ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১

সংসদ সদস্য আনার হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দিল পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১৯ আগস্ট ২০২৪

সংসদ সদস্য আনার হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দিল পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি

আনোয়ারুল আজীম আনার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় খুন বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় প্রথম অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে রাজ্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১ হাজার ২০০ পাতার ওই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ঝিনাইদহ-৪ (সদর-কালীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তাঁকে খুন করা হয়। তাঁকে শ্বাসরোধে খুন করা হয়। ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এমন তথ্য জানিয়েছিল।

আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার ঘটনার তিন মাসের বেশি সময় পর গত শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি আদালতে অভিযোগপত্র দিল। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ২৩ মে প্রথম জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

কলকাতা পুলিশ সূত্র বলছে, সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রে জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেনের নাম রয়েছে। এ দুজনকে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছিল। তবে কী উদ্দেশ্যে তাঁরা আনোয়ারুল আজীমকে খুন করেছেন, সে ব্যাপারে অভিযোগপত্রে কিছু বলা হয়নি।

তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনকে এখনো ধরা সম্ভব হয়নি। সেই কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উদ্দেশ্য এখনো অজানা। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের একজন জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ। তাঁকে ২৩ মে ও সিয়াম হোসেনকে গত ৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতের নির্দেশে জিহাদকে দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন সিয়াম। জিহাদ ও সিয়ামকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বিভিন্ন সময় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে তল্লাশি চালিয়েছিল। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একাধিক হাড়গোড়। প্রাথমিকভাবে সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হাড়গোড় মানুষের।

জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম পুলিশকে জানিয়েছিল, তিনি পলাতক আখতারুজ্জামানের অধীনে ৬০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। তাঁর নির্দেশেই তিনি জিহাদকে কলকাতা এনে রাজারহাটে ভাড়া ফ্ল্যাটে রেখেছিলেন। আনোয়ারুল আজীমকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র, প্লাস্টিকের চাদর, ব্যাগ-সবকিছুই কলকাতার নিউমার্কেট এলাকা থেকে কিনে আনা হয়েছিল।

সিয়াম পুলিশকে আরও জানান, মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত আসামি ফয়সাল সাজি ও মুস্তাফিজ রহমান মাংস কাটার মেশিন কিনে এনেছিলেন। আজীমকে হত্যার পর তাঁর দেহ থেকে মাংস ও হাড় আলাদা করা হয়। এরপর মাংস কাটার মেশিনে ছোট ছোট টুকরা করা হয়।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্যপ্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা)-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৮ জুন সঞ্জীবা আবাসনের বিইউ-৫৬ ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় চার কেজি মাংস। উদ্ধার করা ওই মাংস মানুষের কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, ওই মাংস মানুষের।

পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি সূত্র জানায়, তবে সেই খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে চান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সেই লক্ষ্যে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন এবং রক্তের সম্পর্ক থাকা অন্য ব্যক্তিদের ডেকে তাদের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলেও জানিয়েছে রাজ্যের সিআইডি। ডোরিনকে কলকাতায় আসার জন্য সিআইডির পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি এখনো কলকাতায় আসতে পারেননি।

 

এম হাসান

×