ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

দেশজুড়ে সহিংসতা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩২, ৪ আগস্ট ২০২৪

দেশজুড়ে সহিংসতা

এক দফা দাবিতে রবিবার রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকাঅসহযোগ আন্দোলন ঘিরে রবিবার সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্নস্থানে সহিংসতায় পুলিশসহ ৮১ জন নিহত কয়েকশআহত হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৮ জন আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

এদিকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় আন্দোলনকারীরা হামলা করে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে তারা পিটিয়ে ১৪ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। নরসিংদীর মাধবদীতে আওয়ামী লীগ আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহত সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থক বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফু ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে কার্ফু প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৪ পুলিশসহ ২৯ জন, নরসিংদীতে , ফেনীতে , কিশোরগঞ্জে , ঢাকায় , পাবনায় , বগুড়ায় , রংপুরে , মুন্সীগঞ্জে , মাগুরায় , ভোলায় , সিলেটে , কুমিল্লায় পুলিশসহ , জয়পুরহাটে , হবিগঞ্জে বরিশালে জনসহ মোট ৭৪ জন মারা গেছেন।

আন্দোলনের প্রথমদিন রাজধানী আশপাশের  নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে রাজধানীতে জন নিহত শতাধিক আহত হন। সকাল থেকেই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে হাজারো ছাত্র-জনতা অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বাংলামোটর কাওরান বাজারে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সকালে শাহবাগ ছাত্রলীগের দখলে থাকলেও পরে তা ছাত্র-জনতার দখলে চলে যায়। সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের সামনে। দুপুরে শাহবাগ, টিএসসি, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সড়ক ছাত্র-জনতা দখলে নেয়। শাহবাগ থানার সামনে ছাত্র-জনতাকে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে দেখা গেছে। শাহবাগ থানার সামনে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য এবং একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) দেখা গেছে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশ বক্স পোড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কাওরান বাজার বাংলামোটর মোড়ে আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এর আগে দুপুর ১২টায় ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে কয়েকজন ছাত্র-জনতা জড়ো হলে আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়।

ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাসপাতালে আসা আহতদের মধ্যে ইট-পাটকেল, লাঠির আঘাতের পাশাপাশি গুলিবিদ্ধরাও রয়েছেন। ছররা গুলি লাইভ বুলেট দুরকমের গুলিবিদ্ধ আহতরা এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে বিকেলে সায়েন্স ল্যাব এলাকা থেকে ছররা গুলিবিদ্ধ একটি শিশুকে নিয়ে আসেন বৃষ্টি নামের এক নারী। নয় বছর বয়সী বায়েজিদ নামের শিশুটি নিউ মার্কেটে একটি ব্লেজারের দোকানে কাজ করেন। তার বাবা শাহীন বাহরাইন প্রবাসী, তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে। শিশুটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা রণক্ষেত্র দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পেশাজীবীদের সমাবেশ - করাকে ঘিরে ওই এলাকায় রণক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। পুলিশ হঠাৎ করে সমাবেশে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

সকাল ১১টা থেকে বিভিন্ন পেশাজীবীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জড়ো হতে থাকে। সেখানে বিপুলসংখ্যক আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ শুরু হয়েছিল। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হঠাৎ করে কদম ফোয়ারার দিক থেকে টিয়ারশেল রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। সময় উপস্থিত জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।

পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সময় প্রেসক্লাবের সামনে রণক্ষেত্র পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা সময় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থিত পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। সময় অসংখ্য সাউন্ড গ্রেন্ডে নিক্ষেপ করা হয়। এর কয়েক মিনিট পর পল্টনের দিক আবারও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। এসময় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সেগুনবাগিচার বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। সময় প্রেসক্লাবের সামনে শতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান নেয়। 

বেলা দেড়টার দিকে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে সরকারের পক্ষে ঝটিকা মিছিল বের করে। বারডেম- হাসপাতালের সামনের সড়ক, শিল্পকলা একাডেমির দক্ষিণ পাশের সড়ক, মৎস্য ভবন সিগন্যালে টায়ারে-সড়কের ডিভাইডারে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে ইটপাটকেল, গাড়ির কাঁচ।

