ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

কোটাবিরোধী আন্দোলন

ফের মহাসড়ক রেল অবরোধ করল শিক্ষার্থীরা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৪ জুলাই ২০২৪

ফের মহাসড়ক রেল অবরোধ করল শিক্ষার্থীরা

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ এলাকা অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা

আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফের সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশের পাশাপাশি দাবি আদায় না হলে টানা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। খবর বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ও সংবাদদাতার।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও ২০১৮ সালের মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। অবরোধের ফলে ব্যস্ততম শাহবাগ ও চারপাশের এলাকায় যান চলাচল ৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে কয়েক হাজার চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। তীব্র বৃষ্টির মধ্যেও শাহবাগ মোড় ছাড়েননি তারা। এতে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। চাকরিপ্রত্যাশীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ার আগেই পুলিশ সদস্যরা জড়ো হন। কিন্তু তাদের বাধা দিতে দেখা যায়নি। 
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেয়। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সন্ধ্যা ৬টায় নতুন তিন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। সেগুলো হলো-শুক্রবার ৫ জুলাই অফলাইন ও অনলাইনে কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে জনসংযোগ, ৬ জুলাই বিকেল তিনটায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল, ৭ জুলাই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের মাধ্যমে ছাত্র ধর্মঘট পালন করা।
এদিকে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলন করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। মাস্টারদা সূর্যসেন হলের গেটে তালা দেওয়াসহ অন্যান্য হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সূর্যসেন হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতারা হুমকি, গেটে তালা ও ব্যানার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।

এর কিছুক্ষণ পর পৌনে ১২টার দিকে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের বড় মিছিল সূর্যসেন হলের গেটের সামনে আসে। পরে হলের ভেতরে থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসেন এবং মিছিলে যোগ দেন। এছাড়াও বিজয় একাত্তর হল ও কবি জসিম উদদীন হলেও ছাত্রদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আন্দোলন যেতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আন্দোলন যাবে কিনা সেটা শিক্ষার্থীদের বিষয়। তবে কোটা নিয়ে তো আন্দোলনের কিছু নেই, এটা আদালতের বিষয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ॥ সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার প্রতিবাদে ও আপিল বিভাগ শুনানির দিন পেছানোয় পুনরায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহীদ মিনার হয়ে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আমরা বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছি। অনতিবিলম্বে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’
আন্দোলন চালিয়ে নিতে কমিটি গঠন ॥ এদিকে হাইকোর্টে শুনানি না হওয়ায় কোটাবিরোধী আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কায় আন্দোলন চালিয়ে নিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ৪৭ ব্যাচের আল বেরুণী হলের আবাসিক ছাত্র আরিফ সোহেলকে আহ্বায়ক ও মওলানা ভাসানী হলের মাহফুজ ইসলাম মেঘকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংশপ্তক’ ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ॥ একই দাবিতে বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রাম-রাঙামটি মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১২টা থেকে তারা সড়কে অবস্থান নেয়। এতে সড়কের উভয় লেনে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে শহীদ মিনার চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড় ও জিরো পয়েন্ট হয়ে ১নং গেটসংলগ্ন চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা পৌনে এগারোটায় তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না’, ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে, দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ প্রভৃতি বিভিন্ন স্লেøাগান ও প্ল্যাকার্ডে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বই পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে বই পুড়িয়ে আড়াইটা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাদুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল রেখে হাইকোর্টের আদেশ এটি অন্যায়। আমাদের সঙ্গে নাটক চলছে। এই নাটকের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। 
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নগরীর জিরো পয়েন্ট অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ জিরো পয়েন্টের চতুর্পাশের খুলনা-ঢাকা, খুলনা-যশোর, খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের প্রবেশ মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জিরোপয়েন্টের চতুর্দিকের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম বিপাকে পড়ে দূরপাল্লার যানবাহনের যাত্রীরা।
এদিকে, অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায় বাতিল ও কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানান।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা সংস্কারসহ চার দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক ২০ মিনিট অবরোধ করেন তারা। এ সময় তারা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও অন্যান্য সকল সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানান। 
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ আবারও ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের  জব্বারের মোড় সংলগ্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করে। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় হাইকোর্টের ওই রায় বহাল রাখার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

মিছিলটি বাকৃবির কে. আর মার্কেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ভবন ঘুরে জব্বারের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় ঢাকা থেকে জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। ‘আপিল বিভাগের টালবাহানা, মানি না মানব না’, শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠায় নাই’ শিক্ষার্থীদের এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে বাকৃবির  আব্দুর জব্বারের মোড় সংলগ্ন রেল লাইন।

×