ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব এখন সমীহ করে

বিশেষ প্রতিনিধি/ স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:২৬, ৬ জুলাই ২০২৪

বিশ্ব এখন সমীহ করে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান

অনেক প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্রের পথ মাড়িয়ে নিজের অর্থায়নে গর্বের প্রতীকপদ্মা সেতুনির্মাণ বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে আত্মমর্যাদার ক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের পরে বাংলাদেশের মানুষ এখন গর্ব করে আন্তর্জাতিকভাবে বুক ফুলিয়ে চলতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশকে যথাযথ মূল্যায়ন করে। এই একটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে অন্তত সেই মর্যাদা দিয়েছে। আগে যারা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করত আর তাদের ভাবধারা এমন ছিল যে, ওরা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারবে না; সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে। যত বাধাই আসুক অপ্রতিরোধ্য গতিতে আমাদের লাল সবুজের এই পতাকা সারা বিশ্বে গর্বের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।

শুক্রবার বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, টোলের মাধমে যে টাকা আয় হয়েছে, সেটা টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচার করব না। কারণ এই সেতু আমাদের গর্বের সেতু, টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচার করার নয়। এই সেতু নির্মাণের পর এখন বাংলাদেশ শুনলেই আন্তর্জাতিকভাবে সবাই সমীহ করে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি। আমরা এখন আর্থ-সামজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতুর থিমসং প্রচার করা হয়। ছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রী সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়। জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বহুল আলোচিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞ। রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দেড় হাজারের মতো অতিথি উপস্থিত ছিলেন বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। মাওয়া প্রান্তের হাজার হাজার মানুষ স্লোগান দুহাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এতটুকুও ভোলেননি।

উল্লেখ্য, বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ২০২২ সালের ২৫ জুন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু দিয়ে সড়কপথে বাংলাদেশে যোগাযোগের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এরপর ২০২৩ সালে সালে চালু করা হয় রেলপথ। বিশ্ব ব্যাংকসহ চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সংস্থাগুলো। বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে প্রমাণও হয় যে, এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এরপর বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে ফিরে আসার আগ্রহ দেখালেও বঙ্গবন্ধুকন্যা সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে সেতুর কাজ শুরু হয়। এখন নির্মিত এই সেতু পুরো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জীবনযাত্রার চিত্রই বদলে দিয়েছে।

২০০১ সালের জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ শেষে ২০২২ সালের ২৫ জুন এই স্থানে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের দিন যান চলাচলের জন্য যা উন্মুক্ত করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ায় বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণের কাজ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর অ্যাপ্রোচ সড়ক ১২ দশমিক ১১৭ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার (সড়ক) এবং ৫৩২ মিটার (রেল) গত দুই বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে কোটি ২৭ লাখ যানবাহন চলাচল করেছে। চলতি বছরের ২৯ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। প্রতি দিন গড়ে যান চলাচল করেছে প্রায় ১৯ হাজার। প্রতি দিন গড়ে টোল আদায় হয় কোটি ৩০ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক বাধা বিপত্তি আর ঝড়-ঝঞ্ঝা অতিক্রম করতে হয় উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কৃতজ্ঞ, জনগণের সমর্থন ছিল বলেই আমি এটা করতে পেরেছি। এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এই সেতু একটা জটিল স্ট্রাকচার। বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে খরস্রোতা নদীর একটি হচ্ছে এই পদ্মা নদী। সেই নদীর দুকূল বেধে দেওয়া এটা কঠিন কাজ।

