ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’নিয়ে এলকপের আলোচনা 

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ২ জুলাই ২০২৪; আপডেট: ১৫:৩৭, ২ জুলাই ২০২৪

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’নিয়ে এলকপের আলোচনা 

শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে।  

বেসরকারি গবেষণা ও মানবাধিকার সংস্থা এম্পাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অফ দ্য কমন পিপল (এলকপ) আজ ২ জুলাই রাজধানীর গুলশানের সিক্স সিজন্স হোটেলে “বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনাসমূহ” শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে।  

অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে স্বাগত বক্তব্য দেন এলকপের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান । 

তিনি বলেন, দুর্নীতি আমাদের সমাজের মূল ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ন্যায়বিচারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেয়। এই মহামারী মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে তার এক ভাষণে বলেছিলেন ‘এই বাংলার কৃষক ও শ্রমিকরা দুর্নীতি করে না, দুর্নীতি করে শিক্ষিত ব্যক্তিরা।’ আমরাই এই শিক্ষিত সমাজের অংশ। সুতরাং আমাদের  উচিত দুর্নীতিবাজদের খুঁজে বের করে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে তাদেরকে শাস্তির সম্মুখীন করা। এতে করে আইনের সুশাসন যেমন প্রতিষ্ঠা হবে তেমনি বাংলার খেঁটে খাওয়া কৃষক, চাষি ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এই দুর্নীতিবাজদের জায়গা হতে পারে না। 
 
সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। 

ড. আহমদ জোর দিয়ে বলেন, 'দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই বাধাগ্রস্ত করে না, বৈষম্য ও দারিদ্র্যকেও বাড়িয়ে দেয়। দুর্নীতির প্রধান কারণ নৈতিকতা ও মুল্যবোধের অবক্ষয়। দুর্নীতি রোধে আমাদের নীতি আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। আমরা বলার সময় ঠিকই বলছি যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুন্য সহনশীলতা নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে কিন্তু কাজের বেলায় তার প্রয়োগ নেই। ফলে একজন দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে এবং তাকে দেখে আরেকজন দুর্নীতি করার সাহস পেয়ে যাচ্ছে।  এ কারণেই আজ দুর্নীতি এতো পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুর্নীতিবাজদের রুখতে সরকারকে দুষ্ট চক্রকে (সিন্ডিকেট) চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওয়াত আনতে হবে, মুল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ প্রদান করতে হবে। সকল নাগরিকের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও দেশের ন্যায়সঙ্গত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই শক্তিশালী অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।  

ড. আহমদ ছাড়াও বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার। 

ব্যারিস্টার আখতার সভায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনি কাঠামো ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে যাতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। 

তিনি তার বক্তব্যে ড. ইউনুসের দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের অবকাঠামো, লোকবল ও সুনাম ব্যবহার করে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অনুমোদন ব্যতিরেকে তার একান্ত অনুসারীদের নিয়ে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন করতঃ প্রতিষ্ঠানগুলোতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ন্ত্রণ করছেন। 

উক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোন সুবিধা পাচ্ছে না। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র ঋণ গ্রহীতাদের অর্থে প্রতিষ্ঠিত। তিনি একদিকে সারা বিশ্বে দারিদ্রতা বিমোচনের কথা বলছেন আর অন্যদিকে দরিদ্র জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দূর্নীতির বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পদ গ্রামীণ ব্যাংকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন দুর্নীতি যেই করুক না কেনো, তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। কোনও ব্যক্তিই আইনের উর্ধ্বে নয়। 

বক্তব্য উপস্থাপন পর্বের শেষে মুক্ত আলোচনা অধিবেশনের আয়োজন করা হয় যেখানে সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এবং মানবাধিকার কর্মীরা প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন। 

সবশেষে ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের অবশ্যই রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে সততা, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকালই সংসদে বলেছেন যে তিনি এবং তার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছেন। আমাদের উচিত তার এই নীতি বাস্তবায়নে তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশে পাশে এখন অনেক চাটার দল। এই চাটার দলের হাত থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। 
 
পরিশেষে, এলকপ-এর নির্বাহী পরিচালক, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদে ও সাচ্ছন্দে বসবাসের জন্য একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে, সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।

 
 

তাসমিম

×