চিন্তা করতে হবে। প্রশাসনের সর্বস্তরকে জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। মানুষের সেন্টিমেন্ট বুঝে কাজ করতে হবে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। কি করলে জনগণের ভালো হবে, কিসে সুফল হবে তা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রশাসনকে স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও গতিশীল হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সচিবদের বলেন, স্বাধীনভাবে নবউদ্যমে অধিক্ষেত্রে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারও কোনো কথায় কান না দিয়ে বিবেকের ওপর আস্থা বিশ^াস রেখে সততার সঙ্গে সরকারি দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হবে। সরকারের সব কাজ হবে মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে এবং জনস্বার্থে। চাহিদা অনুসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। 
অধিক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যায় পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার করুন। স্বাধীনভাবে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধাগুলো কি তা ঠিক করুন। সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো আইনগত বাধা থাকলে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিন। স্বাধীন মনোভাব নিয়ে নির্মোহভাবে দায়িত্বপালন করুন। কোনো ধরনের হীনমন্যতায় ভুগবেন না।

সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়নে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত গ্রহণ করতে হবে। যে কাজের বিষয়ে যিনি অভিজ্ঞ তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সৃষ্টিশীল ও নাগরিক-বান্ধব মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচির সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা দাখিল করবে, যা নিয়মিত মূল্যায়ন বা পরিবীক্ষণ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতি সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। সরকারি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। সুবিধা না দিলে সেবা মেলে না। এসব আর চলবে না। সরকারি অফিস হবে মানুষের ভরসাস্থল। সেখানে উল্টো জনগণকে তুচ্ছজ্ঞান করা হয়। উপদেষ্টা আরও বলেন, আপনাদের সবাইকে কাজের, স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা এবং ভাবনার সুযোগ দেওয়া হলো।

নিজেদের মতো করে ভেবে চিন্তে জনস্বার্থ এবং মানুষের অধিকার সমুন্নত রেখে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করুন। কেউ বাধা দিতে এলে পাত্তা দেবেন না। এত সব স্বাধীনতা দেওয়ার পরও যদি কেউ ফেল করেন কিংবা ব্যর্থ হন, তা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সেবা সহজ করার মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কেনাকাটায় যথার্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বৃটিশ ও পাকিস্তান শাসনামল এবং বাংলাদেশের আমলের দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে গেল; অথচ আমরা এখনো সেই ব্রিটিশ আমলের চিন্তা এবং ধ্যান-ধারণা নিয়েই পড়ে আছি। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সচিবদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তা-ভাবনা থেকে বেরিয়ে চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিাতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রেখে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর, বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে। কথায় নয়, জনগণ এখন কাজে বিশ^াস করেন। কাজের মাধ্যমে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে সরকার তাদের স্বার্থে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জনগণের কাজে গভীর মনোযোগী হতে হবে- জনগণ যাতে অতীত এবং বর্তমান সরকারের কাজের পার্থক্যটা অনুধাবন করেন। এ পার্থক্য তো তাদের সেবা দিয়ে বোঝাতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, যে ভয়হীন চিত্ত উপহার দিয়েছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আগ্রহ, ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে হবে।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সচিব সভায় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার বিষয়ে বলা হয়, সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ‘মার্চিং অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়নে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত নিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, যে ভয়হীন চিত্ত আমাদের উপহার দিয়েছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তা-ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে, চিন্তার সংস্কার করে, সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে, সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি ক্রয়ে যথার্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, সৃষ্টিশীল, নাগরিকবান্ধব মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচির সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা দাখিল করবে, যা নিয়মিত মূল্যায়ন/পরিবীক্ষণ করা হবে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আগ্রহ, ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে হবে।

×