ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে বৃষ্টি যানজটের ভোগান্তি

পরীক্ষা কেন্দ্রে সন্তান বাইরে ভিজেছেন অভিভাবকরা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ৩০ জুন ২০২৪

পরীক্ষা কেন্দ্রে সন্তান  বাইরে ভিজেছেন  অভিভাবকরা

কেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকদের ভিড়

আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল ভারি বৃষ্টিপাতের। তবে রাজধানীর ভোরবেলা বৃষ্টিমুখর ছিল না। বরং মেঘলা আকাশে সঙ্গী ছিল মৃদু বাতাস। এরপরও বৈরী আবহাওয়ার ভয়ে সকাল আটটা থেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রে ছুটেছেন পরীক্ষার্থীরা। পড়ার জন্য বই আর কলম- স্কেলের সঙ্গে ছিল ছাতাও। কিন্তু যারা রওনা দিতে দেরি করেছেন, তারা বেশ বিপদেই পড়েছেন। কারণ পৌনে ৯টা থেকেই শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। এর সঙ্গে সড়কে বাধে তীব্র জট। বৃষ্টি মাথায় জট ঠেলে পরীক্ষা কেন্দ্রে দৌড়েছেন পরীক্ষার্থীরা। কেউ দেরিতে কেউবা দুই-তিন মিনিট আগে। তবে সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিল পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরের চিত্রগুলো। কোনো রকম জায়গা না থাকায় অভিভাবকরা ঠাসাঠাসি করে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, শামিয়ানা না থাকায় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে দুয়ো দিয়েছেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, পরীক্ষাকেন্দ্রে সন্তান পরীক্ষা দিচ্ছে, আর বাইরে কাকভেজা ভিজছেন অভিভাবকরা। রবিবার শুরু হওয়া এইচএসসি সমমান পরীক্ষায় এমন চিত্রই দেখা গেছে। অবস্থায় বাধ্য হয়েই বৃষ্টিতে পরীক্ষা শুরু সময় সমন্বয়ের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। সংশ্লিষ্টরা জানান, এমন নির্দেশনা আগে দেওয়া হলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো।

রাজধানীর একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল সকাল যেসব পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন, তারা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেয়েছেন। কিন্তু পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়। সাড়ে ৯টার আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ পরীক্ষার্থীদের নেই। ফলে বাধ্য হয়েই যে যার মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। এত সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে কোনো দোকান-মার্কেট না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ছাতা হাতে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী অভিভাবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তীব্র বৃষ্টির ধকল ছাতা যে সইতে পারেনি তা অভিভাবকদের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে। আর এমন পরিস্থিতিকেই অপ্রীতিকর বলছেন তারা।

রামপুরা একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার আসন পড়েছে ফাহিমা খাতুনের। বাবা আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে মোটরসাইকেলে আসেন ফাহিমা। বাবা-মেয়ে দুজনই পুরোপুরি ভিজে গেছেন। প্লাস্টিকের ছোট ব্যাগে শুধুমাত্র প্রবেশপত্রটা বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করেছেন তিনি। আশরাফুল ইসলাম বলেন, মহাখালী থেকে এসেছি। ভাবলাম রাস্তায় যানজট থাকবে, মোটরসাইকেলে মেয়েকে কেন্দ্রে নিয়ে যাই। পুলিশ প্লাজার সামনে বৃষ্টিতে আটকা পড়ি। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখি প্রায় সাড়ে ৯টা বেজে যাচ্ছে। দ্রুত বৃষ্টিতে ভিজে এক টানে কেন্দ্রে এসেছি। মেয়েটা পুরোপুরি ভিজে গেছে।

বৃষ্টিতে রাস্তায় আটকা পড়ে অনেক পরীক্ষার্থীকে কাঁদতেও দেখা গেছে। খিলগাঁও মডেল কলেজে পরীক্ষাকেন্দ্র আসিফ হাসানের। সকালে সাইকেলে করে পরীক্ষা দিতে বের হন। ৯টার দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে আটকা পড়েন রামপুরা বাজার এলাকায়। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে সাইকেলে তালা লাগিয়ে বাসে উঠে রওনা হন আসিফ। যাওয়ার আগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসিফ বলেন, সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারব কি না জানি না। যদি পরীক্ষা দিতে না পারি আমার মায়ের স্বপ্নটা নষ্ট হয়ে যাবে।

বৃষ্টিতে পরীক্ষা শুরু সময় সমন্বয়ের নির্দেশনা পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বিবেচনায় বৃষ্টির সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। রবিবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশারের সই করা জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় যে, আগামী কয়েকদিন প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরীক্ষার দিনগুলোতে বৃষ্টি থাকলে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কেন্দ্রের মূল ফটক খুলে দিয়ে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে আরও বলা হয়, অনিবার্য কারণে কোনো কেন্দ্রের পরীক্ষা শুরু করতে আধাঘণ্টা কিংবা এক ঘণ্টা দেরি হলে জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই আধাঘণ্টা বা এক ঘণ্টা সময় সমন্বয় করে পরীক্ষা শেষ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।

এদিকে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বাকি আটটি সাধারণ বোর্ড কারিগরি এবং মাদ্রাসা বোর্ডে সকাল ১০টায় শুরু হয় এইচএসসি সমমান পরীক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, আটটি সাধারণ বোর্ডে এবার গড় অনুপস্থিতি ছিল .০৭ শতাংশ। সংখ্যায় তা ৯৯৭০। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিতির হার যশোর বোর্ডে .২৫ শতাংশ। আট বোর্ডে সব মিলিয়ে ২০ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঢাকা বোর্ডে একজনও এর মধ্যে নেই। তবে ময়মনসিংহে বহিষ্কারের সংখ্যা সর্বোচ্চ। এই বোর্ড থেকে ১১ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কন্ট্রোল রুম থেকে কারিগরি মাদ্রাসা বোর্ডের তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, আট শিক্ষা বোর্ড থেকে একজনও কক্ষ পরিদর্শককে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেনি। তবে জেলা সংবাদদাতাদের তথ্য বলছে, শুধুমাত্র কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গার্লস কলেজ থেকেই চার কক্ষ পরিদর্শককে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপরাধে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

দৌলতপুর গার্লস কলেজ কেন্দ্রে শিক্ষককে অব্যাহতি দৌলতপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, এইচএসসি পরীক্ষায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গার্লস কলেজ কেন্দ্রে চারজন শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রবিবার পরীক্ষা চলাকালে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্ব পালন করার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। এই শিক্ষকরা হলেন আল্লারদর্গা নুরুজ্জামান বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, বড়গাংদিয়া নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক জাহিদ হোসেন আহসাননগর কারিগরি কলেজের প্রভাষক মামুন অর রশিদ মাজহারুল হক।

দৌলতপুর গার্লস কলেজ কেন্দ্রের সচিব অধ্যক্ষ রেজাউল করিম জানান, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মোবাইল ফোন নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করার সময় চারজন শিক্ষকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। এরমধ্যে ছাত্র সাত লাখ ৫০ হাজার ২৮১ জন এবং ছাত্রী সাত লাখ ৫০৯ জন। এবার মোট কেন্দ্র দুই হাজার ৭২৫টি মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাজার ৪৬৩টি। কিন্তু সিলেটে বন্যার কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। যা আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ২০২৪ সালের পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর পূর্ণ সময়ে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

×