ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

ঢাকায় লক্কড়-ঝক্কড়  বাস চলবে না আজ থেকে অভিযান

ইব্রাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ০১:১৪, ১ জুলাই ২০২৪

ঢাকায় লক্কড়-ঝক্কড়  বাস চলবে না আজ থেকে অভিযান

.

রাজধানীতে আজ সোমবার থেকে কোনো ফিটনেসবিহীন, রংচটা ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল করতে পারবে না। গত ১৫ মে বিআরটিএ’র কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে ৩১ মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। পরে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তা ৩০ জুন বাড়ানো হয়। তাই ১ জুলাই থেকে ঢাকায় কোনো ফিটনেসবিহীন, রংচটা ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল করতে পারবে না বলে সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘অবশ্যই ১ জুলাই থেকে ঢাকায় কোনো ফিটনেসবিহীন, রংচটা ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল করতে পারবে না। ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। তাই ফিটনেসবিহীন, রংচটা ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলতে দেওয়া হবে না। এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে এ বিষয়ে বিআরটিএ’র নতুন চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
বিআরটিএ’র তথ্যমতে, গত মে মাস পর্যন্ত রংচটা, লক্কড়-ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন ৯৩৩টি গাড়ির মধ্যে ৮০৩টি গাড়ির ত্রুটিমুক্ত করা হয়েছে। বাকি ১৩০টি গ্যারেজে মেরামত অবস্থায় রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হয়েছিল। তাই ৩০ জুনের পর আর কোনো সময় বাড়ানো হবে না। তাই ১ জুলাই থেকে ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ব্যাহত থাকবে বলে বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা জানান। ১ হাজার মোটরযানের ফিটনেস নেই-বিআরটিএ
আরটিসি’র রুটের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পরিবহন কমিটি (আরটিসি)’র অনুমোদিত ৩৮৬টি বাস রুটের মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ১২৮ রুট। বাস না থাকায় বন্ধ রয়েছে ২৫৮টি রুট। সচল ১২৮টি রুটে ৭ হাজার ৪৯৪টি বাসের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু চলাচল করে প্রায় ৬ হাজার। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৪৬টি মোটরযানের কোনো রুট পারমিট নেই। এক রুটের বাস অন্য রুটে চলে ২ হাজারের বেশি। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার মোটরযানের ফিটনেস নেই বিআরটিএ’র একটি তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরটিসি’র তালিকায় দেখা গেছে, রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এ-২২৯ নম্বর রুটে বিভিন্ন মালিকের ২০টি সিলিং (মোটরযান) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইস্যুকৃত রুট পারমিট মোটযানের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৮টি। কিন্তু বাস্তবে এই গাড়ি চলে ৩৬টি। অন্য রুটে গাড়ি রয়েছে ২২টি। রুট পারমিটবিহীন গাড়ি রয়েছে ১৪টি। ফিটনেস মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান রয়েছে ৮টি।
একই অবস্থা এ-২৩৬ নম্বর রুটের। সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, লিংক রোড হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এই রুটে ২০ মোটরযানের অনুমোদন রয়েছে। তবে ইস্যুকৃত বাসের সংখ্যা ৯টি। পরিবহন কোম্পানির নাম উৎসব ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড। কিন্তু রুটে সব বাস চলাচল করে গুলিস্তান থেকে। এই রুটে ৪০টি বাস চলাচল করে। একটি বাসেও রুট পারমিট নেই। রাজধানীর বেশিরভাগ রুটের একই অবস্থা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিআরটিএ’র সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জনকণ্ঠ’কে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে আরটিসি’র অনুমোদিত রুটের সংখ্যা ছিল ৩৮৬টি। কিন্তু অনেক রুটে এখন আর বাস চলে না। অনুমোদন নেওয়ার পর বাস নামেনি এমন রুটও আছে। আবার এক রুটে অনুমোদন নিয়ে অন্য রুটে চলে। অনেকে আবার রুট পারমিট ছাড়াই কোম্পানির নাম ব্যবহার করে বাস চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। পুলিশের অসহযোগিতার কারণে পুরোপুরি কার্যক্রম চালানো সম্ভব্য হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
পুলিশের অসহযোগিতা বলতে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘অভিযান চলাকালে যে গাড়িটা ধরতে বলা হয় পুলিশ তা ধরতে পারে না। ধরে এমন একটি গাড়ি যার রুট পারমিট অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক আছে। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থা হলো পুলিশ। সড়কে শৃঙ্খলার জন্য পুলিশই যথেষ্ট। সারাদেশে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া বিআরটিএ’র পর্যাপ্ত জনবলও নেই যে সব স্থানে মনিটরিং করবে।’
ত্রুটিমুক্ত হলো ৮০৩টি গাড়ি ॥ বিআরটিএ’র তথ্যমতে, গত মে মাস পর্যন্ত রংচটা, লক্কড়-ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন ৯৩৩টি গাড়ির মধ্যে ৮০৩টি গাড়ি ত্রুটিমুক্ত করা হয়েছে। বাকি ১৩০টি গ্যারেজে মেরামত অবস্থায় রয়েছে। এগুলো হলো-  স্বদেশ পরিবহন ২৫টি, তানজিল পরিবহন ২০টি, আসমানী পরিবহন ৩০টি, প্রভাতী বনশ্রী ৩৭টি, শুভযাত্রা কোম্পানি ২৮টি, কোমল মিনিবাস ১৮টি, মনজিল এক্সপ্রেস ২৩টি, ঠিকানা পরিবহন ৬৬টি, শ্রাবণ ট্রান্সপোর্ট ২০টি, হিমালয় ট্রান্সপোট ১৭টি, মেঘলা ট্রান্সপোর্ট ৪০টি, আকাশ পরিবহন ৩৩টি, ভিক্টর ক্ল্যাসিক ১১৩টি, এম.এম. লাভলী পরিবহন ১৬টি, ভিআইপি পরিবহন ৫০টি, আজমেরী গ্লোরী ১১৩টি, ৬নং মতিঝিল ৮টি, ট্রান্স সিলভা ১১টি, গাবতলী এক্সপ্রেস ৪১টি, গ্রেট তুরাগ ৪২টি, নুরে-এ মক্কা ১২টি, রবরব পরিবহন ৪০টি। 
ঢাকার মতো লক্কড়-ঝক্কড় ও রংচটা বাস বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না বলে মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট থেকে তো লাভ নেই, তাই আমাদের আগে ফিটনেসের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্কাইপ (ধ্বংস করা) করার যে  প্রস্তাব এসেছে তা আমরা সমর্থন করছি। ঢাকা শহরে বর্তমানে যে পরিবহনগুলো আছে তা দৃষ্টিনন্দন করাই আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য ফিটনেস। ফিটনেস থাকতে হবে আগে। তারপর দৃষ্টিনন্দনের বিষয়টি আসবে।

×