বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন স্কিম সমস্যা সমাধানের দিকে এগোচ্ছে
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন স্কিম সমস্যা সমাধানের দিকে এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের সাক্ষাৎ ও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। চলতি সপ্তাহে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে শিক্ষকদের কর্মবিরতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি থেকে জনকণ্ঠকে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধসহ ৩৯ বিশ^বিদ্যালয়ে যে অচলাবস্থা রয়েছে, সেটি ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষকরা বলছেন, আমাদের পক্ষ থেকে প্রত্যয় স্কিম ছাড়াও শিক্ষকদের জন্য সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবি উত্থাপন করা হয়। সার্বিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। বৈঠকে আওয়ামী সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা জনকণ্ঠকে জানান, আওয়ামী সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি। নিজেদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল সেটির অবসান ঘটেছে। চলমান কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচানায় যা যা উঠে এসেছে, আমরা সেটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করব। যেহেতু এটি দুই-একজনের বিষয় নয়, এর সঙ্গে যুক্ত ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী জড়িত, তাই তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।
সূত্র বলছে, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের আলোচনার কথা ছিল। তবে সেটি আজ রবিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ে সাধারণ সভায় এ বিষয়ে সব শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি গণমাধ্যমে জানানো হবে। তখনই কর্মবিরতির ইতি ঘটতে পারে।
এর আগে শনিবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাঁপা এবং প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষক নেতারা।
এ সময় শিক্ষক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুল ইসলাম, মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টেলিভিশন ফিল্ম বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম প্রমুখ।
এরপর গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সবাই যুক্ত হবেন ২০২৫ সালের ১ জুলাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে পেনশনে যোগদানের বিষয়ে তথ্য ছিল, সেটা সঠিক নয়। তাদের তিনটা দাবির মধ্যে এটাও একটা দাবি। সবার মতো তারাও ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ে যোগ দেবেন, এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ শিক্ষক নেতা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, একটা বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি মিটেছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি। শিক্ষকদের সুপার গ্রেড ও স্কেল প্রদানের বিষয়টি আলোচনা হবে এবং তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করা হবে বলেও দাবি করেন তিনি। শিক্ষকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা সাংগঠনিকভাবে ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
বৈঠক শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সন্তোষজনক বৈঠক হয়েছে। কর্মবিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর জানানো হবে।
এর আগে শনিবার সকালে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির ও সরকারের প্রতিনিধিরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠক শেষ হয় দুপুর পৌনে ১টার দিকে।
প্রসঙ্গত, সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে গত ২০ মে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তার ধারাবাহিকতায় ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে মানববন্ধন করেন। এরপর ২৮ মে দুই ঘণ্টা এবং ২৫-২৭ জুন তিনদিন সারাদেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরবর্তীতে ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হয় এবং ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।