![বদলি নীতিমালা মেনে আসন সংরক্ষণ করা হয় না ভালো স্কুলে বদলি নীতিমালা মেনে আসন সংরক্ষণ করা হয় না ভালো স্কুলে](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/স্কুল-2407051804.jpg)
.
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষার্থী বদলি নীতিমালায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের স্কুল-কলেজে ভর্তির জন্য পৃথক নীতিমালা রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি স্কুলগুলো তা মানলেও বেসরকারি নামি প্রতিষ্ঠান এই নীতিমালা মানছে না। ফলে সরকারি চাকরিজীবীরা সন্তানের স্কুলে ভর্তির বিষয়ে মারাত্মক বিড়ম্বনায় পড়ছেন। সম্প্রতি বদলিজনিত কারণে ঢাকা জেলা যুগ্ম জজ, উপ-কর কমিশনার ও গোয়েন্দা সংস্থার সন্তানদের ভর্তির জন্য রাজধানীর স্বনামধন্য বিদ্যালয়ে আবেদন করেন। তবে দিনের পর দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘুরেও কোনো সুরাহা হয়নি। পরে বাধ্য হয়েই সন্তানকে অন্য স্কুলে ভর্তি করতে হয়েছে। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, নীতিমালায় যে আসন সংরক্ষণ করার কথা সেটি স্কুল কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে না।
ভর্তির বিষয়ে স্কুলগুলোর আবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মো. হূমায়ুন কবীর বদলিজনিত কারণে তার মেয়ে ইফফাত হাসিনা কবিরকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির প্রভাতি শাখায় ভর্তির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু আবেদন করার পরও সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে কোনো ধরনের সাড়া মেলেনি। পরে মাউশির ঢাকা অঞ্চলের কাছে আবেদন করেন তিনি। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পাননি তিনি।
একই অবস্থা ঢাকা সহকারী কর কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহর। তিনি তার মেয়ে নিযিরা সুলতানার জন্য গত বছর ভিকারুননিসার মূল শাখায় ৫ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু আবেদন করে নানাভাবে ভর্তির জন্য চেষ্টা-তদবির করেও কাক্সিক্ষত স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি। আবেদনপত্র সূত্রে জানা যায়, তার মেয়ে চট্টগ্রামের লতিফপাড়া সরকারি প্রাথমিকে পড়েছে। বদলিজনিত কারণে ঢাকায় বসবাস করার সুবাদে তিনি তার সন্তানকে কর্মস্থলের কাছাকাছি স্কুলে ভর্তি করতে একাধিকবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তার মেয়েকে ভর্তি করতে পারেননি।
একইভাবে বিপদে পড়েছেন উপ-কর কমিশনার মহিদুল ইসলাম। তিনি চলতি বছরে চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে ঢাকা কর অঞ্চল-১৫ তে তাকে বদলি করা হয়েছে। আবেদনে তিনি জানিয়েছেন তার মেয়ে চট্টগ্রামের গ্রামার স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। সেখানে তার গড় ফলও ৯৮ এর বেশি। তার বাসাও বেইলি রোডে। সে কারণে তিনি তার কন্যা লানিকা ফজিলতকে ভিকারুননিসার দ্বিতীয় শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করতে নানা চেষ্টা করেছেন।
আবেদন করা এসব অভিভাবক জনকণ্ঠকে জানান, বছরের মাঝ সময়ে চাকরি সূত্রে বদলি হলে পরিবার নিয়ে ব্যাপক সংকটে পড়তে হয়। তবে সবচেয়ে বেশি যে ধকল সামলাতে হয় তা হলো ভালো মানের একটি স্কুলে সন্তানকে ভর্তি নিয়ে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালাও রয়েছে। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসন সংরক্ষণের কথা বলা আছে। কিন্তু রাজধানীর অধিকাংশ স্কুল নীতিমালা মানছে না। বরং ওপর মহলের তদবির হলে কোনো কারণ ছাড়াই ভর্তি করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকোনুজ্জামান সেখ জনকণ্ঠকে জানান, এই ধরনের আবেদন আসার পর তা গভর্নিং বডিতে উত্থাপন করা হয়। সেখান থেকে পাস হলেই ভর্তির সুযোগ মেলে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব আবেদন পড়ে থাকে। সিটও ফাঁকা রাখা হয়। হেভিওয়েট কোনো তদবির ছাড়া এসব ভর্তি করা হয় না। আসন ফাঁকা রেখে কেন সুযোগ দেওয়া হয় না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের আভিজাত্য বোঝাতেই অধ্যক্ষরা এমন আচরণ করে থাকেন।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বদলি নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বদলিজনিত কারণে জেলা থেকে পার্শ্ববর্তী জেলা বা এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় বদলি হলে তার সন্তানকে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রমাণকসহ ভর্তি কমিটির সভাপতি বরাবর বদলির আদেশের তারিখ থেকে দশ মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। তবে, আন্তঃজেলা উপজেলায় বদলিজনিত কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের ভর্তির জন্য শ্রেণিকক্ষে স্থান সংকুলান সাপেক্ষে প্রতি শ্রেণিতে মোট আসনের ৫% অতিরিক্ত সংরক্ষিত থাকবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীর আন্তঃ জেলা বদলির ক্ষেত্রে বদলিকৃত কর্মস্থলের উপপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অঞ্চল প্রত্যয়নক্রমে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের বদলির সুযোগ থাকবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ক্যাচমেন্ট এরিয়া মানতে হবে।
মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক এ এস এম আব্দুল খালেক জনকণ্ঠকে বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী এই ধরনের বদলির বিষয়টি পর্যালোচনা করবে আঞ্চলিক অফিস। দেখা যাচ্ছে, ভালো স্কুল আমাদেরকে কোনো পাত্তাই দেয় না। যে কারণে নিয়ম-বিধিমালা থাকার পরও আমাদের কিছু করার নেই। কোন স্কুল-কলেজ এই নিয়ম মানছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিকারুননিসা, রাজউক, রেসিডেন্সিয়াল এই বিধিমালা মানে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ভালো স্কুলকে নিয়ম মানতেও দেখা যায়।