সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ
বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২০ মে) রাতে ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ ঘটনার পর দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান সাবেক এ সেনাপ্রধান।
এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে দুই কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার কোনো ভিত্তি আছে কি না। সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি যে শাস্তি পেতে হবে। তারা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছে তার কোনো প্রমাণ থাকলে আমাকে দিক।
পদ-পদবির অপব্যবহার করে নিজের ভাইকে সহযোগিতা করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জেনারেল (অব.) আজিজ বলেন, আমার সেই ভাই আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগেই বিদেশে গেছে। সে নিশ্চয়ই বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে গেছে। তার চলে যাওয়া বা দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেয়ার ব্যাপারে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করেছি-এই অভিযোগটা আমি মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিতে পারি না, এটা সঠিক নয়।
এরপর ভাইদেরকে সামরিক কন্ট্রাক্ট দিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি চার বছর বিজিবি থাকাকালীন এবং তিন বছর সেনাপ্রধান থাকাকালীন কেউ যদি একটা প্রমাণ দিতে পারে যে, আমি আমার কোনো ভাইকে বা কোনো আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি, তাহলে আমি যেকোনো কনসেকুয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত আছি।
সাক্ষাৎকারে সাবেক এ সেনাপ্রধান আরও বলেন, আমার কোনো ভাইয়ের সেনাবাহিনী বা বিজিবিতে ঠিকাদারি করার জন্য কোনো ধরনের লাইসেন্স আছে কিনা আপনারা খুঁজে বের করুন। আমি যে আমার ভাইদের কন্ট্রাক্ট দিয়েছি, তার প্রমাণ তারা (যুক্তরাষ্ট্র) দিক। আমি মেনে নেব। তথ্য প্রমাণ ছাড়া তো এটা প্রমাণিত না। আমি জোড় দিয়ে বলছি, আমি তাদের কোনো কন্ট্রাক্ট দিইনি।
এর আগে সোমবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে সাবেক জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে, পূর্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এর ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, আজিজ আহমেদের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি, ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এবি