ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫ লাখ মানুষ

লাখ লাখ লোক পানিবন্দি

​​​​​​​জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৩ আগস্ট ২০২৪; আপডেট: ২৩:০০, ২৩ আগস্ট ২০২৪

লাখ লাখ লোক পানিবন্দি

বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে

টানা প্রবল বর্ষণ ও উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের ১১ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা  প্রায় ৪৫ লাখ। পানিবন্দি বয়েছে প্রায় ৯ লাখ পরিবার। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ জন। ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে মানবতা। ডুবে গেছে অধিকাংশ এলাকা। বিলীন হয়ে গেছে বেঁচে থাকার সর্বশেষ অবলম্বন। এখন শুধুই বাঁচার আকুতি। বন্যার্ত এসব এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। সরকারি-বেসরকারিভাবে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংস্থা এবং সংগঠন। দুর্গত মানুষকে উদ্ধারের পাশাপাশি পৌঁছে দিচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করছেন।

বন্যাকবলিত জেলা কুমিল্লায় গোমতীর বাঁধ ভেঙে সাত উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কয়েক লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। হোমনায় ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, কমতে শুরু করেছে হাওড়া নদীর পানি। চাঁদপুরে টানা বর্ষণে মৎস্য খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি কমতে শুরু করায় জনমনে স্বস্তি ফিরছে। মৌলভীবাজারের তিন শতাধিক গ্রামের চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বন্যার পানিতে ডুবে শিশু ও কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বাগেরহাটে বিপৎসীমার ওপরে নদীর পানি। তিস্তাপাড়ে আপাতত বন্যার শঙ্কা নেই। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।

শুক্রবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান জানান, বন্যাক্রান্ত জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। বন্যায় ইতোমধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কক্সবাজারে তিন, চট্টগ্রামে দুই, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন করে মারা গেছেন।

কুমিল্লায় খরস্রোতা গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত সাতটি উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ও একটি উপজেলা খরস্রোতা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার রেকর্ড সংখ্যক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উচ্চ পানিপ্রবাহের ফলে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে হু হু করে রাতের মধ্যেই পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। মুহূর্তেই তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম।

শুক্রবার সকালে ভেঙে পড়া বাঁধ এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাঁধের অন্তত ২০০-২৫০ ফুট অংশ পুরো ধসে গেছে। ধসেপড়া বাঁধ দিয়ে অবিরত পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। পানির এমন প্রবাহের ফলে জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলাসহ ৭ উপজেলার অন্তত দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয় এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলাও প্লাবনের শিকার হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ লোক।

বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আতঙ্কিত মানুষজন বেড়িবাঁধের ভাঙন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সড়কের ওপর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেন। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিলেও আটকে পড়া বেশ সংখ্যক মানুষ খোলা আকাশের নিচে কোনো রকমে জীবন নিয়ে ফেরেন।

শুক্রবার সকালে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে তাদের বাড়িঘর, ফসলি জমি, পুকুরের মাছ, গোয়ালের গরুসহ সহায় সম্পদ। সর্বস্ব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। অপরদিকে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি মানুষ অভিযোগ করে বলেছেন, গতকাল রাত থেকে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিলেও এখন পর্যন্ত তাদের কেউ দেখতেও আসেনি। কোনো খাদ্য সহায়তা তো দূরের কথা।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, খোলা আকাশের নিচে কারও আশ্রয় নেওয়ার কথা নয়। আমরা সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বলেছিলাম। তবুও যারা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দেওয়া হবে।

অপরদিকে গোমতীর বাঁধ ভাঙার খবরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্পিডবোট ও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এসেছেন এসব এলাকায়। তারা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করতে দেখা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ফুটের মতো বাঁধ ভেঙে গেছে, পানি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ ভাঙার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। গোমতীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপরে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ছিল ১৩৪ সেন্টিমিটার উপরে, শুক্রবার সকাল ৬টায় কমে গিয়ে বিপৎসীমার ১২৯ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। এখন আরও অনেক কম। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল শুক্রবার দিনভর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদ-নদী ও গ্রামগঞ্জে খালবিলসহ রাস্তাঘাটের পানি নামতে শুরু করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম বাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকা বৃহস্পতিবার পানিতে তলিয়ে গেলেও শুক্রবার পানি নেমে যাওয়ায় অন্তত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম অভিমুখে চৌদ্দগ্রামের শেষ সীমানা পর্যন্ত শুক্রবার যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মহাসড়কের চট্টগ্রাম অভিমুখে শত শত মালবাহী কন্টেনার চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, মিয়া বাজার, চৌদ্দগ্রাম, শুয়াগাজীসহ বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদিকে ভয়াবহ বন্যার ফলে গ্রামীণ হাটবাজারে শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এ ছাড়া বেড়েছে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটসহ শুকনো খাবারের দামও।

