ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১

বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা

দুর্নীতি করলে রক্ষা নেই

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ২৯ জুন ২০২৪

দুর্নীতি করলে রক্ষা নেই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বাজেটকে মোটেই উচ্চাভিলাষী মনে করি না। লক্ষ্য আমরা স্থির করি। শতভাগ কখনো পূরণ হয় না, পূরণ সম্ভবও না। তারপরও আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে, এখানে যাব। সেখানে যেতে পেরেছি। বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে পড়েনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ পিছিয়ে যাবে না। যে যতই চেষ্টা করুক দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না। এই স্বপ্নযাত্রার আকাক্সক্ষা পূরণ করবে এ দেশের মানুষ।
সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যেই হোক দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে ধরব। আমাদের জনগণ অত্যন্ত কর্মঠ, অত্যন্ত সৃজনশীল, কিছু কিছু মাঝখানে দুষ্ট প্রকৃতির লোক থাকে ওগুলো আমরা ধর্তব্যে নেই না। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলতে চাই। চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। দেশ আরও এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। 
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এ কথা বলেন। আলোচনার শেষ দিনে বিরোধী দলের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও বক্তব্য রাখেন। 
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, কালো টাকা সাদা না। এখন সব দেশে দাম বেড়ে গেছে। এখন ঢাকা শহরে এক কাঠা জমি থাকলে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারেন না। সেটা তারা আয়কর দিতে পারেন না। আয়কর দিয়ে যাতে তারা মূল ধারায় ফিরে আসে, মানে আয়কর দিয়ে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে, আর এই ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না করে, সেইজন্যই মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়।

অতীতে খালেদা জিয়াও এই সুযোগ নিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ধরনের সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকে নিয়েছিলেন। তারাও কিন্তু এরকম ভাবে সেই ২০০৭/২০০৮ বা তার পরবর্তীতে এভাবে কিন্তু তারা বৈধ করে নিয়েছিলেন। এমনকি বিএনপির সাইফুর রহমানও করেছেন। এরশাদ সাহেবও বোধহয় করেছিলেন। মনে হয় একটু খোঁজ নিতে হবে। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, আমি জানি না আমাদের বিরোধী দলের নেতাও করেছিলেন কি না।

সরকারের চলার পথ বন্ধুর ছিল বলে উল্লেখ করে টানা চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চলার পথ খুব সহজ ছিল না, খুব বন্ধুর ছিল। বারবার এখানে বাধা এসেছে। একটা হচ্ছে দেশের ভেতরে অভ্যন্তরীণভাবে। আবার আন্তর্জাতিকভাবে নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হয়েছে। সকল বাধা মোকাবিলা করেই আমাদের দেশ এগিয়ে চলেছে, চলবে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। আজকের বাংলাদেশ হাত পেতে ভিক্ষা চাওয়া বাংলাদেশ নয়। পর মুখাপেক্ষী না। আমরা ঋণ নেই, তা পরিশোধ করি। উন্নয়নের পরিকল্পনা নেই, তা বাস্তবায়ন করি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করি। যারা উন্নয়নগুলো দেখেন না, তাদের অনুরোধ গ্রামে যান সেখানে যে পরিবর্তন হয়েছে বা জেনারেল এরশাদের সময় উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা ছিল, এখন সেখানে মঙ্গা নেই। সেটাও দেখেন।  
বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, টেন্ডারের শুভঙ্করের ফাঁকির কথা উনি বলেছেন। টেন্ডার না দিয়ে কাজ দেওয়া। উনি তো মন্ত্রী ছিলেন টেন্ডার না দিয়ে কাজ করে, কাজের মাধ্যমে কিছু উপার্জন করার বিষয় মনে হয় উনি নিজেই রপ্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সুচিন্তিত কৌশল এবং গণমানুষের শক্তিকে যুগপৎ ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ব। এই বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে যাবে।

সব বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল ॥ মেট্রোরেল নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে। এই মেট্রোরেলে দুই লাখ ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। কিছু অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, মানে আঁতেল আর কি। বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করেন যাহারা- তারা বলেছিলেন মেট্রোরেলের কী প্রয়োজন ছিল? ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে মেট্রোরেল না করলেই চলত। এটা তো অপচয়।

তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাস কিনলেই তো যানজটমুক্ত হবে! এই হলো বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি! এখন মেট্রোরেল মানুষের জীবন বিশেষ করে মহিলাদের জন্য সব থেকে নিরাপদে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা এখন কী বলবেন সেটা আমার একটু জানতে ইচ্ছে করে। তাদের সঙ্গে দেখা হলে একটু জিজ্ঞাসা করতে পারতাম।
তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১, লাইন-২, লাইন-৪ ও লাইন-৫ এর কাজ পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করলে ঢাকা শহরে আর যানজট বলে কিছু থাকবে না। মানুষ খুব আরামে চলাচল করতে পারবে। তাদের জীবনমান উন্নত হবে। আমরা সবগুলো বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল চালু করে দেব সেই পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, এটা হলে সাগরপাড় দিয়ে গাড়িতে করে একেবারে কক্সবাজার পৌঁছে যাবে। সেই ব্যবস্থা করার ইচ্ছা আমাদের আছে। এতে করে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত শিল্প বাণিজ্য ও পর্যটন বিকশিত হবে।
বাংলাদেশ হবে যোগাযোগের হাব ॥ যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের হাব হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে সরকারপ্রধান আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সরকার সারাদেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছে বলেই অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। আমার লক্ষ্য কেবল বাংলাদেশ নয়, আমরা এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হব। প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে।
বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ তো দিতে হবে ॥ বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনার জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা। যে বিশেষ আইন করেছি সেটা নিয়েও সমালোচনা শুনছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই বিশেষ আইন যদি না করতাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ না করলে আজকে বিদ্যুৎটা আসত কোথা থেকে? আমরা ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ যাতে পরিবেশবান্ধব হয় আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। নেপাল ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বনানী, বারিধারা, এসব বড়লোকদের এলাকায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে এখন এয়ারকন্ডিশন, গাড়ি, লিফট ইত্যাদি আরাম-আয়েশটা এটা যে আসমান থেকে পড়েনি-এটা (বিদ্যুৎ) আমাদের করা, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তত লোডশেডিং বিত্তশালীদের দিতে হবে। এই ব্যবস্থাটা আমরা করব।
জ্বালানি তেল মজুত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে একশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বর্তমানে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, এই ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এ খাতে আমরা কেন ভর্তুকি দেব? বেশি বেশি এয়ার কন্ডিশন, ফ্রিজ, লিফট চলার জন্য দেব? তা তো দেব না। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যেটা করার দরকার সেটা করব। যে যত বেশি ব্যবহার করবে তাকে উৎপাদনের খরচটা অবশ্যই দিতে হবে। তবে আমরা হঠাৎ করে এটা করছি না। সহনশীল করে ধীরে ধীরে এটা করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবস্থা আমরা করছি। আমরা এলএনজিতে ভর্তুকি দেই। ভবিষ্যতে সেই ভর্তুকি দেওয়া হবে না।
সামাজিক সুরক্ষার ব্যাপ্তি সুগভীর করতে সর্বজনীন পেনশন ॥ সামাজিক সুরক্ষার ব্যাপ্তি আরও সুগভীর করতে সরকারিভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, একটা পর্যায়ে যেন কারও মুখাপেক্ষী না থাকতে হয় তার জন্য এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম নেওয়া হয়েছে। আমরা দেখলাম এই পেনশন স্কিম নিয়ে কেউ আন্দোলন করে। অনেক কথা বলেন। কিন্তু এই সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুফলটা দেশবাসী পাবে। এটার মাধ্যমে জীবনব্যাপী একটি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে পেনশন স্কিমের বিস্তারিত সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রত্যয় স্কিম চালু হয়েছে। এসব সংস্থা ও তার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মকর্তা- কর্মচারীদের এই স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা দেবে এবং সমপরিমাণ প্রতিষ্ঠান দিয়ে স্কিমে জমা হবে। পেনশন আয়কর মুক্ত থাকবে।
২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এর মাধ্যমে শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এখানে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক, সকলেই এটাতে যুক্ত হতে পারেন। যেটা তাদের বয়সকালে সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা আরও উন্নত হোক। আমরা দেশকে পরিকল্পিতভাবে উন্নত করতে চাই। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। সেদিকে আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা জাতীয় পর্যায়ের একাধিক কমিটি গঠন করেছি। হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে তাদের জন্য বিদ্যমান কর অব্যাহতি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ৩০ জুন ২০৩৫ এর মধ্যে বাংলাদেশে নিবন্ধিত সম্পূর্ণ নতুন কোম্পানি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করলে তাদেরকে ১০ বছরের জন্য নির্ধারিত হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যায়নি ॥ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যায়নি বলে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে ওয়াদা দিয়ে থাকি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি তা আমরা পালন করি। বাজেট প্রণয়নের সময় এবার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার এবং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের যে দিকনির্দেশনা তা উঠে এসেছে।
বাজেট নিয়ে এমপিদের আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা সংসদে আলোচনা করে নানান পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া বাইরেও (সংসদের বাইরে) অনেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা যা পরামর্শ দেওয়ার তা দিয়েছেন। আলোচনা-সমালোচনা যারা যারা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন। কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। আবার কিছুক্ষণ আগে বিরোধী দলীয় নেতা বললেন এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য না। প্রবৃদ্ধির হার কমাতে হবে, বার্ষিক উন্নয়নের হার কমাতে হবে। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কি না? চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলতে চাই। চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ইচ্ছা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। সেজন্যই উন্নয়ন বাজেট। দেশের মানুষের যে উন্নয়ন করেছি সেই গতিধারাটা যাতে অব্যাহত থাকে, সে লক্ষ্য নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করেছি, বাজেট দিয়েছি। এখানে কমাবার কিছুই নেই।
তিনি বলেন, ঋণের চাহিদা, অর্থের জোগান, ব্যাংক আর গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদ নির্ধারণ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। মুদ্রানীতি- এসব পদক্ষেপকে ফলপ্রসূ করতে রাজস্ব নীতিতে সংকোচন নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। যার প্রতিফলন এ বাজেটে রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি।

