ইন্টারনেট। ছবি: সংগৃহীত
টানা ছয়দিন ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটের কবলে থাকার পর অবশেষে সীমিত পরিসরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্রডব্যান্ড লাইন চালু করেছে সরকার। আপাতত গুগল সেবা স্বাভাবিক থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, টিকটক, ইন্সষ্টাগাম, এক্স (সাবেক টুইটার)সহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকবে বলে বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে।
তবে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা কবে নাগাদ সচল হবে এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন নির্দেশনা দেয়নি সংস্থাটি। এদিকে টানা কয়েকদিন দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় ভয়েস কল বা টকটাইমের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু সেখানেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। যারা সাত দিনের প্যাকেজ কিনেছিলেন তারা ব্যবহারই করতে পারেননি। অথচ তাদের ইন্টারনেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টানা কয়েকদিন ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় অ্যাপভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। বৈদেশিক লেনদেন, ই-কমার্স, অনলাইন আর্থিক সেবা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়াররিং ও ফুড ডেলিভারি সেবা, মোবাইল রিচার্জসহ নানা ব্যবসা ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না মোবাইলসহ কোনো ডিভাইস থেকে।
ইন্টারনেটের এই অচলাবস্থা অবিলম্বে নিরসনের দাবি জানিয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের পাঁচটি সংগঠন-বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্কো ও ই-ক্যাব। গত রবিবার সংগঠনগুলোর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের সব ব্যবসাই ইন্টারনেটনির্ভর। তথ্য-প্রযুক্তি সেবা প্রদানকারী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী প্রযুক্তি সেবা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, টিকটক, ইন্সষ্টাগাম, এক্স (সাবেক টুইটার)সহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখার বিষয়ে গত সোমবার বিকেলে এসব অ্যাপ বন্ধ করতে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকনিক্যাল প্রধানদের সঙ্গে বিটিআরসিতে বৈঠক করেছে সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগ। ওই বৈঠকে গুগল সেবা বন্ধের প্রস্তাব থাকলেও সেটি পরে বাদ দেয়া হয়। একই সঙ্গে ভিপিএন বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। মঙ্গলবার দিনভর এসব অ্যাপ বন্ধে কারিগরি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি।
রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন সচল করেছে সরকার। আপাতত গুগল সেবা স্বাভাবিক থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, টিকটক, ইন্সষ্টাগাম, এক্স (সাবেক টুইটার)সহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকবে বলে বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে। তবে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা কবে নাগাদ সচল হবে এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন নির্দেশনা দেয়নি সংস্থাটি। এর আগে গত সোমবার রাতেই ব্রডব্যান্ড চালুর গুঞ্জন শোনা গেলেও তা চালু হয়নি।
মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর মহাখালীর ডাটা সেন্টার ও সঞ্চালন লাইনে অগ্নিসংযোগের কারণে ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল করতে অনেক সময় লাগবে। তবে অগ্রাধীকার ভিত্তিতে বাছাইকৃত এলাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালু বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
কল ড্রপ, গ্রাহক ভোগান্তি চরমে
দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় ভয়েস কল বা টকটাইমের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু সেখানেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। যারা সাত দিনের প্যাকেজ কিনেছিলেন তারা ব্যবহারই করতে পারেননি। অথচ তাদের ইন্টারনেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এদিকে কল ড্রপ যেমন বেড়েছে, তেমনি অতিরিক্ত টাকা কাটা হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। আগে গ্রাহকরা প্যাকেজ নিয়ে কম টাকায় কথা বলার সুযোগ পেতেন। এখন অনেকেই প্যাকেজ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হারে টাকা কাটা হচ্ছে।
এদিকে রিচার্জেও সমস্যা হচ্ছে। প্রথম কয়েক দিন বিকাশ দিয়ে রিচার্জ করা গেলেও গত দুই দিন ধরে সেটাও প্রায় বন্ধ। তবে নগদ সেবা দিয়ে রিচার্জ করা যাচ্ছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ ইন্টানেটের প্যাকেজ বিক্রি হয় তাতে কয়েক কোটি টাকার ইন্টারনেট ব্যবহার করার আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। গ্রাহকরা এই প্যাকেজ ফেরত চেয়েছেন। যদিও মোবাইল অপারেটররা বলছে, সরকারের সিদ্ধান্তে তারা ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছে। ফলে এই ক্ষতির দায় সরকারকেই নিতে হবে। অপারেটররা এখানে ভর্তুকি দেবে না। তবে বিটিআরসি থেকে কোন সিদ্ধান্ত এলে সেটা বিবেচনা করা হবে।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ কলেজ এলাকায় ফোরজি সেবা সীমিত করা হয়। বুধবার থেকে সারাদেশের ফোরজি সেবা বন্ধ করে দেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশে অপারেটরা এই পদক্ষে নেয়।
এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহাখালীতে আগুণে সার্ভার ও কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারেটের ট্রাফিক কমে যায়। সেদিন রাত ৯টা থেকে দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে।
এসআর