লাকসামে টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে লাকসাম উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানাতে পারেনি। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানির নিচে ডুবে গেছে। পুকুর ও জলাশয় ভেসে গেছে। পাকা আমন, রোপা আমন, বীজতলা ও শাকসবজি তলিয়ে গেছে। উপজেলার মোট ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৪ হাজার বানভাসি আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে খাবার ও অন্যান্য সাহায্য অব্যাহত রয়েছে।

অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে হোমনা উপজেলার ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পানির স্রোতে ইতোমধ্যে উপজেলার আলমপুর, শিবপুর, মনাইরকান্দি, ডহরগোপ, তাতুয়াকান্দিসহ ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানা যায়, তিনদিন টানা ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢলে হু হু করে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার থেকে নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলার আলীরচর বেড়িবাঁধ। যে কোনো সময় এ বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। বাঁধ ভেঙে গেলে পুরো উপজেলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ আখাউড়ায় হাওড়া নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমেছে। ফলে আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান।

তিনি জানান, হাওড়া নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমেছে। এখন পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। উজানে বৃষ্টিপাত কমতে থাকায় পানি কমে আসছে। কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরও কমবে। ভারতে বিপৎসীমার নিচে পানি নেমে আসায় আমাদের জন্যে এটা একটা সুখবর।

এদিকে পানি কমে আসলেও বন্যাকবলিত হয়েছে ৫ হাজার মানুষ। অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্কুলের ভবনে। উঁচু সড়ক থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা রয়েছে বাড়িঘরে।

কসবায় সালদা নদীর পানি বাড়তে থাকায় কসবায় কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ আটকে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আরও একটি সেতু আংশিক ধসে গেছে। ফলে আখাউড়ার সঙ্গে কসবা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে আরও একটি সেতু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেননা ওই দুটি সেতু গ্রামটির প্রবেশ ও বাহির মুখে অবস্থিত। সেতু দুটির পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি মাটি থেকে সরে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

চাঁদপুর ॥ কয়েক দিনের টানা বর্ষণে কচুয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার উপজেলার আশ্রাফপুর, গোহট উত্তর, গোহট দক্ষিণ, কচুয়া সদর, কচুয়া উত্তর, বিতরার ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে টানা বর্ষণে আউশ ধান, রোপা আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে পাকা আউশ ধান ও এবং আমন ধানের বীজতলা এবং শাকসবজির জমি পানিতে ডুবে গেছে। দ্রুত পানি কমে না গেলে সব ধরনের ফসল ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মেজবাহ উদ্দিন জানান, অতিবর্ষণে পাকা আউশ ধানের আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৫১৪ হেক্টর, আমান ধানের বীজতলা ৩৮০ হেক্টর ও শাকসবজি জমির পরিমাণ ১৭২ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে পরবর্তীতে প্রণোদনার সময় এ সব কৃষকের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এ ছাড়া কচুয়ায় মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে টানা বর্ষণে অধিকাংশ মৎস্য খামারের পাড় ভেঙে বাইরের পানি প্রবেশ করেছে। এতে মৎস্য খামার, জমি ও খাল-বিল একাকার হয়ে খাল বিলে খামারের মাছ ঢুকে পড়েছে।

উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, অতিবর্ষণে কচুয়া উপজেলায় ১ হাজার ৭৫০টি পুকুর বা খামারের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এতে খামারিদের আনুমানিক ৮৭.৫০ লাখ টাকার বড় মাছ ও ২৭.৫০ লাখ টাকার পোনা মাছের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

হবিগঞ্জ ॥ খোয়াই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় বাল্লা সীমান্তে ১৯৯, শায়েস্তাগঞ্জে ১৫৩ ও হবিগঞ্জে ১৬৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এদিকে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছায় পাহারা ও বালিভর্তি বস্তা দিয়ে নদীর বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন। পানি কমতে শুরু করায় লোকজনের মাঝে স্বস্তি ফিরছে।

একই সঙ্গে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় হবিগঞ্জ সদর, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ২৫ হাজার ৬০৮ জন পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বৃষ্টি কিছুটা কমায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পানিবন্দিদের জন্য প্রস্তুত ছিল ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ৯৬৫ টন চাল, এক হাজার ৫৬০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ২১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা নদীর বাঁধ ও পানিবন্দি লোকজনের পাশে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