সিএমএম ফটক ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ কোর্ট রিপোর্টার জবি সংবাদদাতা জানান, বেলা ১১টার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) প্রধান ফটক ইটপাটকেল লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর চালানোর ঘটনা ঘটে। ঘটনার আগ মুহূর্তে ইসলামপুর থেকে লাঠি হাতে নিয়ে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়ে পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। সময় তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে ভাঙচুর চালায় এবং চারদিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আদালত প্রাঙ্গণে থাকা পুলিশের সদস্যরা প্রথমে আদালত ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরে তারা এসে কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে আন্দোলনকারীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সড়কে চলে যায়। মিছিল নিয়ে রায়সাহেব বাজারের দিকে চলে যাওয়ার সময় তারা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে পরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

হামলার পর সিএমএম আদালতের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। আইনজীবী বিচার প্রার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে ফটকের বাইরে অপেক্ষা করেন। ঘটনার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশ সদস্যরা কোর্ট এলাকার দিকে যায়। পরে বিচারিক আদালতের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা আইনজীবী সমিতি সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান হাওলাদার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাহাদাত শাওন এই নিন্দা জানান। তারা বলেন, জামায়াত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বাহিরাগত কিছু সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে সিএমএম কোর্টে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। তারা আইনজীবী সমিতির ভেতরে ভাঙচুর চালায়। পরে পালিয়ে যায়। ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তারা।

ছাড়া লক্ষ্মীবাজার এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সময় সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের ফটকে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আশপাশের কয়েকটি ফুটপাতের দোকানেও ভাঙচুর করা হয়।

বিচারকের গাড়িতে হামলা বিচারকার্য পরিচালনা শেষে বাড়ি ফেরার পথে মৎস্যভবন সংলগ্ন এলাকায় চার বিচারপতির গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে ঘটনা ঘটে।

হাইকোর্ট থেকে বের হয়ে গাড়িগুলো একটু সামনে এগোতেই দুর্বৃত্তরা হঠাৎ হামলা চালায়। এতে সুগ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াত চৌধুরীসহ মোট চার জন বিচারপতির গাড়িতে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে কোর্ট প্রশাসন।

মন্ত্রীপাড়ার নিরাপত্তা জোরদার দুপুর পৌনে ১টার পর থেকে শাহবাগ চত্বর দিক থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পেরিয়ে মিন্টো রোডের দিকে চলে আসে আন্দোলনকারীদের মিছিল। সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এর আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে পুলিশ বক্সে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সময় মিন্টো রোডে একাধিক মন্ত্রী পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। মিন্টো রোডে পুলিশি ব্যারিকেডে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পূর্ব পাশের ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সড়কটিও বন্ধ রাখে পুলিশ। 

ঝিগাতলায় সংঘর্ষ, নিহত দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটা অংশ ঝিগাতলার সীমান্ত স্কয়ারের কাছাকাছি এলে আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা মিছিল করে সামনে এগিয়ে যায়। সময় বিপরীত দিক থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে সরে সায়েন্স ল্যাবের দিকে চলে যায়। সেখানে পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী নামে হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে বিকেল প্রায় ৪টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

তিন এলাকায় পুলিশ বক্সে আগুন রবিবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর তিন এলাকায় পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সেগুলো হলো- বাটা সিগন্যালে পুলিশ বক্স, বাংলামোটর পুলিশ বক্স ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর বাটা সিগন্যালে পুলিশ বক্সে একদল লোক এসে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছাড়া দুপুর ১২টার পর বাংলামোটর পুলিশ বক্সে  ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। এতে তিনটি পুলিশ বক্স পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে ঘটনায় হতাহতের কোনো সংবাদ এখনো পাওয়া যায়নি।

দুপুর দেড়টার পর বাটা সিগন্যাল এলাকার সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তখন বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সময় পার্শ্ববর্তী পুলিশ বক্সে ভাঙচুরও চালানো হয়। নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির এক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আগুনের খবরে ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বেলা ২টা পর্যন্ত শুধু রাজধানীতে ১০টির বেশি অগ্নিসংযোগের সংবাদ এসেছে ফায়ার সার্ভিসের কাছে। তবে, নিরাপত্তাজনিত কারণে ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) লাগা আগুনে পুড়ে সব পরিবহন ভস্মীভূত  হয়। আগুন লাগার সংবাদ পেলেও ফায়ার সার্ভিস নিরাপত্তাজনিত কারণে সেখানেও যেতে পারেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দুপুর ১২টার পর থেকে বিভিন্ন স্থাপনায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের সংবাদ আসে ফায়ার সার্ভিসের কাছে। পরে ফায়ার সার্ভিস গাড়ি পাঠানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলমান পরিস্থিতিতে তারা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না।

সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসে আন্দোলনকারীরা সাংবাদিকদের দেখা মাত্র তেড়ে আসছে আন্দোলনকারীদের একাংশ। অনেক আন্দোলনকারী জোর করে সাংবাদিকদের ইন্টারভিউ নিতে বাধ্য করছে। এদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারী সংবাদ কর্মীরাও। রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের নারী সংবাদ কর্মী শামিমা সুলতানা শাহবাগে গেলে তার দিকে তেড়ে আসেন আন্দোলনকারীরা। সময় তাকে দেখে অনেকে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে। পরে বিডি নিউজের সংবাদ কর্মী মাসুম বিল্লাহ মাহমুদ জামান অভি ঘটনাস্থলে এলে তাদের তিনজনকে মারধর করে আন্দালনকারীরা। 

বিষয়ে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের নারী সংবাদ কর্মী শামিমা সুলতানা দৈনিক জনকন্ঠকে বলেন, আমাকে শিক্ষার্থীরা জোর করে ইন্টারভিউ দিচ্ছিল। কয়েকজন ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকে। সময় ঘটনাস্থলে মাসুম বিল্লাহ মাহমুদ জামান অভি এলে আমাদের সবাইকে মারধর করা হয়।

হলে হলে তালা ভাঙছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা আবাসিক হলের সিলগালা ভাঙতে শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুরের পর তালা ভেঙে হল গেটে মিছিল করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সময় পুলিশ কিংবা প্রশাসন- কারও পক্ষ থেকেই শিক্ষার্থীরা বাধাপ্রাপ্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, হলের তালা ভাঙা ছিল তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ। এর অংশ হিসেবেই তারা হলে হলে তালা ভাঙছেন। সময় বাইরে থাকা অন্য শিক্ষার্থীদের হলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্যার এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, মাস্টার দ্য সূর্য সেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান কবি জসীম উদ্দীন হলে এই চিত্র দেখা গেছে। তালা ভাঙাকালীন আন্দোলনকারীদেরভেঙে দে রে ভেঙে দে, হলের তালা ভেঙে দেস্লোগান দিতে দেখা গেছে।

দেশরূপান্তরে হামলা বিকেল থেকেই অবরোধ করে রাখা বাংলামোটরে দেশরূপান্তর পত্রিকার অফিস রূপায়ন টাওয়ারে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এতে দেশ রূপান্তরের ক্রাইম রিপোর্টার সারোয়ার আলমের ওপর চড়াও হবার পর বেইজমেন্টে থাকা গাড়িতে ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়। সারোয়ার বলেন, নিচে দাঁড়িয়ে থাকার সময় হঠাৎ ৪০/৫০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে ভবনের গেটে হামলা চালায়। তারা আমাকে দেখেই সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় লাঠি দিয়ে দুটো বাড়ি মারে। এক পর্যায়ে আমি পুলিশ কমিশনারকে ফোন করলে ঘটনাস্থলে তেজগাঁও থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ে আনে।

লক্ষ্মীপুরে আটজন নিহত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কারীদের সঙ্গে গোলাগুলি সংঘর্ষের ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন। সময় আওয়ামী লীগ আন্দোলনকারীরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। ছাড়া ঘটনায় শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকেই মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শহরের ঝুমুর মাদাম ব্রিজ এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ কাউসার ওয়াহেদ বিজয় (২৩), আদনান (২২), সাব্বির (২৩) ওসমান গনি মিরাজ (২৩) লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাকি চারজনের মধ্যে তিনজনের লাশ রাস্তায় পড়েছিল। তাদের নাম, পরিচয় জানা যায়নি। উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নিহত সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রবিবার দুপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ অঙ্গ সংগঠনের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের ছয়জন নিহত চার আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে আওয়ামী সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের মধ্যে সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে পাঠানো হয়েছে।

