ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১

নতুন কারিকুলাম নিয়ে চাপে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ২৮ জুন ২০২৪

নতুন কারিকুলাম নিয়ে  চাপে নবম শ্রেণির  শিক্ষার্থীরা

.

ষান্মাসিক মূল্যায়ন শুরু জুলাই

আসিফ হাসান কাজল অভিজ্ঞতা ছাড়াই চলতি বছর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু করেছে। এই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের বিভাগ বিভাজনেও যেতে হয়নি। নতুন ধারার এই শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজেদের মানিয়ে নিতে খানিকটা হোঁচট খাচ্ছে তারা। আগামী জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের ষান্মাসিক মূল্যায়ন শুরু হবে। কেমন প্রশ্ন হবে, কিভাবে উত্তর লিখবে তা শিক্ষক শিক্ষার্থী কারও বোধগম্য নয়। নতুন কারিকুলামে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যে চাপে আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা জানান, চলতি বছর নতুন কারিকুলামের ক্লাস শুরু হয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেরিতে বই পেয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকার কারণে দীর্ঘ সময় ক্লাস বন্ধ ছিল মাধ্যমিক স্কুল। বছরের শুরুতে মাউশি বা এনসিটিবি বইয়ের কতটুকু পড়বে শিক্ষার্থীরা, এমন সিলেবাস দেয়নি। একদিকে দেরিতে বই পাওয়া, অন্যদিকে এসএসসির কারণে কিছু বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ। সিলেবাস না থাকার কারণে কতটুকু পড়াতে হবে সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সিলেবাস শেষ করতে পারেনি।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক মোহাম্মদ সালমি বলেন, গত বছর যারা ৬ষ্ঠ সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম শুরু করেছে, বিষয়টি তাদের কাছে সহজ হয়ে উঠেছে। কিন্তু নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। কত ভাগ লিখিত, কতটা হাতের কাজ, সে বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা সব স্তরের শিক্ষকরা জানেন না। শিক্ষকরা এখনো জানেন না তারা কিভাবে প্রশ্ন তৈরি করবেন! ফলে সমস্যা যে তৈরি হয়েছে সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

মতিঝিল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকোনুজ্জামান শেখ জানান, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানে এই শিক্ষাক্রমে ফেল করার সুযোগ নেই। আবার যেভাবে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিতে হতো, সেই পরীক্ষা ভীতি কেটে গেছে। ফলে মানসিক চাপও কমেছে। ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর সার্বিক অবস্থা এমন। বাকি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী দলগত হাতের কাজ নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এটি শুধুই আমাদের স্কুলের চিত্র বলে তিনি যোগ করেন।

ঢাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মালিবাগ শাখার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজী তাহমিন ইসলাম তামিম। নতুন শিক্ষাক্রমের অভিজ্ঞতার বিষয়ে সে বলে, ‘আমাদের দল তৈরি করে ক্লাস করতে হয়। এটা একদিকে ভালো, আরেকদিকে খারাপ। আমি যেটা পারলাম না, আরেকজন সেটা পারে। এতে একজনের ওপর চাপ পড়ে না। সবাই মিলে কাজটা করা যায়। আবার ক্লাসে বই অতটা পড়ায় না। গ্রুপ ওয়ার্ক দেয় বেশি। বইয়ের খুঁটিনাটি বিষয় কম পড়ায়, ছক করায় বেশি।

তবে দলগত কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট ধরনের বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার মতো দেশের চার-পাঁচ লাখ শিক্ষকের মধ্যে কম শিক্ষক রয়েছেন। অনেকের যোগ্যতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। ছাড়াও সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণও শেষ হয়নি। ফলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দেখা যাবে, শিক্ষার্থীরা এই নতুন শিক্ষাক্রম ভালোভাবে শিখছে। কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে এমন মূল্যায়ন সঠিকভাবে হবে কী না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

বছর যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগের মতো জিপিএ পাবে না। এমনকি নম্বরও থাকছে না। এখন থেকে নবম আর দশম শ্রেণির জন্য থাকছে আলাদা বই। একসঙ্গে দুই বছরের পরীক্ষাও আর থাকছে না। বরং শ্রেণিকক্ষেই হবে মূল্যায়নের বেশিরভাগ। শুধুমাত্র দশম শ্রেণির বই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে এসএসসি সমমান পাস করবে এসব শিক্ষার্থী। অনেকের মতে, বিজ্ঞান, ব্যবসা কলা বিভাগ না থাকায় বিজ্ঞান চর্চা কমে আসবে বলেও সংশয় রয়েছে।

জানা যায়, এনসিটিবি থেকে সকালে মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে। সেটির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা ষান্মাসিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। সরবরাহ করা মূল্যায়ন প্রশ্নপত্র ফটোকপি করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। সেই হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে  সাদা রঙিন কাগজ, গাম, আঠা, সাইন পেন ১৬ পৃষ্ঠার খাতা সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মশিউজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, শিক্ষার্থীরা যেভাবে পড়ছে, যে ধরনের অ্যাকটিভিটি করছে সেগুলো বিবেচনা নিয়েই মূল্যায়ন করা হবে। আগের মতো এমসিকিউ একটি অংশ, লিখিত একটি অংশ এভাবে মূল্যায়ন করা হবে না।

বাংলাদেশে সাধারণত ফেব্রুয়ারির শুরুতে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর ফলাফল পেতে অপেক্ষা করতে হয় দুই মাস। তবে নতুন শিক্ষাক্রমে বিভাগ বিভাজন না থাকায় পরীক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসবে। এসএসসি পরীক্ষা চালাতে আগে ৩৩ কর্মদিবস লাগত। এখন লাগবে ১০ কর্মদিবস। অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ডিসেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা হবে। রেজাল্ট হতে লাগবে ১৫ দিন। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর একাদশে সাধারণত জুলাইয়ে ক্লাস শুরু হয়। তবে ২০২৫ সালে যারা দশম শ্রেণিতে পড়বে, তারা পরের বছরের শুরুতেই উচ্চ মাধ্যমিকে চলে যাবে। এতে একাদশ দ্বাদশ মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা ২২ মাস সময় পাবে, এখন পাচ্ছে ১৮ মাস। এই চার মাস বেশি পড়ার কারণে তাদের শেখার সুযোগ বাড়বে।

গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রথম থেকে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে অধ্যয়ন করছে। বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।

ষান্মাসিক মূল্যায়নের সূচিতে আবার পরিবর্তন দ্বিতীয় ধাপের পর আবারও ষান্মাসিক মূল্যায়ন সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। সোমবার এনসিটিবি সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা ১৩ জুলাইয়ে হওয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৩ জুলাইয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান, সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি, অষ্টম শ্রেণির শিল্প সংস্কৃতি এবং নবম শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়গুলোর ষাণ¥াসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের কার্যক্রম আগস্ট (শনিবার) গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

×