ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১  

‘কোটা ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার হতে পারে’

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ১১ জুলাই ২০২৪

‘কোটা ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার হতে পারে’

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১  মনে করে, অনেক বছরের ব্যবধানে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পার হওয়ার পর আগেকার কোটা ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার হতে পারে-যাতে নতুন প্রজন্মের সত্যিকার মেধাবীরা বঞ্ছিত না হয়।  

কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের নতুন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রণী জাতীয় সংগঠন সেক্টর  কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর  কার্যনির্বাহী সভাপতি  বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নূরুল আলম এবং মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।  

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের প্রায় সকল প্রান্তেই  পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কোটা ব্যবস্থার প্রচলন আছে। আরও আছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী বা  বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের  উত্তর প্রজন্মের  জন্য  সম্মান ও সুযোগের  ব্যবস্থা। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশের সূচনাকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। 

কিন্তু ১৯৭৫ সালের রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ ২১ বছর মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা  বিদ্বেষী সামরিক শাসক ও তাদের  রাজনৈতিক অনুসারীরা ক্ষমতায় থাকায় স্বাধীনতা সংগ্রামী বা বীর মুক্তিযোদ্ধারা কোটার সুবিধা লাভ করেন নি। বরং বহুক্ষেত্রে তাঁরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। 

শুধু তাই নয়, এ সময় সুপরিকল্পিত ভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।  এই সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্যই উত্তীর্ণ হয়ে যায়।  

এমন কী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের  সন্তানেরাও সরকারি চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম করে। সে কারণে জাতীয় বীরদের মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-প্রজন্মের জন্য কোটা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করা হয়।  

২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের ফলে সরকার সব ধরনেরর কোটা রহিত করে পরিপত্র জারি করে, যা সুবিবেচনা প্রসূত ছিল বলে সেক্টর  কমান্ডারস ফোরাম মনে করে না। এরই পরিপ্রেক্ষীতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের পক্ষ থেকে পরিপত্রের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হয়। মাননীয় হাই কোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্রটি বাতিল ঘোষণা করে আদেশ জারি করেন। সরকারের পক্ষ থেকে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলও দায়ের করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের  রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তারপরেও আন্দোলন দৃশ্যমান হচ্ছে।  

বিবৃতিতে বলেন, নতুন প্রজন্মের নাগরিকদের আমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সময় মুক্তিযুদ্ধকে জানবার আহবান জানাই। তাদের আরও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, মুক্তি বাহিনীর যে সকল সদস্য ১৯৭১ সালে জীবনবাঁজি রেখে পাকিস্তান হানাদার সেনা বাহিনী ও তাদের দেশীয় অনুচরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়েছিলেন  তাঁদের সিংহভাগ ছিলেন গ্রামেগঞ্জের সুবিধাবঞ্ছিত দেশপ্রেমিক মানুষ যাঁরা কয়েক যুগ ধরে উপেক্ষিত ও অবহেলিত থেকেছেন। 

কিছু উন্নয়নের পরও জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজ আজও পিছিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। অতএব রাষ্ট্রের চাকরিক্ষেত্রে তাদের সকলের জন্য বিবেচনা প্রসূত হারে কোটার ব্যবস্থা অবশ্যই যুক্তি সঙ্গত। তবে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১  মনে করে, অনেক বছরের ব্যবধানে,  বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পার হওয়ার পর আগেকার কোটা ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার হতে পারে-যাতে নতুন প্রজন্মের সত্যিকার মেধাবীরা বঞ্ছিত না হয়।  

সেই সঙ্গে ফোরাম আরও মনে করে যে,  আন্দোলনের বাতাবরণে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী মহলের অনুপ্রবেশ ঘটলে এবং  বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় বীরদের আত্মত্যাগকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হলে তা হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক ও উদ্বেগজন ।   


 

মোরসালিন/ এসআর

×