গণভবনের সামনে সোমবার ছাত্র-জনতার উল্লাস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যে বিজয় অর্জন হয়েছে তাতে দেশের বিভিন্ন সংগঠন অভিনন্দন জানিয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আজকের এই বিজয় ছাত্র-জনতার। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণের শপথ নিতে হবে। এই অর্জন কুক্ষিগত হতে দেওয়া যাবে না। ছাত্র-জনতাকে তা পাহারা দিতে হবে। এই আন্দোলন এই বিজয় যেন হাইজ্যাক হয়ে না যায়
গণতান্ত্রিক অধিকার পার্টির (ডিআরপি) আহ্বায়ক প্রফেসর ড. শাহেদা ওবায়েদ সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ছাত্র জনতাসহ সকল আন্দোলনকারী বীরদের শুভেচ্ছা ও স্যালুট জানাচ্ছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে একবার ছাত্র জনতাসহ আবালবৃদ্ধবনিতার রাজপথে বিজয়ের এই আনন্দ উল্লাস দেখেছিলাম। কারণ পুরো মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখেছি। গত এক দেড় মাস বাংলাদেশ একটি নজিরবিহীন সংকটের সময় অতিক্রম করেছে।
শিক্ষকতা আমার মূল পেশা হওয়ার কারণে জীবনের প্রায় চল্লিশ বছর কেটেছে ছাত্র অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের মধ্যে। তাই আজীবন ছাত্রদের সার্বিক মঙ্গলের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। আমি গর্বিত যে আমাদের ছাত্ররা আবারও প্রমাণ করেছে যে যেখানে বড় বড় দল ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর লম্বা লম্বা কথা বলা লোকেরা ব্যর্থ, সেখানে তারা আজ সফল। প্রয়োজনে তারা কতটা সাহসী, বিচক্ষণ এবং দেশপ্রেমিক হতে পারে তা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে। স্যালুট জানাই তাদের এই দেশপ্রেমকে।
তবে আমার একটি শঙ্কা ও আতঙ্ক যে তাদের এই জাগরণ, এই আন্দোলন এই বিজয় যেন হাইজ্যাক হয়ে না যায়, কোনো বিতর্কিত, স্বার্থান্বেষী, কুচক্রী মহল যেন পুরো আন্দোলনের সময়কালে মৃত্যুবরণকারী শহীদদের বলিদান এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে কাতরানো, যাদের আত্মীয়-স্বজন ভীষণ রকম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের আন্দোলনের এ ঐতিহাসিক বিজয়কে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করতে না পারে। ঐক্যবদ্ধ ভাবে সে দিকে আমাদের সর্বোচ্চ সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
যারা নিহত হয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং যারা আহত হয়েছেন তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে যার যার কাজে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরতে পারেন, সেজন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অন্তরের আন্তস্থল থেকে দোয়া করি। তাদের পাশে থেকে একটা সুন্দর বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার জন্য আমার এ বয়সেও সর্বোচ্চ টুকু করতে চাই।
কাজী ফিরোজ রশীদ ॥ বিজয় অর্জনের জন্য ছাত্র সমাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (রওশন) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ। সোমবার এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের জন্য ছাত্র সমাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে ফিরোজ রশিদ বলেন, এদেশে ছাত্র আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না। আজ শুধু পদত্যাগই নয়, দেশ থেকে তাদের পালিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক কোটা আন্দোলন দমনের নামে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। তারা ভুলে গিয়েছিল ছাত্র আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ যারা ঘটিয়েছে তাদেরসহ পদত্যাগী সরকারের দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বিজয়ী ছাত্র-জনতাকে ধৈর্য ধরতে এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
এই বিজয় ছাত্র-জনতার ॥ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজকের ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরের শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়াতে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ছাত্র-জনতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে খেলাফত মজলিশ। সোমবার প্রদত্ত এক বিবৃতিতে খেলাফত মজলিশের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজকে চূড়ান্ত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এদেশের ছাত্র-জনতার গণআকাক্সক্ষা পূরণ হয়েছে।
দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট-স্বৈর শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটেছে। আমরা মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা এই আন্দোলনসহ বিগত সময়ে যতগুলো মানুষ অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের মাগফিরাত কামনা করছি। যত মানুষ আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের আবারও স্মরণ করছি এবং সুস্থতা কামনা করছি। সাম্প্রতিক আন্দোলন সংগ্রামে সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আজকের এই বিজয় ছাত্র-জনতার। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণের শপথ নিতে হবে। এই অর্জন কুক্ষিগত হতে দেওয়া যাবে না। ছাত্র-জনতাকে তা পাহারা দিতে হবে। আমরা অবিলম্বে আন্দোলনরত ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র-জনতা এই বিপ্লব বেহাত হতে দিবে না ইনশাআল্লাহ।