ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

ইউরোপে মানবপাচার চক্রের হোতা মাহাবুব গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৪, ২ জুলাই ২০২৪

ইউরোপে মানবপাচার চক্রের হোতা মাহাবুব গ্রেপ্তার

মাহাবুব পাঠান

লিবিয়ায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে দেশের স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের প্রধান মোহাম্মদ মাহাবুব পাঠানকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে আটক করা হয়। মাহাবুব পাঠান দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে লিবিয়ায় অবস্থান করে লিবিয়ার বেনগাজীর বাংলাদেশী কমিউনিটিকে নেতৃত্ব প্রদানের আড়ালে মানবপাচার চক্র পরিচালনা করছিল।

সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশনায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাতে তাকে ধরা হয়। মানবপাচারে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারামতে জবানবন্দি প্রদান করেছেন। 
এ বিষয়ে সিআইডির জনসংযোগ কর্মকর্তা এডিশনাল এসপি আজাদ রহমান বলেন, একটু ভাল জীবনযাপনের আশায়, পরিবারের সদস্যদের সুখে রাখতে ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় বাংলাদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এদেশের বহু মানুষ।

একটা সুন্দর জীবনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমানো এ সকল মানুষের অনেকেই মানব পাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে হয়েছেন সর্বস্বান্ত ও নিঃস্ব। এ সব দালাল চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য সিআইডি প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় অভিযান চালিয়ে তাকে ধরা হয়। 
অভিযোগ রয়েছে-অবৈধ পথে লিবিয়ায় পাঠানোর পর তাদের আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে প্রেরণ করে  মুক্তিপণ আদায় করত ওই চক্র। মুক্তিপণ আদায়ের পর বিপজ্জনক নৌযাত্রার মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করত। ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে মাহাবুব  চক্রের শিকার  হয় ৬৪ বাংলাদেশীসহ ৭৫ জন অভিবাসী।

তারা তিন সপ্তাহ ধরে ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হন। পরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) -এর সহায়তায় তিউনিসিয়ায় থাকা এসব বাংলাদেশীকে ফেরত আনা হয়। তাদের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী  নড়িয়ার বাসিন্দা মিলন বেপারী (২৩)। তিনি এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেছেন। 
ওই মামলার তদন্তের সিআইডি নিশ্চিত হয়- চক্রটি মিলন বেপারী ও অন্যান্য ভিকটিমদের এমিরেটস বিমানে করে প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। এরপর দুবাই হতে বিমানযোগে মিসর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজী নিয়ে যায়। লিবিয়ার বেনগাজীতে মূলহোতা মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগীরা মাহাবুব পাঠান এর ক্যাম্পে তাদের আটক রাখে এবং শারীরিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের পরিবারের নিকট পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

গত ২ মে বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচি মনি বেগম আসামিদের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৯৯, হাজার টাকা প্রদান করে এবং বাংলাদেশে অবস্থান রত চক্রের সদস্য হেনা বেগমকে নগদ ৪ লাখ টাকা প্রদান করে। এরপর আসামি মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগীরা সুকৌশলে বাদীসহ অন্যান্য ভিকটিমদের ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে লিবিয়ার ত্রিপলিতে এই চক্রের সক্রিয় সদস্য মনির এর ক্যাম্পে প্রেরণ  করে। সেখানে বাদী ও ভিকটিমদের নিয়ে আটক করে দ্বিতীয় দফায় শারীরিক নির্যাতন করে টাকা দাবি করে।

এ অবস্থায় বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচি মনি পুনরায় হেনা বেগমের নিকট  নগদ চার লাখ টাকা প্রদান করেন। এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মিলন বেপারীর পরিবার মোট ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন। ১৫ দিন সেখানে আটকে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের পর ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগরে হাওয়ায় (বাতাসে) ভাসা একটি প্লাস্টিক নৌকায় আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলনকে তুলে দেওয়া হয়।

×