ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

একদিন চাঁদে যাবে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৮ জুন ২০২৪

একদিন চাঁদে যাবে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ প্রদান

বাংলাদেশ একদিন চাঁদে যাবে এমন আশাবাদ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মকে সেভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের একদিন চাঁদে যেতে হবে। আমাদের চাঁদকে জয় করতে হবে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের শৈশব থেকে  সেভাবেই বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পূুনর্ব্যক্ত করে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪’ উদ্বোধনকালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমি এটাই চাই যে আমাদের বাংলাদেশ  ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট হিসেবে গড়ে উঠবে। যেখানে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং সোসাইটিও স্মার্ট হবে। আমাদের আজকের শিশুরা আগামীদিনের স্মার্ট বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পেতে পারে সেজন্য ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। 
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মধ্যে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩’ ও প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী  ১২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩’ প্রদান করেন। শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ১৮টি ক্যাটাগরিতে ১২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ১৫ ব্যক্তি এবং তিনটি সংস্থা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর একটি প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষায়, সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলা সবদিক থেকেই উপযুক্ত নাগরিক হিসেবেই তাদের গড়ে তুলতে চাই। আর তা করার জন্য যা যা করণীয় অবশ্যই আমরা তা করব। অর্থাৎ এই যে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি, এই শিশুকাল থেকেই ধীরে ধীরে তারা সেভাবে গড়ে উঠবে। দেশপ্রমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশের উন্নয়নে তাদের চিন্তা-ভাবনা, তারা আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়েই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটাই আমি চাই। 
যারা আজকের শিশু তারাই আগামীর নাগরিক ও এদেশের কর্ণধার হবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এই শিশুদের মধ্যদিয়েই কেউ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবে, বড় বড় সংস্থায় চাকরি করবে, বৈজ্ঞানিক হবে এমনকি এক সময় তো আমাদের চাঁদেও যেতে হবে। চাঁদও জয় করতে হবে। সেই বিজ্ঞান সম্পন্নজ্ঞান যেন আমাদের শিশুরা এখন থেকেই পায় সেজন্য ব্যবস্থা করতে হবে।

ইতোমধ্যে গবেষণা ও শিক্ষার জন্য আমি বিশ^বিদ্যালয় করে দিয়েছি। অ্যারোস্পেস অ্যান্ড এভিয়েশন বিশ^বিদ্যালয়ও (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়) করেছি, অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার করে দিয়েছি।  কাজেই এখন থেকেই আমাদের শিশুদের সেইভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
তাঁর সরকারের পদক্ষেপের ফলে সাক্ষরতার হার ৭৮ শতাংশে উন্নীতকরণ, উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষদের সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা সুষম জনকল্যাণমুখী সার্বজনীন মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে চাই। যেখানে শুধু কেতাবী পড়া পড়ে নয়, এই ছোট্ট শিশুদের ভেতরে যে মেধা মনন সেগুলোও তো আমাদের বের করে আনতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। তাদের ভেতরে যে একটা কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে সেটাই যাতে বিকশিত হতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করা দরকার।
তিনি বলেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা শিক্ষা কারিকুলাম আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানের পথে নিয়ে আসছি। অনেক স্কুলে হয়েছে কিন্তু আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি স্কুলেই আমরা কম্পিউটার ল্যাব করে দেব এবং যেটা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকেই শুরু হবে। আর আমরা প্রি প্রাইমারিও চালু করেছি যেটা এখন দুই বছরের জন্য করতে চাচ্ছি। যেখানে পড়াশোনা নয়, বাচ্চারা যাবে একসঙ্গে বসবে, সবার সঙ্গে খেলাধুলা করবে। ওই খেলাধুলার ভেতর দিয়েই তাদের ভেতরের যে সুপ্ত মেধাটা রয়েছে সেটাকে যেভাবে বিকশিত করা যায় সেই ব্যবস্থাটা আমাদের নিতে হবে।
শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি এবং তাঁর সরকারের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই ২০১০ সালে শুরু করে এ পর্যন্ত ৪শ’ ৬৪ কোটি ৭৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে এবং মায়েদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, যেজন্য সারাদেশে ২০ লাখ মা’কে মোবাইল ফোনও কিনে দেওয়া হয়েছিল। 
ঝরে পড়া রোধে স্কুলগুলোতে কমিউনিটি স্কুল ফিডিং কর্মসূচিও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে তাঁর সরকার। শিশুশ্রম বন্ধ ও চার হাজার স্যাটেলাইট বিদ্যালয় চালুসহ শিক্ষার সম্প্রসারণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে এর মূল শক্তিটাই হবে এর শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। শিক্ষাই একটি দেদশকে দারিদ্র্য মুক্তির সব সুযোগ এনে দেবে।
তিনি বলেন, সবার জন্য আমাদের শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে দিতে হবে। নারী শিক্ষার প্রসার ও প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় নিয়ে আসায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণাবলি সৃষ্টিরও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথা আজেকের যুগটা হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ। কম্পিউটার প্রশিক্ষণে আমরা যেমন ল্যাব করে দিচ্ছি তেমনি ইনকিউবেশন সেন্টারও করে দিচ্ছি। কেননা, সেভাবেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন একটি জনগোষ্ঠী আমরা গড়ে তুলতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, শুধু বই পড়ে নয়, স্বচক্ষে দেখে শিক্ষা নেওয়া। এই ছোট্টবেলা থেকে যতবেশি তারা শিখতে পারবে ততই ভালো। আর ছোটদের খুব বেশি শিখতে হয় না তারা সহজেই পেরে যায়, এটা হলো বাস্তব কথা। আমি বলব সকলেই এইভাবে এক হয়ে কাজ করলে এই দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। 
টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন এই বাংলাদেশ আমাদের সোনার দেশ তাই তিনি সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। আর আজকের এই শিশুরাই সেই সোনার বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল। কোভিড-১৯ এর সময় যখন লেখাপড়ার জন্য বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না তখন অনলাইন এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিল।

আজ প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলে সাবমেরিন কেবল এবং সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সরকারের বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ায় ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ এবং মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণে সারাদেশে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি চালু হয়ে গেছে। সে কারণে প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে বিশ^কে জানার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

×