ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

ডিজেল ১.২৫ টাকা পেট্রোল-অকটেনে কমেছে ৬ টাকা

দাম কমল জ্বালানি তেলের

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৩১ আগস্ট ২০২৪

দাম কমল জ্বালানি তেলের

দাম কমেছে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের

দেশের বাজারে জ্বালানি তেল অর্থাৎ ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম কমানো হয়েছে। যা শনিবার রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়েছে। শনিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমানো হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। 
দাম কমানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলার আলোকে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ধারাবাহিকতায় ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের বর্তমান বিক্রয়মূল্য লিটারপ্রতি ১০৬ দশমিক ৭৫ টাকা থেকে ১ দশমিক ২৫ টাকা কমিয়ে ডিজেল ১০৫ দশমিক ৫০ টাকা ও কেরোসিন ১০৫ দশমিক ৫০ টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে পেট্রোলের বর্তমান মূল্য ১২৭ টাকা থেকে ছয় টাকা কমিয়ে ১২১ টাকা এবং অকটেনের মূল্য ১৩১ টাকা থেকে ছয় টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করা হয়েছে।
এদিন খুলনার খালিশপুরে নির্মাণাধীন রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প পরিদর্শনের আগে জ্বালানির দাম কমানোর বিষয়ে কথা বলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ডিজেলের দাম ১০৬.৭৫ টাকা থেকে ১.২৫ টাকা কমিয়ে ১০৫.২৫ টাকা, অকটেনের দাম ১৩১ টাকা থেকে ৬ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১২৭ টাকা থেকে ৬ টাকা কমিয়ে ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে ডিজেলের দাম ১ টাকা ২৫ পয়সা কমাতেই সরকারের জান বের হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে আমাদের এখানে যে জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়, তার বেশিরভাগ হচ্ছে ডিজেল। ডিজেলচালিত বাহন হচ্ছে বেশি। তারপর হচ্ছে অকটেন, এরপর পেট্রোল। আপনারা বলতে পারেন যে অকটেন-পেট্রোল এগুলো বড়লোকেরা ব্যবহার করে।

ওদেরটা ৬ টাকা কমালেন? এর কারণ হচ্ছে কী, এদের পরিমাণটা খুব কম। এটা কমালে এটার ইমপ্যাক্টটা কম হয়। ওখানে (ডিজেল) এক টাকা ২৫ পয়সা কমাতে আমাদের জান বের হয়ে গেছে। আমরা আরও চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে যদি জ্বালানির মূল্য স্থিতিশীল থাকে, আমরা দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকিউরমেন্ট প্রাইস নির্ধারণ করব, এখন তো একটা প্রকিউরমেন্ট প্রাইস আছে, সেটা তো আমি পরিবর্তন করতে পারব না। একটা কনট্রাক্ট আছে। সেটার জন্য এতটুকু করেছি। ভবিষ্যতে আমাদের চেষ্টা থাকবে, যাতে এটা আরও কমাতে পারি। কষ্ট হয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের মূল্য আরও কমাতে পারি। 
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, অনিয়মের মহোৎসব হয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ লোপাট হয়েছে, যা খুঁজে বের করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জ্বালানি বিভাগের কোনো মানুষ এখানে থাকবে না। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
ফাওজুল কবির খান বলেন, স্বজনপ্রীতি ও কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে অপ্রয়োজনে বেসরকারি খাতে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে ভর্তুকির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে। এক প্রশ্নে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নতুন বাংলাদেশ, এখানে সবার জন্য সমান সুযোগ।

এখন আর আগে থেকে ঠিক করা থাকবে না, ওকে প্রজেক্টটা দেব এবং সে অনুযায়ী সাজানো হবে। সেই দিন শেষ। এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। এখন যার যোগ্যতা আছে, সবচেয়ে কম দামে সবচেয়ে ভালো কিছু দিতে পারবে, তারা কাজ করবে। আমরা আর অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেব না।’
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, বিদ্যুৎ কোম্পানিকে টাকাও দিতে পারি না, আবার বিদেশী হলে ডলার দিতে পারি না। গ্যাস আমদানির জন্য ডলার দিতে পারছি না। একটা বিতিকিচ্ছি অবস্থার মধ্যে আমরা পড়েছি। বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার জন্য কিন্তু বিদ্যুতের ট্যারিফ বারবার বাড়ানো হয়েছে। হেনতেন চার্জ যোগ হয়েছে। তবে সংকট যেমন আছে, সমাধানও তেমনই আছে। আমরা চেষ্টা করছি, অনিয়মের যে আর্কিটেকচার, এটা ভেঙে দিয়েছি। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে পুনর্গঠন করছি।’
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘দুর্নীতি সবসময় মাথা থেকে শুরু হয়। বর্তমান সরকারের প্রধানসহ অন্য উপদেষ্টারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমরা নিজেরাই দৃষ্টান্ত হব। কাজেই আমরা দুর্নীতির ঊর্ধ্বে। আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন নেই, মামা, চাচা, ভাতিজা নেই, সরকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের কেউ নেই। আমাদের আত্মীয়স্বজন আছে, তবে তারা আমাদের বাসায়। আমরা আশা করি, এ দৃষ্টান্ত উপদেষ্টারা স্থাপন করব। আমরা চাই, আমাদের দেখে দেখে সচিবেরা এবং তা দেখে দেখে সংস্থার প্রধানেরা দৃষ্টান্ত গ্রহণ করবেন। মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে আছে, তা যেন পূরণ হয়। তা না হলে সবার জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। আমরা প্রত্যাশা পূরণ না করতে পারলে আমাদেরও কিন্তু মানুষ ছাড় দেবে না।’
খুলনার বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা শুধু শুনে আসছি, আমাদের জিডিপি বাড়ছে। আমরা নি¤œ আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। এখন দেখা যাচ্ছে, এটা উন্নয়নের ভ্রান্তি। এই পাওয়ার প্ল্যান্ট হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকায়। এটাও জিডিপি বাড়িয়েছে। কিন্তু এই পাওয়ার প্ল্যান্ট তো শীঘ্রই কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

এই প্রকল্পটা কী হওয়া উচিত ছিল? আমরা আগে থেকেই জানি, এখানে গ্যাস আসা কঠিন। তাহলে কার স্বার্থে এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলো। কার স্বার্থে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হলো, কিন্তু মানুষ তো কোনো উপকার পাচ্ছে না। নির্মাণের আগে এটা বন্ধ করা যেত। এখানে তো আমরা ১৬ থেকে ১৭ মেগাওয়াটের সোলার প্ল্যান্ট করতে পারতাম। এই প্ল্যান্ট চালাতে এখন বিভিন্ন অপশন খুঁজতে হবে। পারশিয়ালি চালানো যায় কি না, পরীক্ষা করা হবে। এ জাতীয় উন্নয়নের চেয়ে না হওয়াই ভালো ছিল।’ 
এর আগে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। 
প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত যানবাহনে অধিক পরিমাণে ব্যবহার হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সবসময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রোলের দাম বেশি রাখা হয়।

×