ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

কোটাবিরোধী আন্দোলন, এইচএসসি পরীক্ষা ও রথযাত্রার জের

দিনভর যানজটে স্থবির ঢাকা

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ৭ জুলাই ২০২৪

দিনভর যানজটে স্থবির  ঢাকা

রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছিল তীব্র যানজট

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থান, চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী অভিভাবকদের চলাচল এবং দক্ষিণ অংশে ছিল রথযাত্রা। স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে বড় ধরনের এসব ঘটনার কারণে রবিবার দিনভর সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেলে অফিস ছুটির পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। ঢাকার দক্ষিণাংশে এর প্রভাব বেশি পড়লেও যানজট ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরেও। তাতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষ। মাইলের পর মাইল হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হয়েছে তাদের। রোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের। দেখা দেয় তীব্র যানজটও। তবুও ভোগান্তি পোহানো ছাড়া কারোরই কিছু করার ছিল না।  

কোটাবিরোধী আন্দোলন, পরীক্ষা আর রথযাত্রা- এই তিন কারণে যানবাহন তেমন একটা চলাচল করতে পারেনি। যেন পায়ে হাঁটার গতিতে চলেছে। আবার কোথাও ছিল স্থির অবস্থা। মাঝে মেট্রোরেলও আধা ঘণ্টা বন্ধ ছিল।বাংলা ব্লকেডকর্মসূচির এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ আর সময় নিয়ে বের হতে বলা ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেনি বলা যায়। 

রবিবার সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিল এইচএসসি পরীক্ষা। এরই মধ্যে সকালে পুরান ঢাকায় শুরু হয় রথযাত্রা। উপলক্ষে সকাল থেকেই জয়কালী মন্দির মোড়, ইত্তেফাক মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, রাজউক ভবন চত্বর, গুলিস্তান, হাইকোর্ট মোড়ে যানজট ছিল। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবকে কেন্দ্র করে যানজটের বিষয়ে আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় কোটাবিরোধী আন্দোলনবাংলা ব্লকেড চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলের কারণে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল মোড়, আগারগাঁও, মহাখালী পল্টন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মেট্রোরেলেও বেশ যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। কিন্তু দুপুর আড়াইটা থেকে প্রায় ৩০ মিনিট মেট্রো বন্ধ থাকায় মিরপুর-আগারগাঁও-মতিঝিল রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনবাংলা ব্লকেডবিকেল ৩টায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে শুরু হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর চানখাঁরপুল, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, আগারগাঁও, মহাখালী পল্টন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে।

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে দুপুর একটায় চানখাঁরপুল থেকে নীলাচল পরিবহনে উঠেছিলেন কবির আহমেদ। তবে বিধিবাম। দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ নীলক্ষেত এসে বাস পৌঁছাতেই পড়তে হয় অবরোধের মুখে। কয়েকবারের চেষ্টায় কোনো রকমে নীলক্ষেত মোড় পার হতে পারলেও সায়েন্সল্যাব মোড় আর টপকাতে পারেনি বাসটি। আর এতে করে ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাসটিতেই বসে রয়েছেন তিনি। এমন অবস্থা শুধু কবিরের একার নয়। শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। উপায় না দেখে অনেকেই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছেন।

আগারগাঁও সিগন্যালে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা চারদিকের সড়কই আটকে রেখেছেন। যেতে দেওয়া হচ্ছে না বাস, রিক্সা, মোটরসাইকেলের মতো কোনো যানবাহনকেই। সেখানেই কথা হচ্ছিল সিএনজিচালিত অটোরিক্সার যাত্রী নুরুলের সঙ্গে। নিটোর (পঙ্গু) হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়ে তিনি ফিরছিলেন মহাখালীতে, সেখান থেকে বাস ধরে যাবেন টঙ্গী। নুরুল অটোরিক্সা থেকে নেমে বাহনটি ছেড়ে দিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। ব্যর্থ হয়ে ফেরার পর নুরুল বললেন, আমি ওদের অনুরোধ করলাম যে- বাবা, আমার সিএনজিটা ছাইড়া দাও। আমি বেশি হাঁটতে পারি না।

বনানী থেকে নাবিস্কোতে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে বেসরকারি চাকুরে আরাফাত হোসেনের। বনানীর জ্যামে আধা ঘণ্টা বসে থাকার পর হেঁটে মহাখালীতে গিয়েছি। সেখান থেকে রিক্সায় করে ভেতরের গলি দিয়ে নাবিস্কোতে পৌঁছেছি, বললেন আরাফাত।

অফিস ছুটি হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে থাকে। বিকেল থেকে রাত ৯টারও বেশি সময় ধরে ফ্লাইওভারগুলোতে গাড়ির জটলা বেধে যায়। গাড়িতে ঠাসা হয়ে যায় নিচের সড়কও। কোনো দিকেই নড়াচড়া করা সম্ভব হচ্ছিল না। ১০-১৫ মিনিট পর বড়জোর দুই কদম যান আগায়। আবার একটানা ১০ মিনিটের মতো স্থির হয়ে বসে থাকতে হয়। বিরক্ত হয়ে রিক্সা, পাবলিক বাস থেকে নেমে অনেকেই হাঁটা শুরু করেন। কিন্তু তাতেও ভোগান্তি। জনজটে পড়তে হয়েছে সারাদিন অফিস করার পর ঘরমুখী কর্মজীবী মানুষকে। এভাবেই ক্লান্ত শরীরের সঙ্গে বিরক্ত মন নিয়ে অনেক রাতে বাসায় ফিরতে হয়েছে নগরবাসীকে।

তবে রবিবার যে তিন কারণে যানজট হতে পারে, তা আগেই সতর্ক করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সকালেও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান সংবাদ সম্মেলন করে যানজটের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। সতর্ক আর পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া পুলিশেরও যেন কিছুই করার ছিল না।

 

×