ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

বন্যা এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন লাখো গ্রাহক

প্রকাশিত: ২০:১৫, ২৪ আগস্ট ২০২৪

বন্যা এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন লাখো গ্রাহক

বন্যায় বিপর্যস্ত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। উজানের ঢলে এই আকস্মিক বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বেশ কয়েকটি জায়গায় এখনো বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। শুধু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায়ই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন অবস্থায় রয়েছেন ১০ লাখ গ্রাহক। 

অনেক এলাকায় এখনো ঠিক হয় নি মোবাইলের টাওয়ার। ফলে এসব এলাকায় যোগাযোগে হচ্ছে সমস্যা। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেটের কয়েকটি জায়গার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। 

শনিবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেয়া তথ্য মতে, বন্যা আক্রান্ত এলাকার মোট ১০ লাখ ৯৭ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ১ লাখ ৭৩ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির। ওই সমিতির সবগুলো (১৭টি) উপকেন্দ্র এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে বন্ধ ছিলো। ১০৭টি গ্রিড লাইনের মধ্যে মাত্র ১টি সচল রয়েছে, যার মাধ্যমে মাত্র ৫০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রয়েছে। ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৪৬ জন গ্রাহক রয়েছে। পরিবার প্রতি ৪ জন করে ধরা হলেও প্রায় ৪০ লাখ লোক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত এর আওতাধীন ১৬৩ টি উপকেন্দ্রের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১৭টি উপকেন্দ্র। ৯০৫টি ১১ কেভি ফিডারের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১৬০ টি ফিডার। আর এসব এলাকার মোট ৪৯ লাখ ৭১ হাজার ৩২১ জন গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন অবস্থায় রয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ২৬৬ জন গ্রাহক। 

অন্যদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র আওতাধীন এলাকার মোট ৪৩ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

বন্যাকবলি এলাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এদিন বন্যা আক্রান্ত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বন্যার পানি  নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হবে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাওয়া তথ্যমতে ফেনীর পর বেশি ক্ষতি শিকার হয়েছে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির, ওই সমিতির কিছু লাইন ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে। ২৪ আগস্ট বিকেল পর্যন্ত ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। বন্যায় এসব এলাকার ২ লাখ ৫৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

এছাড়া কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ১ লাখ ৩২ হাজার গ্রাহক, চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ৭০ হাজার গ্রাহক, চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ লক্ষীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪, চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার সমিতির কিছু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একই সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর ৭১৯টি খুটি, ৩২৮ ট্রান্সফরমার ও ৭ হাজার ৪৯৯টি মিটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অতীত রেকর্ড থেকে দেখা গেছে যাদের মিটার ক্ষতিগ্রস্থ তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বেশ বেগ পেতে হয়। ওই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হলে বেশ সময় লাগতে পারে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, বন্যা কমে গেলে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল ও জনবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফেনী সমিতির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা সম্ভব হয়নি, অন্যদের প্রায় ৮ কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে জানা গেছে।

একই দিন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নোয়াখালীতে বন্যাপ্লাবিত জেলাগুলোর ১ হাজার ১৫১টি টাওয়ারের মধ্যে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে অচল ছিলো ১৭০টি টাওয়ার। একই রকমভাবে লক্ষ্মীপুরের ৭০১ টি টাওয়ারের মধ্যে ২৭টি, ফেনীর ৬৫৩টি টাওয়ারের মধ্যে ৫৯৮টি, কুমিল্লার ২ হাজার ৫২৯টি টাওয়ারের মধ্যে ২৬২টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১০৬৫টি টাওয়ারের মধ্যে ১৪টি, চট্টগ্রামের ৪ হাজার ২৫৮টি টাওয়ারের মধ্যে ৮৪টি, খাগড়াছড়ির ২৩০টি টাওয়ারের মধ্যে ৬০ টি, হবিগঞ্জের ৭৩৬টি টাওয়ারের মধ্যে ৫টি, মৌলভীবাজারের ৬৪৮টি টাওয়ারের মধ্যে ৩৫টি এবং সিলেটের ১ হাজার ৫২০টি টাওয়ারের মধ্যে ৮টি সাইট অচল রয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যা কবলিত ১০ জেলার মোট ১৩ হাজার ৪৯১টি টাওয়ারের মধ্যে এখনো অচল রয়েছে ১ হাজার ২৬৩টি টাওয়ার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম-ফেনী অংশের সড়কের উপর তীব্র পানির চাপের কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তাই কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছানো এবং নেটওয়ার্ক পুনঃস্থাপনের কার্যক্রম ভালো করে শুরু করা যাচ্ছে না জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, বন্যার কারণে পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি উপরে থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। 

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় নেটওয়ার্ক পুনস্থাপন কাজ বিঘিœত হচ্ছে। শুধু তাই নয় বন্যাকবলিত এলাকায় অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মোবাইল অপারেটর ও টাওয়ারকো অপারেটরদের জন্য প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল জনবল, নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম, জেনারেটর ও জ্বালানি সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নৌযান ও স্পিডবোট দিয়ে সহযোগিতা করা হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানানো হয়।

 

স্বপ্না/ এসআর

×