হাইকোর্ট
পুনরায় আফতাবনগরে পশুর হাট বসাতে ইজারার জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ৬ জুন আফতাবনগর পশুর হাটের জন্য দরপত্র দাখিলের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ সরাসরি অমান্য এবং আদালত অবমাননার শামিল বলছেন আইনজীবীরা।
এদিকে, এরইমধ্যে পুনরায় ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী এস এম শামীম হোসাইন। এর আগে সোমবার (৩ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজধানীর আফতাবনগরে পশুর হাট বসাতে সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আসন্ন ঈদে আফতাবনগরে পশুর হাট বসানো যাবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু ও অ্যাডভোকেট এস এম শামীম হোসাইন। হাটের ইজারাদার নুরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
পরে আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আফতাবনগর পরিকল্পিত আবাসিক নগরী। এ বিবেচনায় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন।
গত ৮ মে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজধানীর আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোর সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় হওয়ায় আদালত এ আদেশ দেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন হাটের ইজারাদার নুরুল ইসলাম।
এর আগে আফতাবনগরে গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম কামাল।
গেল ৪ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ঈদুল আজহা ২০২৪ উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুর হাট বসানোর জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়।
রিটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) ২০০৯ আইনের ধারা ৩ (২) ও ১ম তফসিল অনুযায়ী আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) বাড্ডা থানার ৩৭ নং ওয়ার্ড অধীন, যা ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অন্তর্ভুক্ত।
রাজধানীর আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটি সম্পূর্ণ এলাকা আবাসিক এলাকা। তাই এখানকার বাসিন্দারা কোরবানি পশুর হাট চান না। একারণে আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রকে আফতাবনগরে হাট বসানোর সিদ্ধান্ত না দিতে অনুরোধ করেছে। সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আলগমীর হোসেন ঢালী এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে তারা এই অনুরোধ জানান।
চিঠিতে বলা হয়- আফতাবনগর এলাকাটি আবাসিকের পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতি বছর এখানে কোরবানি পশুর হাট বসানোয় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়া গরুর হাটের জন্য অপরিকল্পিত পানি সংযোগ দেওয়া হয়। পরে সেসব সংযোগ সঠিকভাবে ঠিক করা হয় না। এজন্য ওই পানির সংযোগ দিয়ে পানির লাইনে ময়লা ঢুকে যায়। ফলে এলাকাবাসীকে সারা বছর ময়লা পানি খেতে হয়। ময়লা-আবর্জনা ও যানজটে এলাকাবাসীকে মারাত্মক ধকল সইতে হয়। এজন্য এ বছর হাট না দেওয়ার বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন দুই নগরপিতার কাছে।
প্রতি বছর হাট না দেওয়ার জন্য দুই সিটিকে অনুরোধ করেন সোসাইটির নেতারা। কিন্তু তারা তা শোনেন না। কখনো এক সিটি থেকে হাট বসানো হয়। আবার কখনো দুই সিটি থেকে বসানো হয়। এবার দুই সিটি থেকেই হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্তও তারা মানছেন না। আর একারণেই কোরবানি পশুর হাটের ভোগান্তি থেকে আফতাবনগরের বাসিন্দাদের মুক্তিও মিলছে না।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইছার মোহাম্মদ ফারাবি বলেন, আফতাবনগরে ডিএসসিসি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। সেখান থেকে সরে আসার কোনো চিন্তা কর্তৃপক্ষের নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম বলেন, নগরবাসীকে সেবা দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন কোরবানি হাট বসিয়ে থাকে। রাজস্ব আয় এখানে মুখ্য বিষয় নয়। নগরবাসীর সুবিধার জন্যই এটা করা হয়ে থাকে। আর এই হাটগুলো তিন থেকে চার দিনের জন্য হয়ে থাকে। এই সামান্য দুর্ভোগ নিজেদের স্বার্থে নগরবাসীকে সহ্য করতে হবে।
টুম্পা