ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

দায়িত্বশীল থাকার প্রতিশ্রুতি

ফেসবুকসহ সব সামাজিক মাধ্যম চালু

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৩, ১ আগস্ট ২০২৪

ফেসবুকসহ সব সামাজিক মাধ্যম চালু

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রাম খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চায়নাভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া টিকটকও সচল হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টার পর থেকে কোনো ধরনের ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ছাড়াই এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা যাচ্ছে।

এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে এখনো ক্যাশ সার্ভার ক্লিয়ার না করায় গতি কম পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ে ব্রিফিং করে বিকেল থেকে সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সংবাদ সম্মেলনের আগে এদিন সকালে তিনি অনলাইনে (ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম) মালিক প্রতিষ্ঠান ‘মেটা’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। 
মেটার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কীভাবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানি দেওয়া হয়েছে। কোন অ্যাকাউন্ট থেকে, কোন পেজ থেকে সেটাও আমরা উল্লেখ করে বলেছি। কিছু ছবি ও ভিডিও তুলে ধরা হয়েছে এবং কিছু কিছু এডিট করা হয়েছে। ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে বলা আছে, কোনো ধরনের ভিডিও-ছবি তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে অ্যালাউ করে না। কিন্তু তারা বাংলাদেশে গত ১০ দিনে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে মানেনি।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, অ্যাডাল্ট সেক্সুুয়াল এক্সপ্লয়টেশন প্রাইভেসি ভায়োলেশন সবগুলো ভঙ্গ করেছে এই পেজগুলো, এই অ্যাকাউন্টগুলো। যেগুলো একজন সংসদ সদস্য সম্পর্কে এবং আরও বেশকিছু আমরা অভিযোগ দিয়েছি, তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা-ব্যক্তিগত সুরক্ষা, নারীর প্রতি অবমাননাকর। এটা খুবই অগ্রহণযোগ্য, কনটেন্টগুলো এখনো তারা রেখে দিয়েছে। 
তিনি বলেন, আমরা বলেছি, ফেসবুক-ইউটিউবে গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে প্রাণহানি ও ক্ষতির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটার দায় তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আমরা প্রত্যাশা করি, তারা যেন অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সরকার ও জনগণের সম্পদ রক্ষার জন্য আমাদের সহযোগিতা করে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের সংবিধানের কোনো কোনো অনুচ্ছেদ অনুসারে এগুলো তারা লঙ্ঘন করেছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ভঙ্গ হয়েছে। ইউনাইটেড নেশনসের যেসব হিউম্যান রাইটস রেজুলেশন আছে সেগুলো কোথায় কোথায় তারা ভঙ্গ করেছে। পাশাপাশি তারা তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভঙ্গ করেছে সেটাও আমরা তাদের বলেছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি যে, একজন সাজাপ্রাপ্ত মানুষের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একের পর এক বিভিন্ন স্ট্যাটাস কিভাবে দেওয়া হচ্ছে। দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি পাওয়া কোনো ব্যক্তি কিভাবে এভাবে ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে স্ট্যাটাস দিতে পারেন। আদালতের রায়েও এ ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে যে, সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির পক্ষে কোনো ধরনের প্রচারণা করা যাবে না।

আমরা এও বলেছি, খালেদা জিয়া সাধারণ কোনো মানুষ নন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। অথচ এসবের বিরুদ্ধে ফেসবুক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি বলেন, সভায় আমরা আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের বিষয়টিও একইভাবে উল্লেখ করেছি। কারণ তিনিও সাজাপ্রাপ্ত আসামি। অথচ এরা দিনের পর দিন ফেসবুক ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা প্রোপাগা-া চালিয়ে যাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে ফেসবুক নির্বিকার কেন সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চাওয়ায় ফেসবুক খুলে দেওয়া হচ্ছে। আগামীদিনে আরও দায়িত্বশীল থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফেসবুক। এদিকে ফেসবুক বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। তাদের তথ্য মতে, প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামভিত্তিক ব্যবসায় যুক্ত। তাদের আয়ের অন্যতম উৎসও এটা। ফলে দ্রুত ফেসবুক খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। 

সহিংসতার ভিডিও সরানোয় শীর্ষে টিকটক, তলানিতে ফেসবুক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার অসংখ্য ভিডিও ফেসবুক, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একইসঙ্গে এ পরিস্থিতিতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুয়া, গুজব ও অপপ্রচার এবং যৌন হয়রানিমূলক কনটেন্টও। সরকারের পক্ষ থেকে বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কাছে এসব ভিডিও অপসারণের অনুরোধ করেছিল।

সরকারের অনুরোধ রেখে সবচেয়ে বেশি ভিডিও সরিয়েছে টিকটক। তারা গত ১০ দিনে সহিংসতা, ভুয়া ও হয়রানিমূলক ৬৭ শতাংশ ভিডিও টেকডাউন (অপসারণ) করেছে। আর ইউটিউব অপসারণ করেছে ২০ শতাংশ ভিডিও। সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সবচেয়ে কম ভিডিও অপসারণ করেছে মেটা বা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্ম থেকে মাত্র ১৩ শতাংশ ভিডিও সরিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ বিষয়ে বলেন, আমরা টিকটকের কাছে ৭ লাখ ভিডিও সরানোর অনুরোধ করেছিলাম। তারা অনুরোধ করা ৭ লাখ ভিডিওর মধ্যে ৬৭ শতাংশ কনটেন্ট রিমুভ করেছে।

ফেসবুকের কাছে যে সংখ্যক ভিডিও টেকডাউনের অনুরোধ ছিল, তার মধ্যে তারা ২০ শতাংশ সরিয়েছেন। ফেসবুকে যারা বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেক করেন, তারা বিশেষ মতাদর্শের উল্লেখ করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এ কারণে গত ১০ দিনে তাদের প্ল্যাটফর্মে যে বৈষম্যমূলক কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে, তা সরানোর অনুরোধ করলেও তারা তেমন সাড়া দেননি। মাত্র ১৩ শতাংশ ভিডিও তারা সরিয়েছেন।

ফলে দেশে যে সহিংসতা হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেই দায় তারা এড়াতে পারেন না। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হলে গত ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচদিন পর ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত পরিসরে ফেরে। ১০ দিন পর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়েছে। কিন্তু বন্ধ ছিল ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

×