উজানের ঢল আর ভারি বর্ষণে হবিগঞ্জে এক হাজার ৯৪৫ হেক্টর বোনা আমনের জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি নামতে বেশি বিলম্ব হলে এসব জমির ধানগাছ পুরোপুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকবে।

আকস্মিক বন্যায় বড় ধাক্কা লেগেছে হবিগঞ্জের রোপা আমনেও। বীজতলায় পানি উঠে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন বিপর্যয়ের হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় এখন পর্যন্ত এক হেক্টর জমিতেও চারা রোপণ করা হয়নি। এর আগেই ৩৮৮ হেক্টর বীজতলা থেকে ৫৭ হেক্টর তলিয়ে গেছে।

জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ বনি আমিন খান বলেন, আউশের ধানগাছে এখন চাল তৈরি হচ্ছে। জমি থেকে পানি নামতে বিলম্ব হলে বড়রকম ক্ষতি হবে। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।

মৌলভীবাজার ॥ শুক্রবার কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার মনু ও ধলাই নদীর ১৩টি স্থানে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। পৃথকভাবে মনু প্রকল্পের দুটি স্থানে ভাঙন দিয়েছে।

অভিরাম ভারি বর্ষণে মৌলভীবাজারের মনু, ফানাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ঢলে এ পর্যন্ত জেলার প্রায় তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চতুর্থ ধাপের এ বন্যায় প্রায় চার লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি অবস্থায় আছে। অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে নৌকা না থাকায় বন্যার্তদের উদ্ধার করতে পারছেন না স্বেচ্ছাসেবীরা।

মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী।

তিনি শহরের মনু নদীর প্রতিরক্ষাবাঁধের ৪টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, মনু ব্যারেজ, চাঁদনীঘাট ব্রিজ, পৌরসভার ওয়ার্কওয়ে, শাহ্বন্দর এলাকা ও রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকার মনু নদীর বাঁধ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন এই সেনা কর্মকর্তা। এ সময় মৌলভীবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলে দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে অতীতের মতো থাকবে। এ সময় তিনি বানের পানিতে আটকে পড়াদের উদ্ধারে ৪টি স্পিডবোড প্রদান করার কথা বলেন। এ ছাড়া ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত সকল বাঁধ মেরামতের আশ^াস দেন।

মনু নদে পানি বেড়ে মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের দুটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়কের বালিয়াকান্দি ও শাহবন্দর এই দুটি স্থানের বাঁধ যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙনের এই ঝুঁকি এড়াতে সড়ক দিয়ে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বন্যার পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়ক-সংলগ্ন মনু নদের শহর রক্ষা বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এমতাবস্থায় বন্যার পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

অপরদিকে রাজনগরের দুটি স্থানে মনু নদির বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের কদমহাটা এবং রাজনগর কলেজ এলাকায় সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এতে মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক দিয়েও সিলেটে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে শিমুলতলা নামক স্থানে সড়ক পানিতে তলিয়ে গেলে মৌলভীবাজার-কমলগঞ্জ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।

এদিকে সরকারিভাবে ৭ উপজেলায় চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩৫ টন। এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলার ৪০ টন, জুড়ী উপজেলায় ৩০ টন, কুলাউড়া উপজেলায় ১৫ টন, রাজনগর উপজেলায় ৩০ টন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৫০ টন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২০ টন, কমলগঞ্জ ৫০ টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়। নগদ অর্থ হিসেবে জেলার ৭ উপজেলায় ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ জানান, আউশ ধানের ক্ষতির পাশাপাশি সদ্য রোপনকৃত ৭ উপজেলায় আমন ধান ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।

মনু ও ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার ৪৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, শুক্রবার দুপুর ৩টায় মৌলভীবাজার শহরের কাছে মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীতে ১১ সে.মি ও জুড়ী নদীতে বিপৎসীমার ১৯৫ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ॥ রাঙ্গুনিয়ায় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম মোহাম্মদ রনি (১৭)। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় দক্ষিণ রাজানগরের বাইস্যা ডেবা এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ফুলবাগিচা গ্রামের জনৈক আবু বক্করের ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালক রনিসহ কয়েকজন কিশোর বিকেল চারটায় বাঁশের ভেলা তৈরি করে গাবতল বাইস্যা ডেবার বিলে নামে। একপর্যায়ে ভেলা নিয়ে বিল পাড়ি দিতে গিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে ভেসে যায় তারা। বন্ধুরা সাঁতার কেটে কূলে ফিরে এলেও রনি নিখোঁজ হয়। রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে নিখোঁজের প্রায় সাত ঘণ্টা পর একইদিন রাত সাড়ে সোয়া ১১টায় একই স্থানে তার লাশ পাওয়া যায়।

