ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

ড. ইউনূস হচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান!

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ৬ আগস্ট ২০২৪

ড. ইউনূস হচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান!

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সঙ্গে ১২ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখার প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য বঙ্গভবনে যান সেনাপ্রধান, নৌপ্রধান ও বিমান বাহিনীর প্রধান। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে বিশাল এক গাড়ি বহর নিয়ে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন তারা। এর আগে সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরই সেনাবাহিনীর একটি মাইক্রোবাসে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন।
আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের ১৩ সদস্যের একটি টিম বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। আমাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন রয়েছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে। আলোচনা শেষে আমরা বিস্তারিত জানাব।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ছাত্রদের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখায় রয়েছেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, মতিউর রহমান চৌধুরী (মানবজমিন), ড. আসিফ নজরুল, ড. সলিমুল্লাহ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন, মেজর জেনারেল মুনিরুজ্জামান, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং প্রজেশ চাকমা। প্রস্তাবিত এই সরকারের মেয়াদ হবে ৩ থেকে ৬ বছর (সর্বোচ্চ)।

মেয়াদ শেষের ৩ মাস আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই সরকার গঠন করতে বলা হয়।
এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে  প্রধান বিচারপতির অপসারণ/পদত্যাগ এবং দলবাজ বিচারপতিদের অপসারণ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন প্রধানদের অবসরে পাঠানো (তিন বাহিনী বাদে), নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বাতিল, সরকারের সকল চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ বাতিল, ছাত্র-নাগরিক হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, নিহত ও আহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং জুলাই মাসকে জাতীয় শোকের মাস ঘোষণা।
বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা, শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার ভোররাতে এক ভিডিওতে এই রূপরেখার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ভিডিওতে নাহিদের পাশে আসিফ ছাড়াও আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ছিলেন।
এর আগে নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবের জন্য তারা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন। জরুরি পরিস্থিতিতে তারা এখনই একটি রূপরেখা ঘোষণা করছেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সর্বজন গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তিনি ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এই গুরুদায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা সকালের মধ্যেই এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চান। রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান থাকবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক। এই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নামও তারা সকালের মধ্যে ঘোষণা করবেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে রাজপথে থেকে তাদের অভ্যুত্থান রক্ষা করতে হবে। তারা রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। তাদের যে প্রতিশ্রুতি একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করার জন্য, সেটিকে তাদের অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। অবশ্যই ছাত্র-জনতার প্রস্তাবিত সরকার বাদে কোনো ধরনের সরকার মেনে নেওয়া হবে না।

অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার যে প্রস্তাবিত অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার, তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে এই সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে অবিলম্বে।
শিক্ষার্থী আন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

আমরা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে কাজ পরিচালনা করব। ধৈর্য ধরেন, সময় দেন।’ তারপর এ নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ বিষয়ে সোমবার বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে  বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

×