ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

সাম্প্রতিক হামলায় আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী

ওদের খুঁজে বের করুন উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৭ জুলাই ২০২৪; আপডেট: ০০:০৬, ২৭ জুলাই ২০২৪

ওদের খুঁজে বের করুন  উপযুক্ত শাস্তি  দেওয়া হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকেলে সম্প্রতি সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের খুঁজে বের করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এরা কে কোথায় আছে, খুঁজে বের করুন। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে, যেন আর কখনো এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তিনি বলেন, আমি কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে। আজকে বাংলাদেশে ওরা সেটাই করল।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের তা-ব চলাকালে হামলার শিকার হয়ে আহতদের দেখতে শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি ইউনিটে যান এবং বিএনপি-জামায়াতের হামলা ও নৃশংসতার সময় আহত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীনদের অবস্থার খোঁজখবর নেন।

বর্বরতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে এইটুকু বলব যে, যারা অপরাধী তাদের খুঁজে বের করুন। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে, এই ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে। আমি আবারও বলব, দেশবাসীকে বলব যারা এই ধরনের জঘন্য কাজ করে, কোথায় কে আছে খুঁজে বের করুন।’

সহিংসতায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত। এতগুলো মানুষ, আমি তো আমার সব হারিয়েছি, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি, আমি তো জানি মানুষের হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধ হয় আর কেউ বেশি জানে না।

জামায়াত-শিবির, বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল তারাই এই সুযোগটা নিয়ে, কোটা আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে সারা দেশব্যাপী এই ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই, দেশের প্রতি কোনো মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোন দায়িত্ববোধ নেই। আর মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না। আমার প্রশ্ন এতে অর্জনটা কি হলো? কতগুলো মানুষের জীবন চলে গেল। কতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

সরকার প্রধান বলেন, সেই ৭১ সালের কথা মনে পড়ে, ২০১৩ তে ৩ হাজার ৮০০ মানুষ, মানুষকে পোড়ানো, মেরে ফেলা, আবার ২০১৪ তে সেই একই। ২০২৩ এর ২৮ অক্টোবর, পুলিশকে যেভাবে মেরেছে, এবারও সেই পুলিশকে মারা না শুধু, মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা। আওয়ামী লীগের (কর্মী) গাজীপুরের, তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা। একি বর্বরতা, একি জঘন্য। কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান করব এই যে বর্বরতা, এই যে সন্ত্রাস জঙ্গী এবং মানুষকে হত্যা, এটাতো সম্পূর্ণ জঙ্গি কাজ। মানুষের হাত কাটা, পা কাটা, রগ কাটা, চট্টগ্রামে আমাদের ছাত্র লীগের ছেলেদের ৬ তলা থেকে ফেলে দেওয়া, তাদের রগ কেটে দেওয়া। পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের ওপর হামলা। এটা কোন ধরনের বর্বরতা?

আহতদের চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হয়নি হয়নি এবং তাদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সব করার ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয়-রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি। মানুষের সেবা করার যা যা সবই নষ্ট করবে, সবই ধ্বংস করে দিবে, সবই পোড়াবে।

তিনি বলেন, কত বার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সব কিছু ভুলে, সেই শোক, ব্যথা, বেদনা, বাবা-মা, ভাই সব হারানোর বেদনা, নিজের ওপর এত বড় আঘাত, সব কিছু মোকাবিলা করে আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেন ভালো থাকে। কিন্তু সেই খানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারপর মানুষগুলোর ওপর হামলা করা। মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা। এর চেয়ে কষ্টের আর কিচ্ছু হয় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আর হাসপাতালে আক্রমণ, কোভিড হাসপাতাল ছিল সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসা যেখানে মানুষের সেবা সেখানে আঘাত হানা, এর চেয়ে জঘণ্য কাজ আর কিছু হয় না।

সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান  বলেন, আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপর আবার কেন। সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কি জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য? দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, দেশবাসীকে বলব আপনারা দোয়া করেন। যেন এই জঙ্গিবাদ এবং জুলুম এর হাত থেকে মানুষ যেন মুক্তি পায়। মানুষের জীবনে শান্তি আসে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের খোঁজ খবর নেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে সহিংসতার সময় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর অবস্থা দেখতে রাজধানীর মিরপুর ১০-এ মেট্রোরেল স্টেশন এবং শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন করেন।

×