
মাইকেল চাকমা। ছবি: সংগৃহীত
গণঅভ্যুত্থানের প্রবল স্রোতে হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে প্রায় সাড়ে ৫ বছর পর মুক্ত হন ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা। হাসিনার দেশত্যাগের পরদিন, ৬ আগস্ট কথিত ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্ত হন তিনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে তাঁকে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে জানতে পারেন পুত্রশোকে মারা গেছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা। রীতি মেনে তাঁর শেষকৃত্যও করে পরিবার।
আরও পড়ুন : নসরুল হামিদের ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ ভবনে মধ্যরাতে অভিযান
এ যেন কবর থেকে ফিরে আসা। প্রায় ৩ হাজার দিন পর সূর্যের আলো দেখেছেন মাইকেল চাকমা। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টি কেটেছে অন্ধকার ঘরে। ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল রাজধানীর শ্যামলী থেকে ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেলকে তুলে নিয়ে যায় একটি আইনশৃঙ্খলা সংস্থা। প্রায় সাড়ে ৫ বছর রাখা হয় ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালায়।
নির্যাতনে বর্ণনা দিয়ে মাইকেল চাকমা জানান, একটা চ্যাপটা দড়ি দিয়ে আমাকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চেয়ারে সঙ্গে আমাকে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর আমাকে বলা হলো- সত্য কথা বলবে, তোমার অস্ত্র কোথায়? আমি তখন বললাম- আমার কাছে তো কোনো অস্ত্র নাই।
মাইকেল জানান, কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ছিল না। বাড়ি ফিরে পান একের পর এক দুঃসংবাদ।
মুক্ত হয়ে বাড়ির অকস্থা সম্পর্কে মাইকেল চাকমা বলেন, বড় বোন যখন কল করলাম তখন বুঝতে পারলাম আমার বাবা আর বেঁচে নেই। আমি যে ফিরে আসব সেটাও তারা বিশ্বাস করতে পারেনি। এরপর তারা অপেক্ষা করতে করতে আমার শেষকৃত্য করে দেয়।
বন্দিদশার দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় মাইকেলকে। অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি।
নিজের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে মাইকেল চাকমা জানান, চশমাটা চোখ থেকে খুললে আমি কিছুই দেখি না। আমার চোখ অনেক খারাপ হয়ে গেছে। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। একটা শব্দ শুনলে সেই শব্দ থেকে নানা ধরনের শব্দ আমার কানে আসে। ঘুম ভাঙলে আর ঘুম হয় না।
রাজনীতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত না নিলেও আত্মজীবনী লিখতে চান মাইকেল চাকমা।
এসআর