সময় পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সবাইকে বিশেষ করে যারা তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়েছেন এবং নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। একসময়ে বিশ্বে অবজ্ঞার চোখে দেখা বাংলাদেশকে আজ সবাই উন্নয়নের রোল মডেল বলছে, এতে শহীদের রক্তের যে ত্যাগ, তা সফল হয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্যোগে মৃত্যুবরণকারী এবং সেতুর কাজে সম্পৃক্ত প্রয়াত ব্যক্তিদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেন এবং প্রকৌশলী, গবেষক, বিজ্ঞানী অধ্যাপক . জামিলুর রেজা চৌধুরীকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সেই পদ্মা নদীকে দুকূলে বেঁধে দেওয়া আর এই সেতু নির্মাণ করা, এই জটিল কাজের সঙ্গে যারা জড়িত সেই সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কৃতর্পক্ষ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নিবেদিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী, জাতীয় আন্তর্জাতিক পরামর্শক বিশেষজ্ঞ, নিরাপত্তার তদারকি করা সেনাবাহিনী, পুলিশ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং নির্মাণ শ্রমিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতেই আজ আমি এখানে এসেছি।

২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, গবেষণা এবং ডিজাইনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় আসতে না পারায় তা থমকে যায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারল না। কারণ আমি গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিতে পারিনি। দেশের গ্যাস বিএনপি আমেরিকার কোম্পানিকে দিয়ে দিল ভারতে বিক্রি করার জন্য। আমি বলেছিলাম, আগে দেখবো কতটুকু গ্যাস আছে। আমার দেশের জনগণের চাহিদা পূরণ করে থাকলে তা রপ্তানি হবে। এজন্য সরকারে আসতে পারলাম না। বাংলাদেশের সম্পদ বেঁচে ক্ষমতায় আসতে হবে শেখ মুজিবের মেয়ে এটা চায় না। আমার বাবা কারও কাছে মাথানত করেনি, আমিও করি না। খালেদা জিয়া রাজি হয়ে গেল। ক্ষমতায়ও এলো।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর ডিজাইন ফাইনাল করলাম, দোতলা সেতু করব। খুবই কঠিন কাজ, এই নদীতে এই কাজ করা। কারণ একসঙ্গে গাড়ি, মানুষ, রেল সব সেতুতে উঠলে ওজন রাখা একটা কঠিন কাজ। আমি এই ডিজাইনটা পছন্দ করলাম। বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি সবাই এগিয়ে এলো।

বয়সসীমা পেরিয়ে গেলেও অবৈধভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বিশ্বব্যাংকের টাকা আটকে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য হিলারি ক্লিনটন দুদফায় তাঁকে ফোন দিয়েছেন সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

নোবেল বিজয়ী . মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই এমডি পদে কী মধু আছে? একটা ব্যাংকের এমডি পদ নিয়ে যতো সমস্যা। ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত ওই পদে থাকতে পারবেন। অতিরিক্ত সময় এমডি পদে থেকে ফেলেছেন। এরই মধ্যে তাঁর বয়স ৭০ হয়ে গেছে। তারপরও তিনি সেখানে থাকেন কী করে? একজন নামিদামি নোবেল বিজয়ী সামান্য একটা এমডি পদের জন্য লালায়িত কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কখনো পেলাম না।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী মুহিত (আবুল মাল আবদুল মুহিত) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী উনার কাছে গিয়ে বললেন, আপনি আর এমডি থাকবেন কেন, আপনি বরং এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। তাতেও তিনি রাজি না। তিনি মামলা করলেন সরকারের বিরুদ্ধে। দুটি মামলা। সবাই ঘাবড়ে গেল। আমি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বললাম, এটা তো তেমন কিছু না। খালি আইনটা উপস্থাপন করবেন। কোর্ট যদি পারে কারও বয়স বাড়ালে বাড়াক।

তিনি বলেন, পরে উনি (ইউনূস) মামলায় হেরে গিয়ে আরও ক্ষেপে গেলেন। আর তার ওই রাষ্ট্রদূতের আনাগোনা তো চলছেই। বারবার পিএমওতে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে) আসেন আর একই কথা শোনান। পরে একজন আন্ডার সেক্রেটারি আসলেন, ওই একই কথা বললেন। এরপর আমি বললাম, আর কেউ আমেরিকা থেকে আসলে আমি দেখা করব না, কথা বলব না। পরে আমি আর কারও সঙ্গে দেখা করিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিলারি ক্লিনটন ফোন করলেন। ২০ মিনিটে ফোন ছাড়লেন না। দুবার ফোন দিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি এলো। আমি শুধু বললাম, এই এমডি পদে কি মধু আছে। গ্রামীণ ব্যাংকটা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পরপর। কিন্তু যখন আইন করে শুরু হলো, তখন এটা এরশাদ সাহেবের আমলে। তখন তিনি একজন এমডি খোঁজ করলেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রসেফরকে (মুহাম্মদ ইউনূস) এনে বসানো হলো। সেই প্রফেসর এমডির পদে বসে গ্লুতে চেয়ারে এমনভাবে আটকে গেল যে আর উঠতে চান না।

