ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৫ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১

একনেকে ৫ হাজার কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন

বন্যার শঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৮, ৩ জুলাই ২০২৪

বন্যার শঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ঢাকায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন

বন্যার বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বন্যা হতে পারে, পূর্বাভাস সে রকম পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ২১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ১৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। 
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব বিষয় তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব) আব্দুস সালাম। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে এক প্রকল্পের জন্য যেন একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়, সেই কথা বলেছেন তিনি। এ ছাড়া ঢাকা অঞ্চলের আশপাশে যেখানে জমি আছে সেগুলোতে চাষাবাদ ত্বরান্বিত করার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জমি অধিকাংশ চলে যাচ্ছে আবাসন প্রকল্পের জন্য। তবে যেসব জমি এখনো আছে সেগুলো যাতে ফাঁকা পড়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব এলাকায় তিন ফসলি বা দো-ফসলি জমিতে ফসল ভালো হয় সেসব এলাকায় প্রকল্প নেওয়া যাবে না।’ পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। 
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ৪১ এর বাস্তবায়ন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ সময়ে যেসব প্রকল্পের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেই টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সারা দেশের যেসব থানা জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে সেগুলো সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারাই যদি নিরাপদ না থাকে তাহলে কীভাবে হবে?’ প্রধানমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রকল্পের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যেহেতু বৃষ্টির কারণে মাঠে প্রকল্পের কাজ করা যায় না সেজন্য কাগুজে প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।’
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘কাজের মান নিশ্চিত করতে সবারই দায়িত্ব আছে। ৪ জুলাই সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। যাতে প্রকল্পের কাজ দ্রুত হয়। এ বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে। ২০৪১ সালের দিকে উন্নত দেশে চলে আসব আমরা। এজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।’ 
একনেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ প্রকল্প অনুমোদন ॥ ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ২১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ১৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো- কৃষি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে বরগুনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের রায়পুরা ১২০ মেগাওয়াট (এসি) পিক গ্রিড টাইড সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প; শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিসিক মুদ্রণ শিল্প নগরী প্রকল্প; সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রাম স্থাপন প্রকল্প; মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কুমিল্লা-সালদা-কসবা (সৈয়দাবাদ) সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নগরাঞ্চলের ভবন সুরক্ষা প্রকল্প; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেশের বিভিন্ন স্থানে থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, একটি একনেক বা মন্ত্রী পরিষদ বৈঠক হওয়া মানে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া নয়, এই বৈঠক হওয়া মানে একটি লম্ফ। এ অর্থবছর অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ বছর। সামনে আমরা এলডিসিতে উত্তরণ করছি। একনেকে প্রকল্প পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে গেলে উন্নয়নকে আমরা এগিয়ে নিতে পারব। আমরা উন্নয়নকে এগিয়ে নিতেই কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. এমদাদউল্লাহ মিয়ান, কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য আব্দুল বাকী এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন।

×