পদক্ষেপের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছর নাগাদ মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। তাই উৎপাদন বাড়াতে হবে, সরবরাহ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি তার ফল বাজারে দ্রুত পড়বে। আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী হ্রাস করতে পারব। বেকারত্বের হার তিনভাগ দাবি করে তিনি বলেন, সেটাও যদি সবাই চায় কাজ করতে পারে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগী করে প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দিয়েছি। 
কিছু আঁতেল সবকিছুতেই সমালোচনা করেন ॥ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সমালোচকদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরতে চাই। কারণ এতক্ষণ শুনলাম কিছুই করি নাই। একটা গোষ্ঠী আছেই কিছু ভালো লাগে না। তাদের জানার জন্য বলার দরকার।
তিনি বলেন, দেশে কিছু আঁতেল আছেন তারা সবকিছুতেই সমালোচনা করেন।

ঋণখেলাপি নিয়ে অনেক কথা, মন্দ ঋণ নিয়ে অনেক কথা। ২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণ ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণের হার হচ্ছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এটা কিন্তু হ্রাস পেয়েছে। সেটাকে বলার সময় উল্টো টাকার অঙ্ক বলে কিন্তু শতাংশ বলা হয় না। সেখানে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এইভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। যারা এটা করে তা খুবই দুঃখজনক।
সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করেছি ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় শান্তিতে বিশ্বাস করি। সংঘাতে জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। না। প্রতিবেশিসহ সকল দেশের সঙ্গে অত্যন্ত সফলভাবে এ নীতি মেনে চলছি। হয়তো অনেকের কাছে বিস্ময়। সেই নীতি নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করেছি। যুদ্ধ, সংঘাতের জন্য নয়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হিসাবে। যে কোন ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে না থাকি, সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত, সমৃদ্ধ করেছি, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন গড়ে তুলছি।

×