ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করলো বাস মালিক নেতারা

প্রকাশিত: ২০:২৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করলো বাস মালিক নেতারা

জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাস মালিক নেতারা

সড়কে বিশৃঙ্খলার ৮০ ভাগের জন্য দায়ী সরকার ও প্রশাসন বলে অভিযোগ করেছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা।

মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা। চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ যাত্রীবান্ধব ও সুশৃঙ্খল সডক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা নতুন আহ্বায়ক কমিটির কনভেনর সাইফুল আলম। 

বক্তব্য রাখেন-এম এ বাতেন, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র, রফিকুল ইসলাম কাজল, ডিটিসিএ কর্মকর্তা দ্রুব,  বুয়েট শিক্ষাথী দাইয়ান নাফিস প্রধান, মুনতাকিম ইসলাম ও নিরাপদ সড়কে তানজীদ। আলোচনার শুরুতে তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

সভায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, পরিবহন সেক্টরে অনেক সমস্যা আছে। তবে সমস্যাটা বেশিরভাগই কাঠামোগত। ৮০ ভাগ সমস্যা সরকার ও প্রশাসনের জন্য হয়ে থাকে। এখানে বাস মালিকদের সমস্যা মাত্র ২০ ভাগ হতে পারে। এই সমস্যা সমাধান করতে হবে এবং এই সমস্যার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ গাড়ি রয়েছে সেই পরিমাণ ড্রাইভার নেই। এদেশে হেলপারদেরও কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয় না। 

এদেশে ফিটনেস নিয়ে একটা বড ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে। কোথায় গাড়ি থামবে সেটা এখনো নির্ধারিত নয। চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সমিতির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম বলেন, বাস প্রতি কমিউনিটি ট্রাফিকের নামে ১০ টাকা, টার্মিনাল ও অন্যান্য চার্জ ২০ টাকা। এছাড়া মালিক সমিতি নিতো ৩০ টাকা করে। আমার জানামতে এই টাকাটা বৈধভাবেই নেওয়া হতো। এর বাইরে কোনো টাকা চাঁদা নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা চাই চাঁদামুক্ত একটি পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এই চাঁদাগুলো নেওয়া বন্ধ করেছি।

তিনি বলেন-বিশৃঙ্খলা শুধু বাস মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলেন, একই সড়কের যন্ত্র চালিত যানবাহন এবং অযন্ত্র চালিত যানবাহন চলাচল সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে এতে দুর্ঘটনার প্রবণতা বহুল অংশে বাড়ে। এছাড়া অবৈধ যেসব যানবাহন রয়েছে সেগুলো সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া হাঁটার জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে ও বাস স্টপেজ নিশ্চিত করতে হবে।

গুণমান না থাকলেও ভারতীয় বাস বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে জানিয়ে রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, সরকারের নীতিমালার কারণে আমাদের ভারতীয় বাস কিনতে হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় বাসের কোয়ালিটি এত ভালো নয়। যেহেতু পলিসির কারণে দাম অনেক বেশি থাকে, তাই আমরা অন্য দেশ থেকে গাড়ি কিনতে পারি না। কারণ বেশি দামে গাড়ি কিনলে সেটা ভাড়া ওপর ইম্প্যাক্ট করবে। সহজে গাড়ি কেনার পলিসি সরকারকে তৈরি করতে হবে। আমাদের সাবসিডি দরকার রয়েছে। সেটা সরকারি নির্ধারণ করবে কী পরিমাণ সাবসিডি আমরা পাব এই সেক্টরে।

তিনি বলেন, লাইসেন্স নিয়ে ও এক ধরনের ব্যবসা তৈরি হচ্ছে। তাই চালকরা লাইসেন্স নিতে এখন ভয় পায়। চালকের জন্য কোনো ট্রেনিং সেন্টার নেই। এটা সরকারকে অবশ্যই তৈরি করা উচিত। দরকার হলে সিমুলেশন সিস্টেম ডেভেলপ করে চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

উন্মুক্ত আলোচনায় বুয়েট শিক্ষার্থী দাইয়াম বলেন, ৫ আগষ্টের পর রাজধানীতে পরিবহণ ট্রাফিক শৃংখলায় শিক্ষার্থীরা এককভাবে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে দায়িত্ব পালন করেন। তখন দেখা গেছে – চলাচলকারী বাসে মধ্যে সাড়ে তিনহাজারের ফিটনেস নেই। অথচ এগুলোকে চাইলেই একদিনে  প্রত্যাহার করা গেলে রাজধানীতে দুর্ভোগ নেমে আসবে। এ অবস্থায় পর্যায়ক্রমে এগুলো সরিয়ে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে’। পরিবহণে চাদাবাজি দূর করা গেলে সড়কে নিরাপত্তা ও শৃখলা অনেকটাই নিয়ন্থণে আসবে। 

মতবিনিময় সভা থেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ৬টি কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে -
 
১. ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃত্বে যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধ ও যাত্রীবান্ধব পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা।

২. যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ সড়ক গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের, শিশু ও প্রতিবন্ধী ও বয়োজ্যেষ্ঠ যাত্রীদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়া।

৩. সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য মালিক।

৪.শ্রমিক ও প্রশাসনের সহযোগিতায় চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

৫. মালিক-শ্রমিক-পুলিশ প্রশাসন সর্বোপরি ছাত্র-জনতাকে সম্পৃক্ত করে যাত্রী জনকল্যাণমুখী নিরাপদ সড়ক গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সব টার্মিনালে চালক-শ্রমিকদের নিয়মিত কাউন্সেলিং/মোটিভেশন সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া।

৬. ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কমিউনিটি ট্রাফিক নিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন টার্মিনাল সম্মুখসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সব প্রকার চাঁদা সম্পূর্ণরূপে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 

আজাদ//শহিদ

×