ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

আবারও সেশনজটের শঙ্কা

আন্দোলনে স্থবির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২ জুলাই ২০২৪

আন্দোলনে স্থবির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

আন্দোলনে স্থবির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে একযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

একই দিনে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেওয়া প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার প্রতিবাদে ও প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল থেকে পৃথকভাবে উভয় কর্মসূচি পালন শুরু হয়। এই দুই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা। এভাবে দীর্ঘদিন কর্মসূচি চললে সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমকে প্রত্যাহারের দাবিতে এক বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের (বাবিশিসফে) সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া। এ সময় একই দাবিতে পৃথক বিবৃতিতে ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই দাবিতে সোমবার সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে একযোগে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা ধরে চলে এই অবস্থান কর্মসূচি। তবে দুই ঘণ্টা কর্মসূচি পালন করলেও শিক্ষকরা কোনো ক্লাসে যোগ দেননি। তাতেই স্থবির হয়ে পড়ে দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।    
কেন্দ্রীয়ভাবে রবিবার সকাল থেকেই সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি ক্যাম্পাসজুড়ে পালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনের কক্ষগুলোতে তালা দেওয়া। এমনকি বিশ^বিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচিতে শিক্ষকদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। এ ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এক থেকে দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা একাডেমিক কোনো কার্যক্রমে অংশ নেব না।  
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, এদিন ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় (খুকৃবি) শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করে। এ সময় বন্ধ রাখা হয় একাডেমিক ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। সর্বাত্মক কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এসএম ফিরোজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ে। ক্লাস-পরীক্ষা না থাকায় একাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। সকালে একাডেমিক ভবন খুললেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি।  
এক লিখিত বক্তব্যে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন কার্যকর না হওয়ায় পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বেরোবিতে সকল ক্লাস, পরীক্ষা, সমন্বয় সভা, ভর্তি কার্যক্রম ও প্রভোস্ট অফিস বন্ধ থাকবে। একই দাবিতে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে কর্মবিরতি পালন করেছে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এদিন দুপুর বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। 
এ সময় পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলনকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের আন্দোলন উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, পেনশন স্কিম বাতিলে আমাদের যে আন্দোলন, এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্যই। নতুন পেনশন স্কিমে আমাদের বর্তমান শিক্ষকদের কোনো ক্ষতি হবে না, যেসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন তাদেরই ক্ষতি হবে। আমরা তাদের আর্থিক স্বচ্ছতা ও স্বকীয়তা রক্ষায় আন্দোলন করছি।

আমরা আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কোনো ক্ষতি হলে আমরা পরবর্তীতে রুটিন সমন্বয় করে সে ঘাটতি পুষিয়ে দেব। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধ্যাপক ড. হোসেন আরা বেগম, শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. মো. মমিন উদ্দীনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক সমিতির নেতারাসহ বক্তব্য রাখেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। 

বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির কোন্দলে তিন মাসের মতো বন্ধ ছিলো কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়। এবার পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে ফের বন্ধ হয়ে গেছে বিশ^বিদ্যালয়টি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফাহমিদা কানন বলেন, শিক্ষক সমিতি ও ভিসি দ্বন্দ্বের ফলে গত তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। অবশেষে ২৩ জুন স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতির ফলে এই কয়দিনও ক্লাস কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার আগেই আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল, যা এখনো হয়নি। এখন আবার ক্লাস হচ্ছে না শিক্ষকদের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির কারণে। আমাদের ক্ষতির দায়ভার নেবে কে? এভাবে পিছিয়ে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আমরা। একই দাবিতে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। এ ছাড়া বন্ধ রাখা হয় শ্রেণি কার্যক্রম।  কর্মবিরতির কারণে কোনো ক্লাস হয়নি নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয়ে। অন্যান্য দাপ্তরিক কার্যক্রম থেকেও বিরত থেকেছেন শিক্ষকরা।