তৎকালীন সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যেদিন দায়িত্ব থেকে চলে যান, সেদিনই পদ্মা সেতুর টাকাটা বন্ধ করে দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য হিলারি ক্লিনটনের নির্দেশ ছিল। টাকা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য দাতাসংস্থাও বন্ধ করে দিল। আমি অনেক দেশের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সবাই মনে করেছিল, বিশ্বব্যাংকের টাকা ছাড়া এই সেতু করাই যাবে না। আমি বললাম কেন যাবে না? একমাত্র মালেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বললেন, আপনার সেতুটা আমি করে দেব। তারা মোটামুটি একটা প্লানও দিলেন। মুশকিল হয়ে গেল আমার দেশে। কেউ বলছে না যে, বিশ্বব্যাংক ছাড়া আমরা করতে পারব। তবে আমার জনগণ আছে, বাংলাদেশের মানুষ আছে। আমাদের দেশে যারা জ্ঞানী-গুণী প্রত্যেকে বলে এটা করা সম্ভব না। আমি বলেছি, আমরা করব। ১৭ কোটি মানুষ, টাকা এসে যাবে। আমরা তো একদিনে সব টাকা খরচ করব না। আমরা আস্তে আস্তে পদ্মা সেতু করব।

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি প্রমাণ দিতে বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে পারে না। জানতে চেয়েছিলাম, দুর্নীতিটা কোথায়, আমি তো কাগজ চাই। কিসের ভিত্তিতে বলে দুর্নীতি হয়েছে। প্রমাণ চেয়ে চিঠি পাঠালাম। সেই চিঠির জবাবে বিশ্বব্যাংকের চিঠি পাওয়া গেল। সেই চিঠিতে ছিল, বিএনপির আমলে একটি সড়কে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল তা। আমি বললাম তখন তো আমি ক্ষমতায় ছিলাম না। এখানে আমার করণীয় কি?

বিশ্বব্যাংকের টাকা দিতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক শর্ত দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তারা বলছে, মন্ত্রীকে জেলে নিতে হবে, মশিউর রহমানকে জেলে দিতে হবে। মামলা করতে হবে। আমি বললাম, কোন অপরাধে মামলা? আমাদের অর্থমন্ত্রী উপদেষ্টা এসে আমাকে বললেন যে, ওরা এই শর্ত দিচ্ছে, এটা মানলে টাকা দেবে। আমি বললাম, ওদের টাকা নেব না। যেদিন টাকা হবে সেদিন করব। তারা বললেন, নির্বাচনে কি হবে? আমি বললাম, জনগণ যদি ভোট না দেয়, আমি ক্ষমতায় যাব না। নিজের আত্মসম্মান বিক্রি করে তাদের শর্ত মেনে টাকা নিতে হবে নাকি! আমি তাদের বলে দিতে বলেছিলাম, দেশের জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আমি তা করবই। শেষ পর্যন্ত আমরা তা করে দেখিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও . ইউনূস নিয়ে সেই একই প্রশ্ন। আমি খালি বলেছি, ওই পদে কী মধু আছে? এখন একটা কথা বলি। এমডি পদে যে কী মধু, এখন যদি দেখেন খোঁজ পাবেন। শ্রমিকরা মামলা করলে, গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট এলে আরও তথ্য বের হবে। দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ইতিহাস বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করল, সে জাতি কেন মাথা নিচু করে চলবে? ’৭৫ এর পর অকুতোভয় এই জাতিকে একেবারেই মর্যাদাহীন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন বিশ্বের সবাই বলছে- বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবেই ইনশাল্লাহ।

×