উত্তেজিত আন্দোলনকারী - হাজার লোক আওয়ামী সমর্থকদের ওপর চড়াও হলে আওয়ামী সমর্থকরা দৌড়ে পালাতে থাকে। এসময় ছয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী দৌড়ে মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেন। আন্দোলনকারীরা মসজিদ থেকে ধরে বের করে এনে মাসজিদের সামনেই এলোপতাড়ি পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। নিহতরা হলেনÑ চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) অজ্ঞাত (৩৮)

ফেনীতে নিহত পাঁচজন জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চলাকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। সন্ধ্যায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক। ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা আসিফ ইকবাল জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় সদর হাসপাতালে পাঁচজনের মরদেহ এসেছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া নিহতের স্বজনরা তিনটি মরদেহ নিয়ে গেছেন। বাকি দুটি লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে।

রংপুরে কাউন্সিলর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ জন নিহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে রংপুরে দুই গ্রুপের রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রবিবার সিটি বাজার এলাকার কাছাকাছি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি হারাধন হারা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খসরুসহ  জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছেন শতাধিক। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত বাকি দুজনের নাম ঠিকানা জানা যায়নি।

কিশোরগঞ্জে যুবলীগ নেতাসহ চারজন নিহত কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারী-পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সময় জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর, শহরের পুরানথানা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। থানায় হামলা ভাঙচুরের চেষ্টা হয়েছে। একাধিক মোটরসাইকেল গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। রবিবার শহরের বিভিন্ন স্থানে এসব হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সদর উপজেলার যশোদলের আলম মিয়ার স্ত্রী অঞ্জনা বেগমসহ (৩৫) অন্তত চারজন মারা গেছে। তাদের মধ্যে দুজন দগ্ধ হয়ে এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। মৃতদের মধ্যে অন্যরা হলেনÑ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইলের বাসিন্দা স্থানীয় যুবলীগ নেতা মবিন (৩৫) দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আরেকজনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি।

এদিকে, নিহতদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে হামলা অগ্নিসংযোগের সময় দুইজন দগ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এই দুইজনের মধ্যে সদর উপজেলার যশোদলের আলম মিয়ার স্ত্রী অঞ্জনা বেগম এবং সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াকালে শহরের শহীদী মসজিদ এলাকায় জেলার তাড়াইলের তালজাঙ্গা চরতালজাঙ্গার আজহারুল ইসলামের ছেলে রুবেল আব্দুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। নিহত রুবেল আব্দুল্লাহর বোন সুমাইয়া বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইলের বাসিন্দা স্থানীয় যুবলীগ নেতা মবিন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।

বগুড়ায় দুজনকে পিটিয়ে হত্যাসহ নিহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলননের অসহযোগ আন্দোলনে রবিবার বগুড়ায় সহিংসতায় চারজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলে দিনভর। এর মধ্যে একজনকে আওয়ামী লীগ পুলিশ সন্দেহে আন্দোলনকারীরা প্রকাশ্য রাস্তার ওপর পিটিয়ে হত্যা করে। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই চারজন মারা যায়। আহতদের মধ্যে প্রায় অর্ধশত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই কর্মসূচি হলেও এটি মূলত জামায়াত শিবির বিএনপি ছাত্রদল নেতাকর্মীর তা-বে গিয়ে পৌঁছে।

প্রায় ঘন্টা ধরে তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, টিএন্ডটি অফিসে এর ভিতরের  প্রাইভেটকার  মাইক্রোবাস মটরসাইকেলে আগুন দেয়। এর পর দুপুরের দিকে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সাতমাথা সংলগ্ন ডাক বাংলোতে আগুন দেয়। আন্দোলন কারী পুলিশের ধাওয়ার মুখে পড়ে ডাক বাংলোতে আটকা পড়া এক ব্যক্তি বেরিয়ে এলে আন্দোলনকারীরা তাকে প্রকাশ্যে রাস্তার ওপর ফেলে পিটিয়ে মেরে ফেলে। পুলিশ আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অপর দিকে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় সংঘের্ষর সময় আওয়ামীলীগ অফিস ভাঙচুর করা হয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ উপজেলা পরিষদ   থানায় হামলা- ভাঙচুর হয়। এখানে জন মারা যায়। ছাড়া শহরে আরো ১জন মারা যায়। জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেনÑ জিল্লুর রহমান সেলিম। ছাড়া কাহালুর বীর কেদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন তার গ্রামের মুনির উদ্দিন নামে একজন দুপচাঁচিয়ায় নিহত হওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