বাগেরহাট ॥ উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রায় সকল নদ-নদীতে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নি¤œাঞ্চলের অনেক স্থানে নদ-নদীর পানি রাস্তা উপচে গ্রামে প্রবেশ করছে। ফলে ঘররাড়ি, মৎস্য ঘের তলিয়ে যাচ্ছে। কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের দুবলার চর ও দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র এবং পর্যটনকেন্দ্র করমজল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। তবে বিশাল এ বনের কোনো বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কুমার স্বস্তিক জানান, পূর্ণিমার গোন, অতি বৃষ্টি ও সাগর উত্তাল থাকার কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেড়েছে। জেলার অধিকাংশ নদ-নদীতে বিপৎসীমার ৪ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি কমলে এবং পূর্ণিমার গোন শেষ হলে পানির চাপ কমে যাবে।’

রামপালের গৌরম্ভা ও মোংলার জয়মনিরঘোলের বাসিন্দারা জানান, রাস্তা উপচে নদীর পানি ঢুকে তাদের বাড়িঘর, ফসলে খেতসহ চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। পানি ক্রমশ: বাড়ছে বলে তারা উল্লেখ করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, তিনদিন ধরে সুন্দরবনের ভেতরে পানি বেড়েছে। তলিয়ে গেছে বনসহ করমজল পর্যটন কেন্দ্রের রাস্তাঘাট। তবে অতিরিক্ত পানিতে বনের ও করমজলের বন্যপ্রাণীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি এখনো হয়নি।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব এবং শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় সাগরে জোয়ারের পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সাগর উত্তাল হয়ে আছে। ফলে অস্বাভাবিক জোয়ারে দুবলা, করমজলসহ বনের নি¤œাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও ৩-৪ ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখেই বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জায়গায় উঁচু টিলা তৈরি করা হয়েছে। যাতে বনে পানি বাড়লে বন্যপ্রাণীগুলো উঁচু টিলায় আশ্রয় নিতে পারে। টিলার সুফলে কোনো প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

লালমনিরহাট ॥ ভারতের সিকিমে পাহাড় ধসের কারণে তিস্তা নদীর ওপরে নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি বাঁধ ভেঙে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা বাঁধে পানির চাপ বাড়লেও তিস্তায় শুক্রবার বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। আপাতত তিস্তায় বন্যার শঙ্কা নেই, তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শুক্রবার বিকাল তিনটায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার), তবে গত দুদিনে তিস্তা নদীর ডান তীর লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়া গাছ ইউনিয়নের হরিনচড়া ও চর গোকুন্ডা গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ভাঙন হুমকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে চলে গেছে তিনশ’ বিঘা জমির ধান-সবজিসহ ফসলের খেত। তিস্তা পাড়ে লোকজন ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এসব স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো লোকজনের দেখা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তিস্তা তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে বসবাসরত মানুষের।

জানা যায়, দুদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে তিস্তাপাড়ের হাজারও মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন। উজানের ঢল যে কোনো সময় লালমনিরহাটে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে এমন শঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করছেন তারা। তিস্তাপাড়ের রফিক উদ্দিন জানান, গত দুদিনে তিস্তার পানি একটু একটু করে বাড়ছে। অনেকে বলছেন, ভারতের বাঁধ ভেঙে তিস্তা নদীতে বন্যা শুরু হবে। তাই দুদিন ধরে আতঙ্কে আছি, ফসলি নিয়েও চিন্তায় আছি।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আপাতত সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা জানান, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তিস্তাপাড়ের মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। আপাতত তিস্তার পানি বৃদ্ধি হওয়ার এখন কোনো সম্ভাবনা নাই।

লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, জেলার কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি বৃদ্ধি হলে এ বিষয়ে আমাদের সর্বাধিক প্রস্তুতি রয়েছে।

কক্সবাজার ॥ চকরিয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরও দুজন সাঁতার কেটে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। প্রাণ হারানো কিশোরের নাম মো. হাবিব (১৩)। সে ওই এলাকার মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বরইতলীর পহরচাঁদা বিবিরখিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী ও বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মো. ছালেকুজ্জামান বলেন, ভারি বর্ষণে পাহাড়ি ঢল নামে বরইতলীতে। সোনাইছড়ির ছড়াখাল উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল স্থানীয় সড়কের ওপর দিয়ে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিন শিশু বাড়ি থেকে বের হয়ে পহরচাঁদা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া ঢলের স্রোতে ভেসে যায় তিন শিশু। দুই শিশু সাঁতরে বেঁচে গেলেও হাবিব পানিতে ডুবে যায়।

×