ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন

সংসদে বাজেট পাস

সংসদ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ৩০ জুন ২০২৪

সংসদে বাজেট পাস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হয়

জাতীয় সংসদে রবিবার নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মধ্যদিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। এই বাজেট পাসের মধ্যদিয়ে জাতীয় সংসদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১২ লাখ ৪১ হাজার ৭৫২ কোটি ৩২ লাখ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে। এই অর্থের মধ্যে সরকার পুরো অর্থবছরে লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে পারবে। এটিই হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নীট বাজেট। এর বাইরে এবারও নির্দিষ্টকরণ বিলে অতিরিক্ত লাখ ৩২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এই অর্থ ব্যয় হবে না। মূলতসুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারহিসেবে অর্থমন্ত্রী গত জুন লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছেন সেটিই ব্যয় হবে। এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আজ পহেলা জুলাই থেকে নতুন এই বাজেট কার্যকর হবে।

স্পিকার . শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার বেলা ১১টায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট পাসের কারণে এদিন অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত রাখা হয়। শুধু প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়। অধিবেশনের শুরুতেই বাজেট পাসের কার্যক্রম শুরু হয়। সরকার বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্যের উপস্থিতিতে প্রথমে বাজেটে ব্যয় বরাদ্দের ওপর আনীত মঞ্জুরি দাবিগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। 

এবারের বাজেটের বরাদ্দের ওপর ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি আনা হয়। এসব মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে স্বতন্ত্র বিরোধী দলের সদস্যরা মোট ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। সরকার বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী, তিনটি মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। দাবিগুলো হলো, আইন, শিক্ষা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। আলোচনা শেষে মঞ্জুরি দাবিগুলো কণ্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়।

এরপর দুপুর ১টা ৪৬ মিনিটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২৪ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। দফাগুলো বিলের অংশ হিসেবে গৃহীত হওয়ার পর ১টা ৫২ মিনিটে সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৪১ হাজার ৭৫২ কোটি ৩২ লাখ ০৯ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২৪ সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়। 

নির্দিষ্টকরণ বিলটি মূলত সরকারের গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা অন্যান্য সংস্থার দায়বদ্ধতার কারণে বাজেটে সরকারের বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু মূল বাজেটের এই অতিরিক্ত অর্থ কখনো ব্যয় হয় না, যা বাজেটের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাব মেলানো হয়। প্রকৃতপক্ষে গত জুলাই অর্থমন্ত্রী যে লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন, সেই অর্থই সরকার খরচ করতে পারবে। আর এই নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২৪ পাসের মধ্যদিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হলো। এই বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক মন্দা সফলভাবে মোকাবিলা করে চলমান উন্নয়ন বজায় রাখা উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।

এবারে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকার বিরোধী দলের মোট ২৩৪ জন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে গত শনিবার অর্থবিল ২০২৪ পাস হয়। রবিবার সকালে বাজেট পাসের কার্যক্রম শুরু হয়। সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদেরসহ সরকারি বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে বাজেট বাস্তবায়নের যাত্রাকে স্বাগত জানান।

এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের  আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ হামিদুল হক খন্দকার এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, মো. আবুল কালাম মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। তবে ওই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

পাস হওয়া বাজেটটি দেশের ৫৩তম বাজেট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে দশমিক শতাংশ। এই বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

নতুন অর্থবছরে কালো টাকার মালিকরা আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তাদের অঘোষিত সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী দেশের প্রচলিত আইন যা- থাকুক, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট, জমির পাশাপাশি নগদ অর্থসহ স্থাবর সম্পত্তির জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সংসদের ভেতরে বাইরে কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও প্রস্তাবটি বহাল রাখা হয়েছে।

নতুন অর্থবছরে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বহাল থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা কাটছাঁট করে ২৫ শতাংশ শুল্ক ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি বাতিল করতে হলে ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার সংশোধন করতে হবে। এরপরই ধরনের গাড়ি আমদানিতে কর আরোপ করা যাবে। কিন্তু এখনো সংসদে ধরনের কোনো বিল উত্থাপন হয়নি। ফলে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বহালই থাকছে। তবে আগামীতে সংক্রান্ত বিল পাসের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। ব্যাংকিং খাত ছাড়াও নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। 

এবারের বাজেটে পহেলা জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর-পরবর্তী পেনশন সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকছে। স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এই স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ২০২৫ সালের পহেলা জুলাই থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। এই অর্থবছর থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর-পরবর্তী পেনশন সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর করমুক্ত আয়কর সীমা বিদ্যমান সাড়ে তিন লাখ টাকাই বহাল থাকবে।

বাজেটে মূল্যস্ফীতি দশমিক শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপণ্যের ওপর উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, লবণ চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহকারীদের ঋণপত্রের ওপর কর হার এক শতাংশ করা হয়েছে।

×