মাগুরায় ছাত্রদল নেতাসহ নিহত তিন॥ মাগুরা মহম্মদপুরে পৃথক সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা রাব্বিসহ তিনজন নিহত হয়েছে। বিষয়ে মহম্মদপুর থানায় হামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় মহম্মদপুর আওয়ামী লীগ অফিস মাগুরায় বিএনপি অফিসে আগুন দিয়েছে দুর্বত্তরা।  নিহতরা হলেনÑ মাগুরা  জেলা ছাত্রদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি (২৮), সুমন (১৮) আহাদ (১৮) সুমন মহম্মদপুরের বালিদিয়ার কান্নু শেখের এবং আহাদ মহম্মদপুরের ব্যাপারীপাড়া এলাকার ইউসুফ মোল্লার ছেলে।

কুমিল্লায় পুলিশসহ তিনজন নিহত॥ দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর, অস্ত্র-গুলি, লুট অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসময় এরশাদ আলী নামে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ছাড়া, জেলার দেবীদ্বার পৌর এলাকায় আবদুর রাজ্জাক রুবেল নামে এক বাস চালককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান থানার ওসি নয়ন মিয়া। দিনভর জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া গুলিতে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ভাংচুরসহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় দাউদকান্দি থানার দুটি গাড়ি, গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ির একটি গাড়ি, ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার একটি ্যাকার এবং দাউদকান্দি এলাকায় দুটি সিএনজি, দুটি মোটরসাইকেল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আরও ৮টি যানবাহনে ভাংচুরসহ আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একটি সরকারি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এছাড়া রাতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুর আহমেদ জানান, রবিবার সকাল থেকে থানার সব পুলিশ ফোর্স মহাসড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ এক-দেড় হাজার দুর্বৃত্ত থানায় ঢুকে ভাংচুর শুরু করে। এসময় তাদেরকে বাধা দিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কনস্টেবল এরশাদ আলীকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ওসির কক্ষে প্রবেশ করে ভাংচুর এবং ওসিকে পিটিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। তারা ইচ্ছেমতো তা- চালিয়ে চলে যায়। এসময় থানার অস্ত্র গুলি লুট করা হয়। পুলিশের ব্যবহৃত মালামাল লুট করা হয় এবং কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। নিহত কনস্টেবল এরশাদের বাড়ি শেরপুর জেলায়। হাইওয়ে পুলিশ সুপার আরও জানান, লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলির হিসাব করা হচ্ছে। আমরা জড়িতদের সনাক্ত করতে কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে জেলার অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন। এছাড়া জেলার দেবীদ্বারে আবদুর রাজ্জাক রুবেল নামে এক বাস চালককে কুপিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দুপুর পৌনে ২টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবীদ্বার পৌরসভার বানিয়াপাড়া এলাকায় ঘটনা ঘটে। তিনি দেবীদ্বার পৌরসভার বাড়েরা এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। দেবীদ্বার থানার ওসি নয়ন মিয়া বলেন, রুবেল বিএনপির কর্মী ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি মিছিলে এসে হামলার শিকার হয়ে নিহত হন। হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস থানার সামনে একটি প্রাইভেট কার মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়।

