ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চীনের অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ৮ জুলাই ২০২৪; আপডেট: ১৭:৪১, ৮ জুলাই ২০২৪

মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চীনের অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণ

মোংলা বন্দর

  • অনুমোদনের ১০ মাস পরেও কাজ শুরু হয় নি
  • প্রকল্পটি অধিতকর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে-সিনিয়র সচিব

বন্দরের সক্ষতা বৃদ্ধি ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ‘মংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহন করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্মার্ট সল্যুশন ও আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতিসহ কনটেইনার টার্মিনাল বা জেটি নির্মাণ, কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ এবং কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। এর ফলে আধুনিক বন্দর সুবিধাসহ মোংলার কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বাড়বে, বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধাও বাড়বে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়। কিন্তু অনুমোদনের ১০ মাস পরও প্রকল্পে কাজ এখনো শুরু হয় নি। তবে প্রকল্পটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কাছে পাঠানো হয়েছে বলে নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে নৌ-মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, ‘চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে মংলা বন্দরের আধুনিকায়নের একটি প্রকল্প রয়েছে। তবে প্রকল্পটি অধিকতর পরিক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে নৌ-মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা এটি মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। মংলা বন্দর থেকে প্রকল্পটি আর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় নি।’ তবে এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চীন সফরের সময় আলোচনা হবে কিনা এটা আমি বলতে পারবো না। এই বিষয়গুলো ইআরডি দেখছে বলে জানান তিনি। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে মোংলা বন্দর এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোর কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে বন্দরটিকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার অনেক সম্ভাবনাময়। তা ছাড়া খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ শেষ হলে বন্দরটির গুরুত্ব আরও অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু সে হিসাবে বন্দরের বিদ্যমান সুবিধা অপ্রতুল। বন্দরে ৪৭টি জাহাজ একসঙ্গে নোঙর করতে পারে, কিন্তু কোনো কনটেইনার জেটি নেই। বার্ষিক ১ কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো এবং ১ লাখ কনটেইনার (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের) হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। তাই বন্দরটির আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে এই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। ‘মংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এতে চীন সরকার (জিটুজি) ঋণ দেবে ৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্মার্ট সল্যুশন ও আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতিসহ কনটেইনার টার্মিনাল বা জেটি নির্মাণ, কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ এবং কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। এর ফলে আধুনিক বন্দর সুবিধাসহ মোংলার কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বাড়বে, বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধাও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বরের ওই সভার নির্দেশনা অনুসারে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, প্রকল্পটির অর্থায়নের বিষয়ে জিওবির ৫০০ কোটি টাকার ৫ শতাংশ হারে গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরকে পরিশোধ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী ৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা প্রকল্প ঋণ বাবদ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প অনুমোদনের পর এর ঋণ পরিশোধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবসিডিয়ারি লোন এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) সই করতে হবে। মোংলা বন্দরের যাবতীয় পরিচালন ব্যয় নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বহন করা হয়। সরকার থেকে নেওয়া হয় না। তাছাড়া কর্তৃপক্ষের পরিচালন, মেরামত ও নিজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদনের পর অর্থ পরিশোধ কষ্টসাধ্য। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির অর্থ অনুদান মঞ্জুরের জন্য বিবেচনার সুপারিশ করে কমিটি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ কে এম আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি প্রতিবেদনে সই করে।

চীনা সরকারের সফট লোনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। চায়না ন্যাশনাল কমপ্লিট ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিসিইসি) সঙ্গে এমওইউ সই হয় ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর। পরে তা বাতিল হয়। ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর চীন সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরের বছরের ১০ জানুয়ারি চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ঠিকাদার হিসাবে মনোনীত হয়। প্রকল্পটি মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় বন্দরের উন্নয়ন কাজ অনেকটা পিছিয়ে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।  

×