দুপুর ১২টার দিকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে জড়ো হয়ে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সময় শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক হাফসা আক্তার, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম, শিক্ষক আঙ্গুর হোসেন, শোভন রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  
সোমবার সকাল থেকে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দরা। এ সময় বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার দাবি করে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ড. তারেক মাহমুদ আবীর বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সোমবার থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এ আন্দোলনের কারণে ২০২৩-৩৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে বিশ^বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।  
যে কারণে শিক্ষকদের আন্দোলন ॥  
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুর দিনই চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’। ১ জুলাই থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা চাকরিতে যোগ দেবেন তারা এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হবেন। গত ১৩ মার্চ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ।

এরপর প্রত্যয় স্কিম পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। এ কমিটির সদস্যরা হলেনÑ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক অধ্যাপক আবুল বারকাত, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা ইয়াসমীন, একই বিভাগের অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মাসুদুর রহমান এবং ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সজীব হোসেন। সেই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমান ব্যবস্থায় একজন অধ্যাপক মাসে পেনশন পান ৪৫ হাজার ৭৯০ টাকা।

এ জন্য তাদের বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না। নতুন ব্যবস্থায় ৩০ বছর বয়সে যোগ দিয়ে ৬৫ বছর বয়সে অবসর নিলে মাসে মাসে বেতন থেকে টাকা কাটার পর পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা। কিন্তু আনুতোষিক বা গ্রাচ্যুইটি বাবদ এককালীন ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা নতুন ব্যবস্থায় পাওয়া যাবে না। এই টাকা পেনশন তহবিল বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তা যোগ করলে বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন দাঁড়ায় মাসে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

এ ছাড়া বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশনারের (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মী) মৃত্যুর পর তার নমিনি বা মনোনীত ব্যক্তি (স্বামী/স্ত্রী) আজীবন পেনশন সুবিধা পান। নতুন ব্যবস্থায় পেনশনারের মৃত্যু হলে তার ৭৫ বছর বয়স যেদিন হতো, সেদিন পর্যন্ত পেনশন পাবেন মনোনীত ব্যক্তি, আজীবন নয়। এখন বছর বছর পেনশন বাড়ে, অর্থাৎ ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) হয়। নতুন ব্যবস্থায় পেনশন বাড়বে না। অর্জিত ছুটির বিপরীতে অবসরকালে এখনকার মতো টাকা পাওয়া যাবে না।

অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটির (এলপিআর) বিষয়ে নতুন ব্যবস্থায় কিছু বলা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষকরা ৬৫, কর্মকর্তারা ৬২ ও কর্মচারীরা ৬০ বছর বয়স হলে অবসরে যান। নতুন ব্যবস্থায় ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা এখন পেনশনের সঙ্গে বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও একটি বৈশাখী ভাতা এবং মাসে মাসে চিকিৎসা ভাতা পান। নতুন ব্যবস্থায় বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা নেই।
এদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আন্দোলনের কারণে সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ঢাবির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসিন হাসান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদুল আজহার পর ক্যাম্পাস খোলার কথা থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ছিলো। এ আন্দোলন কবে শেষ হবে কেউ জানে না। যার কারণে স্বাভাবিকভাবে আমরা সেশনজটের আশঙ্কা করছি।  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এর আগেও আন্দোলন করেছি। তখন ক্লাস বর্জন করলেও পরীক্ষা চলমান ছিল। পরে আমরা শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস করিয়ে পুষিয়ে দিয়েছি। সে জন্য জটিলতা হয়নি। এবারের আন্দোলন দীর্ঘায়িত হোক এবং আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হোক আমরা কখনো চাইব না।

পরীক্ষা পেছালে সেশনজটের শঙ্কা থাকে। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করব। কিছু কিছু জায়গায় শিথিলতা আনা যায় কিনা, বিশেষ করে পরীক্ষা সংক্রান্ত জায়গায় আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব। এতে করে সেশনজটের শঙ্কা থাকবে না।

×