মুন্সীগঞ্জে নিহত তিন শহরে মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য চত্বরে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল, গুলি টিয়ারসেল সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে তিনজন নিহত অন্তত ১১৫ জন আহত হয়েছেন। রবিবার শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় আন্দোলনকারীররা পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল নিহতদের বিষয়টি  নিশ্চিত করে বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা করে তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা যায়, সকাল ১০টার পর থেকেই পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যায়। শহরের যান চলাচলও ছিল প্রায় বন্ধ। আবু হেনা জামাল জানান, বেলা ১১টার কিছু আগে গুলিবিদ্ধ দুই যুবককে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদের একজন শহরের উত্তর ইসলামপুরের আব্দুল মতিন ফরাজীর পুত্র কল মিস্ত্রী রিয়াজুল ফরাজী (৩৮) একই এলাকার মিশুক চালক দিপজল সরকার (২৫) উত্তর ইসলামপুরের আকবর হোসেনের পুত্র সিমেন্ট ফ্যান্টরীর কর্মচারী গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ সজলকে (১৯) ঢাকায় রেফার করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার পথে সিরাজদিখানের ইছাপুরা এলাকায় তার মৃত্যু হয়। জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর রিপন জানিয়েছেন, দুজন নিহতের কথা শুনেছি। তবে, পুলিশ গুলি করেনি।

সিলেটে জন নিহত জেলার গোলাপগঞ্জে গুলিতে দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে, পুলিশ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন- ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজউদ্দিন (৪৩) উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮) দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ। দুপুরে গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তাদের সরিয়ে দিতে চায় পুলিশ। এসময় সেখানে বিজিবিও সেখানে উপস্থিত ছিল। একপর্যায়ে পুলিশ বিজিবির সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। বিভিন্ন মসজিদে ঘোষণা দিয়ে এসময় এলাকাবাসীও সংঘর্ষে জড়িত হন। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা এলাকাবাসী পুলিশ-বিজির দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে এবং পুলিশ-বিজিবি গুলি, টিয়ার সেল সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ বিজিবি পিছু হটতে বাধ্য হয়।

এক পর্যায়ে সংঘর্ষ গোলাপগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ২টার দিকে পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কিছু মানুষ জড়ো হলে সেখানে পুলিশ বিজিবি আসলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় সংঘর্ষে গুলি বিদ্ধ হয়ে তাজউদ্দিন সানি আহমদ গুলি বিদ্ধ হন। স্থানীয়রা পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা॥ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবির অসহযোগ ঘিরে বরিশাল নগরীতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। রবিবার বেলা ১২টার পর থেকে মহাসড়কে আগুন ¦ালিয়ে ছাত্র-জনতা বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামে। দুপুর পৌনে একটার দিকে চৌমাথা থেকে নবগ্রাম সড়কে ঢুকে দখল করে নেয় আন্দোলনকারীরা। তারা নবগ্রাম সড়কে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরিশাল সদর আসনের সাংসদ কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের মমতাজ ভিলায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। একইসময় বাসার গেটের মধ্যে এবং সামনের সড়কে ২০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলার সময় যে ছবি তুলতে গেছে তাকেই মারধর করে হাতে থাকা মোবাইল ফোন ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরীকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার বেলা দুইটার দিকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এএসএম সায়েম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, নিহত টুটুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে চৌমাথা থেকে নবগ্রাম সড়কে ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীরা মহড়া দিয়ে নগরীর সদর রোডে অবস্থান করে বিএনপির কার্যালয়সহ সামনে থাকা দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে।

ভোলায় স্মরন কালের ভয়াবহ তা- জেলা প্রশাসক কার্যালয, আওয়ামী লীগ অফিস সহ বিভিন্ন স্থাপনাসহ সরকারি গাড়িতে আগুন, নিহত - পুলিশ সহ অর্ধশত আহত

এছাড়া, সাভারের আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞাত এক তরুণের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে আন্দোলনকারীরা সাভার মডেল থানায় হামলার চেষ্টা চালায়। এসময় তারা থানার দিকে যাওয়ার পথে মুক্তির মোড়ে অবস্থিত সাভার প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন দোকানপাটে হামলা ভাঙচুর চালায়।

ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রবিবার জেলা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় - ঘণ্টব্যাপী শহরে তা- চলে। স্থানীয়রা জানান, এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে জসিম নামে এক পথচারী নিহত হন।  তিনি নতুনবাজার এলাকার ছাতা মেরামতের মিস্ত্রী ছিলেন।

হবিগঞ্জ শহরে সংঘর্ষে রিপন শীল (২৭) নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি জেলা শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের ছেলে। হামলা সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। রবিবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা সদরের টাউন হল রোডে আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে রিপন শীল নিহত হন।

 

×