ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১

সমঝোতা চায় সরকার

আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আজ বৈঠক

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ০০:০৭, ৪ জুলাই ২০২৪

আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আজ বৈঠক

বুধবার শাহবাগ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন থামাতে উদ্যোগী হচ্ছে সরকার। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে টেলিফোনে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে শিক্ষক নেতারা বৈঠক করবেন বলেও জানা গেছে।

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি আমাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেছেন। সকালে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনো সময় জানানো হয়নি। আন্দোলন চলমান থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
এদিকে একাধিক সূত্র জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে যে, এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী একাধিকবার টেলিফোনে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আন্দোলন বন্ধ করে ক্লাসে ফেরারও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে শিক্ষকদের বড় অংশ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাচ্ছেন। এ নিয়ে কেউ কেউ দৌড়ঝাঁপ করছেন বলেও জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, শিক্ষামন্ত্রী মৌখিকভাবে আমাদের সঙ্গে অনেক কথা বলেছেন। দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও ভালো বার্তা এসেছে। বুধবার সারাদিনই তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তবে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা জনকণ্ঠকে জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথাবার্তা হলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কারও সঙ্গে বৈঠক হয়নি। যা কথাবার্তা হয়েছে সব অনানুষ্ঠানিক। বুধবার সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি আমাদের দাবির বিষয়গুলো ফোনে শুনেছেন। তবে সব তো আর ফোনে বলা সম্ভব হয় না। আমরা কেন আন্দোলন করছি সেটিও জানতে চেয়েছেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি বলেও এই অধ্যাপক জানান।
অচল ৩৫ বিশ^বিদ্যালয় ॥ শিক্ষক-কর্মচারীদের টানা তৃতীয় দিনের আন্দোলনে অচল দেশের সব পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়। বন্ধ হয়ে গেছে ক্লাস কার্যক্রম। স্থগিত হয়েছে শত পরীক্ষা। এরসঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেশন জটের শঙ্কা জেগেছে। এমন অবস্থায় শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে অর্থমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ ও তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। এ ছাড়াও সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিল, আলাদা বেতন কাঠামো ও সুপার গ্রেড চালুর দাবি জানান তারা। দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে লাগাতার কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সারাদেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, আলোচনায় বসুন। অর্থমন্ত্রী কেন আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছেন? তিনি বলেন, যারা এই স্কিম করেছেন, তারা নিজেরা এর আওতায় আসুন এবং দেখুন। আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, দাবি মেনে নেওয়া হলে আমরা কর্মবিরতির আন্দোলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করব, অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। এদিকে একই দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন ঢাবি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। বুধবার সকাল ১০টা থেকে ঢাবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।

এ সময় ঢাবি কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল মোত্তালিব বলেন, যে অধিকার জাতির জনক আমাদের দিয়ে গেছেন সেই অধিকার হরণ করার অধিকার কারও নেই। তিনি আমাদের স্বায়ত্তশাসন দিয়ে গেছেন। দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই বিশ্ববিদ্যালয় কখনো মাথানত করে না। 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ॥ জাবি সংবাদদাতা জানান, টানা তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষকরা।

একই দাবিতে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। তিন পক্ষের এ আন্দোলনে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক বিভাগের পরীক্ষা। রয়েছে বড় সেশনজটের আশঙ্কা। দ্রুতই শ্রেণিকক্ষে ফিরতে চান শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচতলায় দুপুরের দিকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।

এ সময় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া অর্থমন্ত্রীর ‘শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক’ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ দাবি করা হয়। এ ছাড়া নতুন প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে জাবি শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, ‘আমরা এই বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি জারি রাখব।’ অন্যদিকে, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

আবাসিক হল ও প্রশাসনিক অফিসগুলোতে স্বাক্ষর হচ্ছে না কাগজপত্র। বিভাগগুলোতে হচ্ছে না শ্রেণি কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এতে বড় সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। তাই ক্ষতি এড়াতে যতদ্রুত সম্ভব শ্রেণিকক্ষে ফিরতে চান তারা।
বাকৃবি ॥ সংবাদদাতা জানান, সর্বজনীন পেনশনে প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অন্যদিকে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। ফলে চতুর্মুখী আন্দোলনে উত্তাল বাকৃবি ক্যাম্পাস।

বুধবার (৩ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ করিডরের বিভিন্ন অংশে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সর্বাত্মক কর্মবিরতির সঙ্গে পৃথকভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় চলমান আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কুশপুতুল আগুনে পোড়ায় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীবৃন্দ।

খুলনা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস জানান, বুধবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (খুকৃবি) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। কর্মবিরতি চলাকালে খুবি ক্যাম্পাসে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। একই দাবিতে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের অংশ হিসেবে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা।

অপরদিকে একই কর্মসূচি পালন করেছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। এ সময় বক্তারা বলেন, সর্বাত্মক কর্মবিরতির কারণে সকল ডিসিপ্লিনের ক্লাস, অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস, মিডটার্ম, ফাইনাল ও ভর্তি পরীক্ষাসহ সকল ধরনের পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।

×